ফিচার

মিতার নার্সারি স্বপ্ন

salo 1691536667
print news

বীজ থেকে অঙ্কুর। আর অঙ্কুর থেকে উঁকি দেয় নতুন চারা স্বপ্ন। চারা থেকে মহীরুহ। বছরের পর বছর ধরে সন্তানসম যত্নে আর আদরে লালিত হয় নার্সারিতে।

আর এসব চারার গল্পে জড়িয়ে আছে মিতা বেগমের নাম। ছেলেবেলা থেকে গাছপালা ভালোবাসা এই নারী শখের বশে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সবুজের চক্রে। ধীরে ধীরে গাছই হয়ে পড়ে তার জীবিকার প্রধান অবলম্বন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গায় মিতা বেগমের বসবাস। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। ঠিক কবে থেকে চারা বিক্রি শুরু করেছেন তা মনে করতে পারেন না। তবে সংসারের পাশাপাশি বাগান করার নেশা ছিল তার। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় বাড়তি চারা। এভাবে ধীর পায়ে বাড়ির সামনের উঠানে গড়ে তোলেন বিক্রয়যোগ্য চারার নার্সারি। দেশীয় ফুল-ফল-বনজ গাছের পাশাপাশি এখানে যুক্ত হয় ক্যাকটাসের মতো নানা বিদেশি গাছও। বর্তমানে ৩৬ শতক জমিতে ৫শ প্রজাতির বেশি গাছ অলংকৃত করেছে তার নার্সারি। গাছের এই বিশাল সংগ্রহ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তিনি। জানান, খুব সহজে নতুন জাতের গাছ হাতে আসত না। একেকটি গাছ সংগ্রহ করতে গিয়ে দূর-দূরান্তে যেতে হতো তাকে। যখন সেই বিদেশি চারাটি দেশে নতুন পরিবেশে এসে খাপ খাইয়ে নেয় এবং নতুন চারা দেয় তখন মনে হয় চারা সংগ্রহের সেই কষ্ট সার্থক।

মিতা বেগম নলডাঙ্গা বাজারের কাছেই নিজ বাড়িতে নার্সারি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ব্যবসার কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার বর। একই সঙ্গে মিতার দুই সন্তানও পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের এই ব্যবসায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন। চারা বিক্রির জন্য ঝিনাইদহ শহরে একটি দোকান আছে তাদের। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে নার্সারি থেকে মোট আয় দাঁড়ায় ২০-৩০ হাজার টাকা।

মিতা তার অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে বসেন। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে নার্সারি ব্যবসার খুঁটিনাটি। এ ব্যবসার মূল উপকরণ মাটি, জৈব ও রাসায়নিক সার, কাঠের গুঁড়া, বীজ, গাছের ডাল বা কাটিং। ১০ দিন থেকে ২ বছর বয়সি চারা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে বাড়িতে আসেন গ্রাহক। তাদের দেখে চারা সংগ্রহের পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে তার। ফলজ ও বনজ বাগান ছাড়াও শহুরে বাগানিদের ছাদকৃষির জন্য এসব চারার চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ ভিড় জমাচ্ছেন তার বাড়ির আঙিনায়। পারিবারিক জীবনের পাশাপাশি নার্সারিও তার আরেক সংসার। দাম বিবেচনায় ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার চারা গাছই বেশি তার নার্সারিতে। পাশাপাশি আছে বনসাইও। আর কে না জানে শিল্পপ্রেমী মানুষের কাছে বনসাই আরাধ্য এক নাম। যেহেতু নিজ আঙিনায় গড়ে উঠেছে নার্সারি তাই জিনিসপত্র সংরক্ষণের কাজে নার্সারির মাঝখানে আছে বিশাল এক পাকা ঘর। নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি ঝিনাইদহ বৃক্ষমেলায় বেশ কয়েকবার অংশ নিয়েছেন মিতা। বৃক্ষমেলায় সেরা স্টলের সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বেশ কয়েকবার।

মিতার মতে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বর্তমানে নার্সারির ভূমিকা অনস্বীকার্য। নার্সারি পরিবেশ সংরক্ষণেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নার্সারি হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফলদ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা কলম উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়।
বিশ্বের অনেক মানুষের ঔষধি উদ্ভিদের মাধ্যমে রোগ নিরাময় খুবই জনপ্রিয়। বহু দেশে ভেষজ ওষুধের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। ভেষজ গাছের সতেজ অথবা শুকনো পাতা আর ফুলেল অংশ ব্যবহার করা হয়। আর গাছের বীজ, ফল, বাকল ও শিকড় থেকে মসলা তৈরি হয়। তাই ভেষজ গাছের চারা ছড়িয়ে দিতে মনোযোগী হয়েছেন মিতা বেগম। তিনি মনে করেন, নারীদের এসব কাজে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত হওয়া দরকার।

মিতা জানান, নারীরা স্বেচ্ছায় উদ্যোগী হলে নার্সারির ব্যবসা করতে পারেন। এতে সংসারে সচ্ছলতার পাশাপাশি আরও দশটা লোকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। নিজের একটি স্থায়ী পরিচিতি তৈরি করা যায়। নতুন উদ্যোক্তাদের এ পেশায় আগ্রহী করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি। উন্নত জাতের চারা কলম উৎপাদনের জন্য এককালীন মূলধন দরকার।

যুবসমাজকে প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করে এ পেশায় সম্পৃক্ত করতে পারলে ভবিষ্যতে নার্সারি শিল্প সত্যিকারভাবে শিল্প হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। বসতবাড়ির আঙিনা, উঠান, ছাদবাগান করেও পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানো ছাড়াও দেশের চাহিদা মিটিয়ে নার্সারি পণ্য বিদেশেও রফতানি সম্ভব বলে মনে করেন এই নারী উদ্যোক্তা।

আদিকালে কৃষির সূচনা হয় নারীর হাত ধরে। সেই ধারাবাহিকতায় মিতা বেগমেরা আমাদের ভরসা দিয়ে যান। আর সবুজ প্রাণগুলোকে পর্যবেক্ষণ মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে রাখেন মায়ার চাদরে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *