ভাসমান পেয়ারার রাজ্যে ভীমরুলী


মো: ইমরান হোসেন:
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে সড়কপথে অতি সল্প সময়ে পেয়ারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যায়। ভাসমান পেয়ারা বাজার বিখ্যাত থাকলে ও পেয়ারা রাজ্যের সবচেয়ে বড় মোকাম ভীমরুলীতে। সেখানে প্রবেশের পথে রাস্তার পাশের খালেই নৌকায় পেয়ারার পসরা নিয়ে পাইকারদের কাছে তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। প্রতি মণ পেয়ারার দাম আকার ও রং অনুজাই ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন তারা।
ভাসমান হাট হিসেবে বিখ্যাত হলেও ভীমরুলীর বড় মোকাম ডিঙি নৌকায় করে পেয়ারা নিয়ে আগের চেয়ে আনাগোনা কম। ঝালকাঠি শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরত্বের সড়কের পাশে ১১টিরও বেশি মোকামে পেয়ারা কেনাবেচা হচ্ছে। পেয়ারার মূল্য প্রতি বছরের চেয়ে ভালো পেলেও ফলন কম হওয়ায় কৃষকের আনন্দ নিরানন্দই থেকে যাচ্ছে।
মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টিতে ফুল ঝরে যাওয়ায় ফলন বিপর্যয়ে এ বছর পেয়ারার সমারোহ কম। পেয়ারা উৎপাদনে বিখ্যাত ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বানারিপাড়ার ৫৫টি গ্রাম। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এ অঞ্চলের নদী-খালের পাড়ে সজ্জন পদ্ধতিতে সৃজিত পেয়ারা গাছে ঝোলে সবুজ ফল।জানা যায়, ঝালকাঠি, বানারিপাড়া ও স্বরূপকাঠি উপজেলার ৫৩ গ্রামে ফলন হয় পেয়ারার। এলাকার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও জীবিকার অবলম্বন। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ। অনাবৃষ্টিতে সেই ফুল অনেকটাই ঝরে গেছে। আষাঢ়ে পেয়ারা পাকার মৌসুম হলেও শ্রাবণের শুরুতে পেয়ারা পরিপক্ক হওয়ায় এখন জমে উঠেছে পেয়ারার হাট। ভিমরুলী, শতদলকাঠী, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, জগদীশপুর এসব এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বরিশাল বিভাগের কম-বেশি সব স্থানে পেয়ারার চাষ হলেও বরিশাল জেলার বানারিপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বরিশাল জেলার বানারিপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭, ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার মধ্যে ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদলকাঠী, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠি, জগদীশপুর, মীরকাঠি, শাখা গাছির, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর গ্রামে বড় অংশজুড়ে বাণিজ্যিক ভাবে যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে।স্থানীয় চাষিরা জানান, আনুমানিক ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছিন্ন আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হয়েছে পেয়ারার বাণিজ্যিক আবাদ। এ আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। ২০২২ সালে অন্তত ১৯৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক পেয়ারার আবাদ হয়েছে। এ সময় ফলন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু এ বছর ফলন কম হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদন হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে হতাশা প্রকাশ
করেন পেয়ারা চাষিরা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভবেন হালদার বলেন, ‘এ বছর পেয়ারা গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করা হলেও বৃষ্টি না থাকায় ফুল বেশিরভাগই ঝরে গেছে। গাছে যে পরিমাণ ফল হয়েছে, তাতে দাম ভালো পাচ্ছি কিন্তু খরচের তুলনায় খুবই কম।’
ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার সদর উপজেলায় ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। পেয়ারা মৌসুমে এলাকার মানুষের কাছে পেয়ারা অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য
ও জীবিকার অবলম্বন।এবার ফলন কম হলেও চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন।