যশোরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যু


যশোর জেলা প্রতিনিধি : যশোরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ রাকিব মারা গেছেন। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তিনি সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকার শাহাবুদ্দিনের ছেলে ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ।
জানা যায়, রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান ধাবকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত প্রতিপক্ষের একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। হামলায় রাকিবসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে রাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। আহত আরও চারজনকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত অন্যরা হলেন- কচুয়া ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলি ক্লে, ইস্তাক আহমেদ অপু, শহিদুল ইসলাম ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইমরান আলি।
আহত ইমরান আলি বলেন, শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাবা কাজী শাহেদ আহমেদ স্মরণে কচুয়ায় শোকসভা করা হয়। এ কারণে তারা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। পরে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। ঘটনার সময় আমরা নিমতলী টেকেরহাট বাজারে আমার দোকানে বসেছিলাম। এ সময় চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান ধাবকের ভাইপো হাফিজ ধাবক, সামাদ ধাবক, মুস্তাক ধাবক, আজিজ ধাবক, মফিজ ধাবক ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে ইসমাইল গাজি লাঠি, শাবল, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
তিনি আরও বলেন, রাকিবের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
যশোরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, রাকিব আহত অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছে বলে শুনেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
যশোরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন :
যশোর জেলা প্রিতিনিধ : যশোরের অভয়নগরের পাথালিয়া গ্রামের গৃহবধূ মনজুরা বেগম হত্যা মামলায় স্বামী আব্দুস সেলিমের যাবজ্জীবন ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) অতিরিক্ত দায়রা জজ তাজুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পিপি আসাদুজ্জামান।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ৬ মে পাথালিয়া গ্রামের আব্দুর রহমানের পুকুর থেকে গৃহবধূ মনজুরা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই অভয়নগরের পায়রা গ্রামের কবির হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা করেন।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালের ৬ মে সেলিমের সঙ্গে মনজুরা বেগমের বিয়ে হয়। এক সন্তানের জন্মের পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এর কয়েকদিন পর সেলিম একই গ্রামের রিক্তা নামে আরেক মেয়েকে বিয়ে করেন। তার ছয় বছর পর সেলিম পুনরায় মনজুরা বেগমকে বিয়ে করার জন্য তাদের বাড়িতে যান।
পরিবারের সম্মতিতে তাদের আবার বিয়ে হয়। পরে সন্তান ও স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন সেলিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২য় স্ত্রী রিক্তা বাবার বাড়িতে চলে যান। এরপর সেলিমের বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে গোলযোগ চলতে থাকে। ২০০৬ সালের ৬ মে ভোরে মনজুরার মরদেহ উদ্ধার হয়।
এদিকে, মামলার পর তদন্তে উঠে আসে শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে হত্যা করেছে সেলিম নিজে। পরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সেলিমকে আটক করে পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করে ২০০৭ সালের ৮ মে আদালতে চার্জশিট জমা দেন এসআই জসিম উদ্দিন। সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণার পর সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
অবৈধ যানবাহন বন্ধে অভিযান
“ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অটোরিকশার চালকরা”
যশোর জেলা প্রতিনিধি : যশোর শহরের যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহন বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে পৌরসভা ও ট্রাফিক বিভাগ। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) শহরের দড়াটানা, হাসপাতাল মোড় ও মুজিব সড়কে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের মোটর খুলে নেওয়া হয়। তবে হঠাৎ এমন অভিযানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অটোরিকশার চালকরা।
জানা যায়, যশোর শহরের পালবাড়ি-দড়াটানা-মণিহার, দড়াটানা মোড় থেকে জেলখানা মোড় হয়ে খাজুরা স্ট্যান্ড পর্যন্ত ও শহরের দড়াটানা মোড় থেকে চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গড়ে তোলা অধিকাংশ বহুতল ভবনের সামনে নিজস্ব জায়গা নেই। তাদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থাও নেই। কারো কারো থাকলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। ফুটপাত দখল করেই চলছে পার্কিং ও দোকানপাট।
একইভাবে শহরের চিত্রা মোড় থেকে জজকোর্ট মোড় পর্যন্ত এমএম আলী রোড ও দড়াটানা মোড় থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত এইচএমএম রোড, কাপুড়িয়া পাট্টি রোডের দুই পাশের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। এতে যানজটে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রোববার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় শহরের ফুটপাত বেদখল, অবৈধ যানবাহন ও যানজট নিরসনের অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের একদিনের মধ্যেই সোমবার সকাল থেকে শহরের হাসপাতাল মোড়, দড়াটানা, জজকোর্ট মোড় ও মণিহার এলাকায় অবৈধ যানবাহন বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।
তবে একদিনের নোটিশে হঠাৎ অভিযান পরিচালনা
করায় বিপাকে পড়েন যাত্রী ও অটোরিকশা চালকরা। অনেকে ভাড়ায়চালিত অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নামেন। হঠাৎ অভিযানে অটোরিকশার মোটর খুলে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
শহরের জিরোপয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা কামরুল নামে এক অটোরিকশাচালক বলেন, আমি জানতাম অভিযান হবে। কিন্তু রোগী নিয়ে এসেছিলাম। হাসপাতালে রোগী নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে অভিযানে আমার অটোরিকশার মোটর খুলে নেওয়া হয়েছে।
খড়কি এলাকার অটোরিকশাচালক মিজানুর রহমান বলেন, গত (রোববার) মাইকিং করেছে শুনেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন অভিযান হবে বুঝতে পারিনি। আমার অটোরিকশার মোটর খুলে ভেঙে দিয়েছে। এখন আমি কীভাবে সংসার চালাবো বুঝতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিকশাচালক বলেন, যত আইন প্রয়োগ সব গরিবের উপর। যারা ফুটপাত দখল করে বড় বড় ভবন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই।
পথচারী শামছুর রহমান বলেন, শুধু অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে যানজটমুক্ত হবে না। ফুটপথের অবৈধ দখলদারদেরকেও উচ্ছেদ করতে হবে। আর যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করতে হবে। তা না করতে পারলে এমন অভিযানে কোনো সুফল আসবে না।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল হোসেন বলেন, রোববার জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক যশোর পৌরসভায় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে (সোমবার) অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও পৌরসভার সমন্বয়ে অবৈধ অটোরিকশা, ইজিবাইক বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। আগামীতে যাতে পৌরবাসী নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
যশোর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, যশোর শহরে অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা বেড়ে গেছে। এরমধ্যে মোটরচালিত অটোরিকশা বেশি বেপরোয়া। চালকদের হাতে অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এইসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।