অনুসন্ধানী সংবাদ

এমটিএফই : ১০ অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি টাকা

71459 mtf
print news

এমটিএফই (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ) বিটকয়েনভিত্তিক কথিত প্রতিষ্ঠানই শুধু প্রতারণা করেনি। এর সঙ্গে জড়িত প্রধান সিইওদের (প্রধান নির্বাহী) অনেকেই ভিন্ন রকম প্রতারণা করেছেন। এই সিওরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অ্যাপসেও জমা দেননি। তারা ওই টাকা নিজেদের একাউন্টে জমা করেছেন।
অনেক সিইও কোম্পানির সদস্যদের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এতে করে নিঃস্ব হয়েছেন সদস্যরা। সিআইডি’র হটলাইনে নম্বর দেয়ার পর অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন। কেউ সশরীরে এসে অভিযোগ করছেন।

রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ, গুলশান ও ধানমণ্ডি এলাকার বেশি ভুক্তভোগী এফটিএমই’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা সিইওদের নাম জানিয়েছেন। তবে এদের অনেকের মোবাইল বন্ধ। সিআইডি’র একাধিক টিম তাদের বাসায় অভিযান চালালেও তাদের ধরা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রায় ১০ জন সিইও এর বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি টাকার হিসাব পেয়েছে সিআইডি। প্রতারক সিইওরা তাদের টাকা এমটিএফই’র অ্যাপসে জমা না দিয়ে তারা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন বলে ধারণা সিআইডি’র।
এ বিষয়ে সিআইডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি (সাইবার পুলিশ সেন্টার) আশরাফ হোসেন  জানান, ‘এমটিএফই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’

এমটিএফই’র অ্যাপসে অনেক সদস্য টাকা দিয়েছেন ডলারে। বাংলাদেশি টাকা না দেয়ার কারণে ডলারে লেনদেন হওয়ায় এটি অনেককে বিশ্বাসযোগ্য করেছিল। এতে অনেক শিক্ষিত লোকজন বিশ্বাস করে এই প্রতিষ্ঠানের অ্যাপসে টাকা দিয়ে ফেঁসে গেছেন। গত ১৬ই আগস্টের পর হঠাৎ করে এমটিএফই’র ভার্চ্যুয়াল অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, তারা বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সিআইডি জানায়, সবুজবাগ থেকে আজিজ নামে এক ভুক্তভোগী সিআইডি’র কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি প্রায় ওই এলাকার ৪ জন সিইও’র নাম বলেছেন। তার সঙ্গে মোবাইল নম্বর, অফিসের ঠিকানা, বাসার ঠিকানা ও তারা কোন কোন ব্যাংকে লেনদেন করে থাকেন তার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক লেনদেনের সিডিআর তারা বের করে দেখেছেন যে, তাদের অ্যাকাউন্টে ৩০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অনেকেই এই টাকা সরিয়ে নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, গত ১৯শে আগস্ট রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় মোহাম্মদ আল মামুন নামে একজনকে ভুক্তভোগীরা পুলিশের হাতে তুলে দেন। আল মামুন এমটিএফই’র ঢাকা জেলার সিইও। পুলিশ তার অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখতে পায় ১৬ লাখ ১৭ হাজার ১১২ ডলার জমা রয়েছে। তবে কোনো ভুক্তভোগী তার নামে কোনো মামলা না করার কারণে তাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে।

সিআইডি জানায়, দেশ থেকে যে ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে তা উদ্ধার করা তাদের পক্ষে অনেক কঠিন হবে। কেননা ওই টাকা এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে। তবে দেশে যে সিইও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
সিআইডি জানায়, প্রায় ১৫ জন সিইও’র নাম ও ঠিকানা পেয়েছেন তারা। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। এদের মধ্যে রয়েছেন- চট্টগ্রামের বেলায়েত হোসেন, গাজীপুরের বিপ্লব হোসেন, মানিকগঞ্জের সজীব মোল্লা, ঢাকার তামজিদ খান, রাশেদ আলম, মাহমুদুল হাসান, নারায়ণগঞ্জের রুহুল আমিন মোল্লা, কুমিল্লার মিজানুর রহমান, গাজীপুরের জুয়েল রানা, মাদারীপুরের ইমরুল হাসান, দিনাজপুরের রাজু ইসলাম, কুমিল্লার মোহাম্মদ আরিফ, নরসিংদীর আমিন খান, টাঙ্গাইলের কালীহাতীর হৃদয় হাসান ও বগুড়া জেলার রাম মোহন বর্মণ প্রমুখ। সিআইডি বলছে, অভিযুক্তরা গা-ঢাকা দিয়েছে। এদের ধরা গেলেই এই প্রতিষ্ঠানের টাকা কীভাবে বিদেশে পাচার হয়েছে এবং তাদের কাছে কত টাকা আছে তা জানা যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *