বরগুনায় নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না নেওয়ায় ৯ শিক্ষককে শোকজ


বরগুনার আমতলী উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস্টারভিত্তিক নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না নেওয়ার অভিযোগে ৯ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমতলী বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
কোচিং বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে বিদ্যালয় শিক্ষকদের হাতে তৈরি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগ করেন অভিভাবকরা।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা জড়িত শিক্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাাস্তি দাবি করেছেন। ঘটনা ঘটে আমতলী বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া শিক্ষকেরা হলেন সহকারী শিক্ষক সুনীল কংস বনিক, নার্গিস আক্তার, নাসিমা, ফাতেমা, লাভলী, কুলসুম, নাজমা, জোহরা ও নার্গিস নিরু। তাঁরা সবাই আমতলী বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয় ২৩ আগস্ট। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা ক্লাস্টারভিত্তিক প্রশ্নপত্রে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। কোচিং–বাণিজ্যে অভিযুক্ত আমতলী বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্র বাদ দিয়ে নিজেদের তৈরি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। সোমবার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম বলেন, কোচিং–বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে ক্লাস্টারভিত্তিক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেরা প্রশ্নপত্র বানিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত ৯ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব দেওয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন খান বলেন, ক্লাস্টারভিত্তিক প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। গতকাল সোমবারের একটি অভিযোগের কারণে ৯ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘আমরা অফিসের দেওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়েছি। আমরা কোচিং করাই না।’
এদিকে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষকদের কাছে যেসব শিক্ষার্থী কোচিং করে পরীক্ষার হলে তাঁদের বাড়তি সুযোগ করে দেওয়ার জন্য শিক্ষকেরা নিজেদের তৈরি করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়েছেন। পরীক্ষার আগেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বলে দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ক্লাস্টারভিত্তিক প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। নিজেদের করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।