ঢাকা বাংলাদেশ

শিকলে বাঁধা টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, ভাতা তুলে খান ছেলেরা

Untitled 1 samakal 64e64da334fba
print news

মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়াবেন– এমন স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আব্দুল জব্বার জোয়াদ্দার। অথচ আজ তাঁর জীবন কাটছে শিকলে বাঁধা অবস্থায়। মানসিক ভারসাম্যের দোহাই দিয়ে ঘরে বেঁধে রেখেছেন ছেলেরা। ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামে।

আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে ঢাকার একটি জুট মিলে চাকরি করতেন। স্বাধীনতার ডাকে বাড়িতে না জানিয়েই ভারতে চলে যান। কারখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় মেসের চৌকি, বিছানাপত্তর মাত্র ৩২ টাকায় বিক্রি করে দেন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১১ নম্বর সেক্টরে আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন তিনি।

স্থানীয়রা জনান, স্বাধীনতার পাঁচ বছরের মাথায় এলাকায় ঘটে একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় দুই নম্বর আসামি হিসেবে জেলে যান আব্দুল জব্বার। টানা ১৩ বছর জেল খাটেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এরশাদের শাসনামলে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন তিনি। এরপর রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতায় ক্ষমা পেয়ে জেল থেকে মুক্ত হন। এই মামলায় নিঃস্ব হয়ে যান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, দুই বিয়ে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার। দ্বিতীয় স্ত্রী বেঁচে নেই। তাঁর ঘরে রয়েছে এক মেয়ে। জীবিত প্রথম স্ত্রীর ঘরে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আব্দুল জব্বার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরের মেয়েকে বেশি আদর করতেন। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তৃতীয় বিয়ের চেষ্টা করেন। এসব নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন তিন ছেলে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সুবিধামতো তুলে ভোগ করার ফন্দি আঁটেন তারা। বাবাকে মানসিক ভারসাম্যহীন সাজিয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। বড় ছেলে লাভলুর ঘরেই বন্দিজীবন কাটে তাঁর। তাঁর ভাতা তুলে ভাগ করে নেন তিন ভাই। ব্যাংক থেকে বাবার নামে ৮ লাখ টাকা ঋণ তুলেও ভাগ করে নিয়েছেন তারা।

দ্বিতীয় ছেলে বাবলু জোয়াদ্দার স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি জানান, তাদের পক্ষের তিন ভাই, এক বোন। সবার বড় লুৎফর রহমান লাভলু, দ্বিতীয় বাবলু জোয়াদ্দার, ছোট নুরন্নবী ওরফে নুরুল ইসলাম, বোন স্বপ্না। অপরপক্ষের বোন জীবন আক্তার।

বাবলুর দাবি, তাঁর বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। মুক্ত থাকলে অঘটন ঘটাতে পারেন। তবে তাঁর দাবির পক্ষে তথ্যপ্রমাণ চাইলে একটি ব্যবস্থাপত্র দেখান এই প্রতিবেদককে। তাতে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক চিকিৎসকের কাছে দেখানো হয়েছে। কিছু ওষুধপত্র খাওয়ানো হয়েছে। এরপর আর কোনো চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়নি তাঁকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘কেন আমাকে বেঁধে রাখা হয়েছে তা জানি না। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছি। অথচ আজ আমি নিজেই পরাধীন।’

ধনবাড়ীর ইউএনও আসলাম হোসাইন বলেন, ভুক্তভোগীর জন্য বীরনিবাসে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *