যানজটের নগরী বরিশাল সিটিতে নামছে আরও অর্ধ সহস্রাধিক নতুন সিএনজি


যানজটে অতিষ্ঠ বরিশাল সিটিতে আরও অর্ধ সহস্রাধিক নতুন সিএনজি নামানোর অনুমোদন দিয়েছে বিআরটিএ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে থ্রি-হুইলার মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন। ব্যাটারিচালিত অবৈধ হলুদ অটো বন্ধ না করে নতুন করে সিএনজি রাস্তায় নামালে যানজট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সড়কে চলমান বৈধ মাহিন্দ্রা, নীল গ্যাসের গাড়ির মালিক- শ্রমিকরা পথে বসবে। এমন দাবি করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে মাহিন্দ্রা-নীল গ্যাস-সিএনজি মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন। তবে বিআরটিএ’র দাবি, বৈধ গাড়ি সড়কে যত নামবে অবৈধ গাড়ি তত বন্ধ হবে। আর নতুন গাড়ি রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্ত তাদের একার নয়, বিআরটিএ গঠিত একটি কমিটি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গেছে, বরিশালে বিআরটিএ লাইসেন্সধারী সিএনজি-মাহিন্দ্রা-নীল গ্যাসের গাড়ির সংখ্যা দুই হাজারের কম। তবে পুরো শহরজুড়ে ২০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অবৈধ থ্রি হুইলার নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন ৩ হাজার হলুদ অটোর লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে নগরীতে এখনো বিপুল সংখ্যক অবৈধ ব্যাটারিচালিত হলুদ অটো চলাচল করছে।
একই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ১০টি নতুন হলুদ অটো রাস্তায় নামছে। মাসে দুইশ’। সড়কগুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজট।
অপরদিকে বৈধ থ্রি হুইলারগুলো হলুদ অটোর দৌরাত্ম্যে টিকতে পারছে না। ঠিক এমন অবস্থায় সড়কে আরও ৫৭১টি সিএনজি নামানোর সিদ্ধান্তে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে থ্রি-হুইলার মালিক-শ্রমিক সমিতি। কেন আকস্মিক ৫৭১টি সিএনজি রাস্তায় নামানো হচ্ছে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় বিআরটিএ’র পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মো. জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, নগরীতে প্রতিদিনই অবৈধ থ্রি হুইলারের সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্যই বৈধ থ্রি হুইলার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈধ যান নামানো হলে অবৈধ যান শনাক্তে যেমন সুবিধা, তেমনি নতুন যান নগরবাসীর সেবাদানে সহায়ক হবে। ৫৩১টি সিএনজি নামানোর জন্য একটি প্রস্তাব নিয়ে গত চার বছর যাবৎ আলোচনা চলছে। বিআরটিএ গঠিত একটি কমিটি রয়েছে।
সে কমিটিতে পুলিশ কমিশনারসহ বিসিসি প্রতিনিধি, থ্রি হুইলার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দও রয়েছেন। তেমনি রয়েছেন সমাজসেবকও। তাদের নিয়ে এতদিন বৈঠকেও কোনো সুরাহা হয়নি। দীর্ঘ চার বছর পর সম্প্রতি প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়। ৮টি গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে নতুন গাড়ি বিক্রির অনুমোদনও দেয়া হয়। এদিকে গত শনিবার থ্রি হুইলার মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের একটি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় সভাপতিত্ব করেন ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব। প্রধান অতিথি ছিলেন ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ হোসেন। সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান দুলাল জানান, বিআরটিএ দেড় সহস্রাধিক থ্রি হুইলারের লাইসেন্স দিয়েছে। কিন্তু এরপর এগুলো কীভাবে চলছে, এর মালিকদের সুবিধা-অসুবিধা কোনো কিছুর সংবাদ নেয়নি। প্রতিদিনই অবৈধ হলুদ অটো, মোটর রিকশার সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে।
এগুলো বন্ধেরও কোনো কার্যক্রম বিআরটিএ’র নেই। এদের কারণে বৈধ থ্রি হুইলার টিকতে পারছে না। এদের পার্কিংয়ের জায়গাও নেই। মাঠ জরিপ না করে ৫ শতাধিক নতুন সিএনজি নামানোর পাঁয়তারা চলছে। এতে বৈধ সিএনজি, মাহিন্দ্রা- নীল গ্যাসের গাড়িগুলোর মালিকরা পথে বসবে। কর্মহীন হবে কয়েক হাজার ড্রাইভার। কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো নতুন যান সড়কে না নামানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে শ্রমিকরা। আগে অবৈধ গাড়ি বন্ধ করতে হবে। তারপর নতুন যান চলবে। নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের আগে তাড়াহুড়ো করে রাস্তায় গাড়ি নামানোয় অসন্তোষ বাড়বে বলে তিনি জানান। সভায় পুলিশ কমিশনার, বিআরটিএকে স্মারকলিপি দেয়ারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।