রাজনীতি

কর্মীদের কাঠগড়ায় ছাত্রলীগের হাইকমান্ড

Chattra League 20230911 215324780
print news

রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। থানায় নিয়ে কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা জানাজানির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। প্রতিবাদের এই কাতারে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল বিরোধী দলগুলোর ছাত্রসংগঠনও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতিকে মেরে মাড়ির উপরের চোয়ালের অধিকাংশ দাঁত ফেলে দেওয়ার যে চিত্র তারা গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দেখেছিল, পরবর্তী দিনে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত সেই পুলিশের বহিষ্কার এবং ঘটনার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করা হবে বলে প্রত্যাশা করেছিল ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দিনভর এমন কোনো কিছু দেখেনি তারা। এমনকি কেন্দ্র কিংবা ঢাবি শাখা, ঘটনাটিতে কাউকে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা যায়নি।

এমতাবস্থায় বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে। তারা বলেন, একান্ত নিজেদের ক্ষোভ থেকেই বন্ধুদের নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বা কেন্দ্রের কোনো ধরনের নির্দেশনা বা হস্তক্ষেপ ছিল না।

ওই সময় দিনভর ছাত্রলীগের কোনো পদক্ষেপ না দেখেই ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানাতে দেখা যায়। কেউ কেউ বলেন, ছাত্রলীগ ক্ষমতায় না থাকা অবস্থায়ও এতিম ছিলে, আজ এত বছর ক্ষমতায় থেকেও এতিম। পুলিশের নির্যাতনের শিকার দুই নেতাই ঢাবির হওয়ায় স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ক্ষোভ বেশি ছিল।

তবে সারাদিন চুপ থাকলেও বিকেল থেকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ইউনিটগুলো বিবৃতি দিতে শুরু করে। এসব বিবৃতিতেও পুলিশের প্রতি যথেষ্ট নরম সুর উচ্চারণ করতেই দেখা যায় তাদের। অন্যদিকে এর উল্টো রূপ দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিবৃতিতে। ছাত্রলীগের ওপর পুলিশের এমন হামলাকে ‘যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছে ছাত্রদল। নিজেদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্যাতনকারী এক অফিসারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না করে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে ছাত্রলীগ কলঙ্ক লেপন করেছে, ছাত্রলীগের মতো একটি পুরনো ছাত্রসংগঠনের এহেন অমর্যাদাকর অবস্থানের কারণে নিন্দা ও হতাশা প্রকাশ করে ছাত্রদল।

সবশেষ সোমবার বেলা ১২টায় রাজু ভাস্কর্যে পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানায় ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত গাজীপুরের শিক্ষার্থীদের সংগঠন গাজীপুর ছাত্র কল্যাণ কমিটি। একই দিন বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ।

 

ফলে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের পরেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের ভাষ্য- কেন, কি কারণে পুলিশি নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা?

এ বিষয়ে জানাতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কেন্দ্রের নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি এনামুল হাসান নাহিদ।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ এই বিষয়টাকে কূটনীতিকভাবে সমাধান করতে চেয়েছিল এবং ইতোমধ্যে আমরা সফলও হয়েছি। এমনটা নয় যে, কেন্দ্রীয় নেতারা এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। ঘটনার দিন রাতেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থানায় এসে ওসির সঙ্গে কথা বলেছে। কি ঘটেছে তিনি সার্বিক বিষয় খোঁজ-খবর রেখেছেন, নেতাকর্মীদের পাশেই ছিলেন।

তবে এমন ঘটনায় কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ক্ষোভ প্রকাশ বা বিবৃতি কেন দেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষোভ প্রকাশ বা এ নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা আন্দোলন-বিক্ষোভে যেত। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা ভিন্ন পথে এর সমাধান চেয়েছিল। ইতোমধ্যে তাকে (অভিযুক্ত এডিসি হারুন) বরখাস্ত করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *