নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার এক যুগেরও অধিক সময় ধরে বন্ধ


প্রতিনিধি,নলছিটি,ঝালকাঠি
পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকার পরেও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সার্জন ও এনেস্থেশিয়ার ডাক্তার না থাকায় এক যুগেরও অধিক সময় ধরে বন্ধ আছে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার।
সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ করলেও উপজেলাবাসী বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা থেকে। পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও মালামাল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নলছিটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কক্ষে ঝুলছে তালা। জরুরী প্রসূতি সেবাসহ (ইএমওসি) বন্ধ রয়েছে সকল ধরণের অপারেশন (অস্ত্রপচার) কার্যক্রম ।
সরকারের দেয়া সকল সুযোগ সুবিধা থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকায়
উপজেলার সাধারন মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দরিদ্র মানুষেরা প্রসূতি মা সহ ছোটখাটো অপারেশন করাতে অতিরিক্ত অর্থে বেসরকারী ক্লিনিকে তাদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ফলে গরীব মানুষরা আটকে যাচ্ছে ঋণের জালে। সরকারি সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সেবা না পেয়ে চরা সুদে ঋণ নিয়ে করাতে হচ্ছে চিকিৎসা। বাজারের উর্ধ্বোগতির পাশাপাশি পরিবারের লোকদের চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই চিকিৎসা করাতে বেঁচে দিচ্ছেন শেষ সম্বলটুকুও।
হসপিটালের জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি চালু থাকলে প্রসূতি মায়েরা বিনা খরচে নিরাপদে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতেন। মাসে ২০ থেকে ২৫ টি সিজারিয়ান অপারেশন অনায়াশেই চালানো যেতো । অসহায়, গরীব রুগীদের বিনা খরচে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর একমাত্র ভরসা ছিল উপজেলা পর্যায়ে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এ জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি।
একটি সূত্র জানিয়েছে , ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ মাহবুব হোসেন ও অ্যানেস্থেসিয়া (অচেতন) চিকিৎসক বদলি হয়ে যাওয়ার পর আর কোন বিশেষজ্ঞ সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক এখানে যোগদান করেননি। ফলে একযুগেরও অধিক সময় ধরে বন্ধ আছে নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরণের অপারেশন । জরুরি রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন হলে নিতে হচ্ছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা বেসরকারি ক্লিনিকে । ক্লিনিক গুলোতে সার্জনের ফি, অপারেশন চার্জ, ওষুধ ও ক্লিনিক ভাড়াসহ মোটা অংকের টাকা গুনতে হচ্ছে। টাকার অভাবে অসচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালটিতে। সেখানে ডাক্তার ও নার্সরা নরমাল ডেলিভারী করাতে ব্যর্থ হলে বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় প্রসূতি ও শিশুর জীবন বাঁচাতে স্বজনরা তখন নিরুপায় হয়ে ধার-দেনা করে ক্লিনিকে বা বরিশাল নিতে বাধ্য হচ্ছেন। যাওয়ার পথে অনেক প্রসূতি মা প্রাণ হায়িছেন বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, অপারেশন থিয়েটারের পাশাপাশি
নলছিটি স্বাস্থ্য কমল্পেক্সে স্বল্পতা রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর কামড়/আচড় এর ভ্যাকসিনের। স্থানীয় বাসিন্দা জসিম হাওলাদারের মেয়েকে পোষা বিড়াল আচঁড় দিলে তাকে টিকা নিতে নলছিটি হসপিটালে না পেয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে যেতে হয়েছে। তাতে তার সময়ের অপচয় ও ভোগান্তি দুটোই পোহাতে হয়েছে।
নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা আ’লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জলিলুর রহমান আকন্দ বলেন অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমসহ জরুরী প্রসূতি সেবা ফের চালু হওয়া একান্ত প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুইজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দিলেই এলাকার সরকারের সেবা সমুহ ভোগ করতে পারতো। এ সেবা বন্ধ থাকায় শুধু টাকার অপচয় না প্রসূতি মায়েরা জীবন হারানোর পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অচিরেই হসপিটালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগের জোর দাবি জানান।
নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ সার্জন(গাইনী অপারেশন) পোষ্টিং দিয়ে জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল অপারেশন কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য প.প কর্মকর্তা ডাঃ শিউলি পারভীন জরুরী প্রসূতি সেবাসহ সকল ধরণের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়াতো অন্য কেউ ঐ সেবা দিতে পারবে না। সিজারিয়ান অপারেশন না করতে পারায় এলাকার প্রসূতিরা নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জেনারেল সার্জন, গাইনী সার্জন, অর্থপেডিক্স সার্জনসহ কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকায় আমি এখানে যোগদান করার পরই কর্তৃপক্ষকে এ বিষয় লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। তারা বেশ কয়েকজনকে দিয়েছিলেন কিন্তু মফস্বল শহর হওয়ায় এখানে কোন চিকিৎসক যোগদান করতে চান না।