শিশুর বিকাশে পন্দনীয় ইচ্ছেমতো খেলা


সাইফুল ইসলাম, বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
খেলা শিশুর দৈনন্দিন পছন্দনীয় কাজের মধ্যে অন্যতম কাজ। খেলা হলো প্রারম্ভিক শিশুর শেখার উপায়। শিশুরা যেমন একা ইচ্ছেমতো খেলতে পছন্দ করে তেমনি অন্য শিশুদের সাথে মিলেমিশে ছোট বড় দলে খেলতে ও তাদের ভালো লাগে। বিভিন্ন বিষয়ে শেখা ছাড়া ও শিশুদের আনন্দলাভ ও বিনোদনের জন্য খেলার ভুমিকা অপরিসীম। প্রারম্ভিক শিশুদের বয়স বিবেচনা করে জাতীয় কারিকুলামে প্রাক প্রাথমিক পাঠসূচীতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। শিশুর খেলার প্রতি অভিভাবক সক্রিয় ভুমিকা রাখছে। পরিবারে শিশুর বিনোদনের খেলনা, ভ্রমন জন্য আলাদা বাজেট এবং সময় থাকা প্রয়োজন।
পটভুমি হচ্ছে, প্রারম্ভিক শিশুদের বয়স বিবেচনা করে জাতীয় কারিকুলামে প্রাক প্রাথমিক পাঠ্যসূচীতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার-খেলার টাইপ অব প্লে মানদন্ডের গ্রেড ৩টি স্তর রয়েছে। স্তর-১ বার্ষিক পরিকল্পনা ও শিখনক্রম অনুসারে শিশুর শারীরিক স্থুল সুক্ষ পেশির জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এমন খেলা নির্ধারন করতে হবে। খেলা নির্ধারনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সৃজনশীল কল্পনার খেলা ও ইচ্ছেমত খেলার সমন্বয় থাকে। স্তর-২, বার্ষিক পরিকল্পনা ও শিখন ক্রমানুসারে শিশুর শারীরিক, স্থুল ও সুক্ষপেশীর সঞ্চালনসহ জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এমন খেলা নির্ধারন করতে হবে। খেলা নির্ধারনের সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন সৃজনশীল, কল্পনার খেলা ও ইচ্ছেমত খেলার সমন্বয় থাকে। সকল শিশুর অংশগ্রহন নিশ্চিত করেন। স্তর-৩, বার্ষিক পরিকল্পনা ও শিখনক্রম অনুসারে শিশুর শারীরিক স্থুল ও সুক্ষপেশীর সঞ্চালনসহ জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এমন খেলা নির্ধারন করতে হবে। খেলা নির্ধারনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সৃজনশীল, কল্পনার খেলা ও ইচ্ছেমত খেলার সমন্বয় থাকে। শিক্ষক তার ধারনা থেকে শিশুদের খেলার সহায়তা দেন একই সাথে তিনি সকল শিশুকে অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করেন। ০ থেকে সকল শিশুর বয়স অনুপাতে খেলনা দেওয়া উচিত। খেলনা ব্যবহার সাথে শিশুর বিকাশ লাভ করে। শিশুর শারীরিক মানুষিক, সামাজিক, আবেগিক ও ভাষা বিকাশের সাথে বিনোদন সম্পৃক্ত।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় খেলার এবং শিখন উপকরন বিতরন করা হয়েছে। স্কুল ঘর সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। সূত্র আরো জানান, প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের জন্য ২ ধরনের খেলার ব্যবস্থা রয়েছে (ক) নিদের্শনার খেলা (খ) ইচ্ছেমতো খেলা। প্রাক প্রাথমিক শ্রেনীর শিশুদের ইচ্ছেমতো খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষকের কাজগুলোকে ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কাজগুলো হলো (ক) প্রস্তুতিমূলক কাজ (খ) খেলা চলাকালীন সময়ে কাজ এবং (গ) শিশুদের বিশেষ (খেলোয়ার সুলভ/অস্বাভাবিক) আচনের ক্ষেত্রে কাজ। প্রাক শিশু শিক্ষকের সাথে আলাপচারিতায় জানাগেছে, ইচ্ছেমতো খেলা পরিচালনা নিয়ম প্রাক প্রাথমিক পাঠ্যসূচীতে খেলা একটি দৈনন্দিন কাজ। ইচ্ছেমতো খেলার সময় শিশুরা ৪ টি ভাগে ভাগ হয়ে থাকে। ৪ কর্নারে সাজিয়ে রাখার উপকরন নিয়ে ঘুরে ঘুরে ৪ টি কর্নারে খেলবে। শিক্ষক শিশুদেরকে শুধু ৪ টি কর্নারে নাম বলবেন। শিশুরা তাদের পছন্দমতো কর্নারে গিয়ে সেখানে রাখা উপকরন নিয়ে তাদের ইচ্ছেমতো খেলবে। তবে কেউ ইচ্ছে করলে শ্রেনীকক্ষের ভিতরে যে কোন জায়গায় খেলতে পারবে।
