বিশেষ সংবাদ

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বিতর্কিত প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ফারুককে অবশেষে বদলী

bcc1
print news

* জাকির হোসেন বাচ্চু হচ্ছেন নতুন প্রধান নির্বাহী

মামুনুর রশীদ নোমানী : বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বিতর্কিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদকে পাট অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পদে জনস্বার্থে বদলী করা হয়েছে। ৬ আগষ্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের প্রেষন শাখা -১ এর উপ সচিব আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বদলীর আদেশ জারি করেন। অপর দিকে অন্য এক প্রজ্ঞাপনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপ সচিব মোঃ জাকির হোসেন বাচ্চুকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগদানের আদেশ প্রদান করা হয়। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে উপসচিব সৈয়দ ফারুক হোসেন প্রেষণে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগদান করেই অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন। একের পর এক নিয়ম বহির্ভুত ভাবে আদেশ জারী করেন। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী হয়েই তিনি থাকতে শুরু করেন বরিশাল ক্লাবে। খেতেন ক্লাবের রেষ্টুরেন্টে। সময় কাটাতেন লঞ্চঘাটস্থ একটি বিলাসবহুল আবাসিক হোটেলে।একাধিকবার হয়েছেন পত্র-পত্রিকার শিরোনাম। বরিশাল সিটি করপোরেশন বাড়ি ভাড়া দিলেও তিনি ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে থেকেছেন বরিশাল ক্লাবের বিশ্রামাগারের বিলাসবহুল কক্ষে। ৫০৩ নম্বর কক্ষটির প্রতি রাতের ভাড়া ৪ হাজার ৬০০ টাকা। ২৭ মাসে ভাড়া বাবদ তাঁর কাছে বকেয়া পড়েছে ৩৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এই ভাড়া কে দেবে– জবাব খুঁজে পাচ্ছে না বরিশাল ক্লাব। বরিশাল ক্লাব সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাদিক আবদুল্লাহর মৌখিক নির্দেশে সিটি করপোরেশেনের সিইও ক্লাবে থেকেছেন। এ-সংক্রান্ত কোনো লিখিত নির্দেশনা নেই। ক্লাবে প্রেসিডেন্টের একটি কক্ষ রয়েছে। তবে তাতে সভাপতির অতিথি থাকলে ভাড়া দিতে হবে বলে জানিয়েছেন ক্লবটির বৈধ সভাপতি কাজী মফিদুল ইসলাম। সৈয়দ ফারুক হোসেন নামে শুধু ভাড়া বাবদ বরিশাল ক্লাব পাওনা হয়েছে ৩৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা। খাওয়া-দাওয়া করেন বরিশাল ক্লাবে। দৈনিক তিন বেলায় খাওয়া খরচ গড়ে দেড় হাজার টাকা। তাতে বকেয়া পড়েছে লাখ পাঁচেক টাকা। ক্লাব-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সৈয়দ ফারুক তাঁর অতিথিদেরও আপ্যায়ন করেছেন ক্যাফেটেরিয়ায়। সেই বিলও বকেয়া পড়েছে। বিভাগীয় শহরে সরকারি কর্মকর্তারা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া হিসেবে পান সরকারের কাছ থেকে। সরকারি কোয়ার্টারে বাস করলে বাড়ি ভাড়া পান না। সৈয়দ ফারুক হোসেন প্রশাসন ক্যাডারের ২২ ব্যাচের কর্মকর্তা। মাসিক মূল বেতন তার কমবেশি ৬০ হাজার টাকা। সৈয়দ ফারুক হোসেন প্রেষণে থাকায় বেতন, বাড়ি ভাড়াসহ অন্য প্রাপ্য সুবিধা বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে পাচ্ছেন। বিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিইও ফারুক হোসেন কোয়ার্টারে না থাকায় বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন বিসিসি থেকে। তিনি বরিশাল ক্লাবে বাস করেন। বরিশাল ক্লাবের সভাপতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি মামলা দায়ের করেছেন ক্লাবের সদস্য মফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন,ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যকরী কমিটির সদস্য হতে সদস্য পদের ১০ বছর পূর্ণ হতে হবে। সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট ক্লাবের সদস্য হন। তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ২০১৯ সালের ৮ মার্চ জোর-জবরদস্তি করে সাদিক আব্দুল্লাহ ক্লাবের সভাপতি ঘোষণা করেন। এতে ক্লাবের গঠনতন্ত্রের আর্টিকেল ৩২(খ) ধারা লঙ্ঘন করেছেন সাদিক। এ ছাড়া সভাপতি হয়ে সাদিক আবদুল্লাহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও আরেকজন কর্মকর্তাকে ক্লাবের গেস্টরুমে স্থায়ীভাবে থাকতে দিয়েছেন এবং তারা ক্যাফেটরিয়ার খাবার খাচ্ছেন। এতে তাদের কাছে কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে। এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞাদেশ অমান্য করে শিশু পার্ক নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বরিশাল সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করেন বরিশাল নগরীর কাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

 

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সিটি করপোরেশনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন  সৈয়দ ফারুক আহমেদ। এর আগে তিনি সিলেট জোনাল সেটেলমেণ্ট অফিসে উপ-সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। ২২ তম বিসিএস ক্যাডার তিনি। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার কাশিয়ানী গ্রামের মীর শওকত আলীর একমাত্র সন্তান।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *