বরিশাল বাংলাদেশ

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ॥ অরক্ষিত বরিশাল শহর ॥সুইপার থাকলেও ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয় না

6 2309011422
print news

সারাদেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বরিশালে ডেঙ্গু সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এ অবস্থায় বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাটে জমে থাকা পানি অপসারণসহ জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা শনাক্ত করে তা ধ্বংস করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

অথচ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকালীনও অনেকটা অরক্ষিত বরিশাল নগরী। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার খানাখন্দে বা ড্রেনে জমে আছে পুরনো পানি। সেসব পানিতে মশার লার্ভার বংশবিস্তার হচ্ছে অবাধে। এতে এডিস মশার প্রজনন ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে ডেঙ্গু সংক্রমণের আশঙ্কায় দিন পার করছেন শহরের বাসিন্দারা।

সরেজমিন দেখা গেছে, বরিশাল শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য বেশ কিছু ড্রেন রয়েছে। কিন্তু সেই ড্রেন দিয়ে বর্ষায়ও পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ড্রেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ডাবের খোসা, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক-পলিথিন বা ই-বর্জ্যে ড্রেনগুলো এখন মৃতপ্রায়। এসব ড্রেনের পাশ ঘেঁষেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত। ড্রেনের পাশে থাকা পথ দিয়েই নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। অথচ ডেঙ্গুর এই ভয়ংকর সময়ে ড্রেনগুলোতে যে হারে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে, তাতে আতঙ্কগ্রস্ত ওইসব পথে যাতায়াতকারীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে সড়কে পানি জমে। সাধারণ পথচারীদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদেরও নোংরা পানি পেরিয়ে চলাচল করতে হয়। শহর ঘিরে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে এসব শিক্ষার্থীও রয়েছে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে। তাদের নিয়ে অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।

নগরীর কাউনিয়া হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রাকিব খান বলেন, এখন চারদিকে ডেঙ্গুর ছড়াছড়ি। এর মধ্যে বিভিন্ন পুকুরের পাড় ও পার্শ্ববর্তী ড্রেনগুলোতে ময়লা পানি জমে আছে। সেখানে মশার লার্ভাও কিলবিল করছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সুইপার থাকলেও ড্রেনগুলো কখনো পরিষ্কার করা হয় না।

নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন সরদার বলেন, ড্রেনের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি একাধিকবার সিটি করপোরেশনের নজরে আনা হলেও ড্রেনটি সচল বা পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

নগরীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ফুচকা ও চটপটির বেশ কয়েকটি দোকান বসে। অনেকে সন্ধ্যার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে যান। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরে পরিবার নিয়ে একটু সুন্দর সময় কাটানোর মতো বেশকিছু বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। তাই সময় পেলেই তারা বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুড়তে আসেন। তবে পাশের ড্রেনগুলোতে যেহারে ময়লা ও পানি জমে থাকে, তাতে তারাও ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমনকি ওইসব বিনোদন কেন্দ্রের দোকানগুলোতে এসে বসলে বিকেলেও মশার কামড় হজম করতে হয়। সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বহুগুণ বেড়ে যায়। বরিশাল সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি, মশা নিধনের জন্য তারা ৩০টি ওয়ার্ডে স্প্রে ও ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধনের কাজ করছে। তবে নগরবাসীর অভিযোগ সিটি করপোরেশনের দেওয়া ওষুধে নিধন হচ্ছে না মশা।

আরও পড়ুন……..

বরিশালে ডেঙ্গুতে এক মাসে ২৯ জনের মৃত্যু

 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সাধারণ মশা নিধনে আমাদের বছরজুড়েই কর্মকান্ড থাকে। তবে গত এক মাস আগে মশক নিধনে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। যার মাধ্যমে মশার বংশ বিস্তাররোধে বিভিন্ন স্থানে তরল ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে।

মশার লার্ভা শনাক্তে বরিশালে কোনো ল্যাব নেই জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, এর বাইরে আমাদের একাধিক টিম ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে ঘুরে কাজ করছে। যেখানেই মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে, সেখানেই তরল ওষুধের মাধ্যমে তা ধ্বংস করা হচ্ছে। তবে আমাদের ডেঙ্গুর লার্ভা শনাক্তের মেশিন নেই। তাই এডিস, অ্যানোফিলিস কিংবা অন্য যেকোনো মশাই হোক না কেন, আমাদের কর্মসূচির আওতায় সব মশার লার্ভাই ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মনজুরুল ইমাম বলেন, গত দুই বছর বরিশালে ডেঙ্গুর তেমন প্রকোপ ছিল না। এজন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর) থেকেও কোনো প্রতিনিধি এ বছর আসেনি। গত দুই বছর যারা এসেছেন তারা বরিশালে এডিসের লার্ভা পায়নি। এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই ‘ট্রাভেল পেশেন্ট’। আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকায়। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। সেখানে অন্যরাও সংক্রমিত হয়েছেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা  বলেন, ড্রেনগুলোতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিছন্নতাকর্মীরা ড্রেনে আটকে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছে। একইসঙ্গে নগরবাসীকে ড্রেনে ময়লা না ফেলার জন্য আহ্বান করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক  বলেন, সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। তবে এবার আগেভাগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। তাই জ্বর হলে প্রথমেই আমরা ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছি। ঢাকা থেকে আসা বাস, লঞ্চসহ যানবাহনে এডিস মশার বিস্তৃতি ঘটতে পারে জানিয়ে ডা. শ্যামল কৃষ্ণ বলেন, ২০১৯ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় বরিশালে। তারপর থেকে প্রতিবছরই ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাচ্ছে। এবারেও ঈদুল আজহার পর ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তৃতি দেখা দিয়েছে। আর এসব রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা থেকে আসার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ ও সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে এডিস মশার বিস্তার রোধ, লার্ভা ধ্বংস করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যেমন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে যেন নতুন কোনো মশায় না কামড় দেয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে যে মশা কামড়ে দেয়, সেটিও এডিসবাহী হয়ে বংশবিস্তার ঘটাতে পারে। এ জন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে রাখতে বলা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *