মায়ের কাছে তরুণ লেখক শুভ’র খোলা চিঠি


প্রিয় মা,
পত্রের শুরুতে আমার সালাম ও ভালোবাসা গ্রহণ করো মা।
আমি জানি, তুমি ভালো নেই!
ডেঙ্গু জ্বর তোমাকে ভালো থাকতে দেয়নি! তুমি হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করে ৬/৭ টা দিন কাটিয়েছো।
অথচ এই দূঃখ সময়ে তোমার পাশে বসে একটু সেবা যত্ন করতে পারিনি।
বলতে পারিনি ‘মা’ তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবে। বলতে পারিনি তোমার ছেলে তোমার পাশে আছে, ভয় পেয়ো না!
কি করব বলো মা? আমি যে চার দেওয়ালের প্রাচীরে আবদ্ধ! আমি চাইলেও হুটহাট যেতে পারছি না ‘মা’।
এই মেডিক্যাল লাইফের আইটেম, কার্ড, টার্ম, প্রফ এক্সামের চাপে আমি বিধ্বস্ত।
শান্তি মতো একটু দম নেওয়ার সময় পাচ্ছি না।
এত এত কষ্ট আমার কাছে কিছুই মনে হয় না, যখন মনে হয় তোমার আর আব্বুর সোনায় মোড়ানো স্বপ্ন পূরণ করতে আমি লড়াই করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
এ লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করে তোমাদের স্বপ্নের পূর্নতা দিব ইন শা আল্লাহ।
জানো ‘মা’, আমি ও ভালো নেই!
তোমার আদরের ছেলেটা আজ ভালো নাই।
হাড় ভাঙা জ্বর আমাকে ভেঙে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে ‘মা’। রাত যত গভীর হচ্ছে জ্বরের ডিগ্রিটাও যেন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে! শুধু জ্বর নয়, নানান সমস্যা আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ‘মা’।
সত্যি আমি ভালো নেই মা। শারীরিক ও মানসিকভাবে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। জানো মা,এই ইট পাথরের ঢাকার শহরে কেউ কারো জন্য না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
তোমার মতো করে কেউ আগলে রাখে না ‘মা’। তোমার শূন্যতা আমাকে ভীষণরকম পীড়া দিচ্ছে ‘মা’। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এখন মনে হচ্ছে, তোমার একটু স্পর্শ আর স্নেহ ফেলেই আমি সুস্থ হয়ে উঠব। তুমি আমার কাছে আল্লাহর রহমত আর জাদুর বাক্স।
তোমার সান্নিধ্যে যেন সব দূঃখ, কষ্ট নিমিষেই হারিয়ে যায় ঐ দূর আকাশে।
অথচ, দেখো মা তুমি জানোই না যে, আজ আমি ভীষণ অসুস্থ!
কি করে জানাবো বলো তোমাকে?
তুমি যে আমার একটু খারাপ সংবাদ শুনলে অস্থির হয়ে যাও,পাগল হয়ে যাও! তোমার এই অস্থিরতা আমাকে ভীষণরকম কষ্ট দেয়। জানো ‘মা’, তোমার মতো কেউ বলে না- “বাবা সুস্থ হয়ে যাবি,চিন্তা করিস না!”
বাসায় থাকা অবস্থায় লাস্ট যেদিন জ্বর আসছিলো, জ্বর কমা পর্যন্ত তুমি এক ফোঁটাও ঘুমাওনি! সারাদিন আমার মাথায় কাছে বসে ছিলে। আর কিছুক্ষণ পর পর এটা -ওটা খাইয়েছিলে। আর এখন মন চাইলে কিছু খেতে পারি না!
এটাই হয়তো বাস্তবতা। আমি আর লিখতে পারছি না, ‘মা’। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!
আমার পুরো শরীর কাঁপতেছে! আমার জন্য দোয়া করো ‘মা’। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি,তোমার দোয়া সবসময় আমার সাথে আছে। আমি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠব। আমি জানি না আমার চোখের জল মিশানো, এলোমেলো শব্দগুচ্ছ গুলো তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা!
তবুও আজ অনেক বেশি বলতে ইচ্ছে হচ্ছে –
অনেক বেশি ভালো থেকো ‘মা’। অনেক ভালোবাসি ‘মা’।
ইতি,
তোমার আদরের ছেলে
হাসান মাহমুদ শুভ
ফিচার লেখক ও শিক্ষার্থীঃ হাসান মাহমুদ শুভ