গর্ভ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত সময়কাল হচ্ছে প্রারম্ভিক শৈশবকাল। এ সময় একটি শিশুর পরবর্তী জীবনের ভিত রচিত হয়। খাদ্য পুষ্টি, নিরাপত্তা, আশ্রয় ও সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে পরিবার, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও যতেœ কার্যকর ভুমিকা পালন করে আসছে। লক্ষনীয় হচ্ছে, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, টিকাদান, যতœ ও শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের শিশু বেড়ে উঠেছে।
বাউফল উপজেলার চন্দ্রপাড়া এলাকায় ১৯ জন অভিভাবক (পিতা-মাতা) সাথে কথা বলতে গিয়ে ১২ জন শিশুরখেলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে। ৫জন পিতা মাতা কোন মত প্রকাশ করেনি। ২ জন শিশুর পিতা দ্বিমত প্রকাশ করেন। ১২ জন শিশুর পিতা মাতার একই বক্তব্য হচ্ছে, শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ শিশুটিকে প্রথম বয়স থেকে তৈরি করতে হবে। প্রথমথেকে শিশুদের গড়ে তোলার মাধ্যম ও সহায়ক হচ্ছে খেলনা। এ নিত্য নতুন খেলনার সাথে পরিচিতি করে দেয়ার দায়িত্ব হচ্ছে পিতা মাতার।
সরেজমিনে বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর পূর্বপাশে ছোট খালে ৭/৮ শিশু। সারা শরীরে কাদা মেখে খেলা করতে দেখা গেছে। পাশাপশি উপজেলার বিলবিলাস (১) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি কক্ষে পাটি বিছিয়ে শিশুর শিক্ষার পাশাপাশি বিনোদনের উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। খেলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে ফারুক হোসেন বলেন, গ্রামাঞ্চলে বিনোদনের ধরন হচ্ছে, গান-বাজনা, খেলাধুলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ আতœীয় স্বজন বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি শিশুর মানষিক ভাবে সক্রিয় থাকার মাধ্যম হচ্ছে বিনোদন।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কালের আবর্তে পরিবর্তন আসছে গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিশুদের বিনোদনের খেলা। হারিয়ে যাওয়া সেই খেলার মধ্যে রয়েছে হা ডুডু, ফুল টোক্কা, বৌছি খেলা, কাবাডি, দোল্লা মারা, লাউপ্পা, ইচিং বিচিং, পুতুল খেলা সহ প্রায় ৪৮ ধরনের খেলা। শারীরিক ও বুদ্ধিমত্তা পরিচয় খেলার পরিবর্তে জড়িয়ে পড়েছে কম্পিউটার টিভি দেখার মধ্যে। চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরব্যারেট কয়েকজনের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, স্থানীয় পর্যায় শিশুর ৪৮ ধরনের খেলা ছিল। আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ায় ওইসব খেলা হারিয়ে গেছে। শিশুর হাতে উঠে এসেছে মোবাইল কিংবা টিভি রিমোর্ট। হারিয়ে যাওয়া খেলার সাথে শিশুর পরিচয় থাকা চাই।
অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরো জানাগেছে, খেলাধুলা, গান-বাজনা, গল্প-বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শিশু বিনোদনের উপকরনের হচ্ছে, বল, ব্যাট, বাজনা, হারমনিয়াম, ঢোল, ঝুরি। খোসগল্প, বই, উপন্যাস, অনুষ্ঠান নতুন নতুন পোষাক পরিচ্ছেদ ইত্যাদি। শিশুর বিনোদনের ক্ষেত্র হচ্ছে পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা