রাজনীতি

যশোর যুবলীগের কমিটি নিয়ে ফের তোড়জোড় : ১৭ বছর পার

jubol 768x432 1
print news

যশোর : যশোর জেলা যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে যেন বিপাকে পড়েছে দলের হাইকমান্ড। তিন বছরের কমিটি ইতোমধ্যে ১৭ বছর পার করেছে। তবুও নতুন কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটির হাইকমান্ড। এতে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন হতাশা-ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে; তেমনি নেতৃত্বের জট তৈরি হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঠিক সময়ে কমিটি গঠন হলে এর মধ্যে কমপক্ষে তিনটি কমিটি তাদের মেয়াদ শেষ করত। অনেক নেতাকর্মীকে দলীয় পরিচয় দেয়া সম্ভব হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে এবার জেলার নতুন কমিটি গঠন বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছেন নীতি নির্ধারকরা। যোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য সংগঠনের নেতাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন তারা। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে। তবে সংগঠনের একটি অংশ চাইছে, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেওয়ার। অবশ্য দলের হাইকমান্ড সম্মেলনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি। তারা বলছে, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময় নতুন কমিটি করতে গেলে কোন্দল চাঙা হয়ে উঠতে পারে। এতে আন্দোলন ও নির্বাচনী তৎপরতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে শুধুমাত্র যশোরের মতো দীর্ঘমেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটিগুলোই কমিটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্র থেকে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নতুনদের হাতেই তারা নেতৃত্বভার দিতে চাইছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে পদপ্রত্যাশী অনেকেই লবিং-তদবির শুরু করেছেন।

পদ-প্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দ্রুতই কমিটি ঘোষণা হবে। সেটি আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি : সুব্রত পাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুব্রত পাল দৈনিক কল্যাণকে বলেন, যশোরের কমিটি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। কমিটি সম্মেলন করেও হতে পারে; আবার আহ্বায়ক কমিটিও হতে পারে। সেটি নির্ভর করছে সংগঠনটির চেয়ারম্যানের উপর। তিনি আরো বলেন, দ্রুতই কমিটি ঘোষণা হবে। এ পদ প্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তরুণ্য নির্ভর হবে কমিটি। যারা আগামি দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকার বিজয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারবেন।

২০০৩ সালের ১৯ জুলাই যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ৫৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৬ সালে। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৭ বছর। একই অবস্থা উপজেলা যুবলীগের কমিটিগুলোতেও। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি ছয় বছর পার করেছে সব উপজেলায়। ২০১৭ সালের ২১ মার্চ যশোর সদর ও শহর যুবলীগ, ২৯ মার্চ বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা এবং এপ্রিল ও মে মাসে মণিরামপুর, কেশবপুর, চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলা যুবলীগের তিন মাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তিন মাসের সেই আহ্বায়ক কমিটি ৫ বছর পার করেছে। দীর্ঘদিন পর গতবছরের এক ডিসেম্বর যশোর জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ জানুয়ারি যশোরে জেলা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ৩ থেকে ৬ জানুয়ারির মধ্যে যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সর্বশেষ শিক্ষা সনদের ফটোকপিসহ জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিতে বলা হয়। সেখানে সভাপতি পদে ডজন খানিক নেতার নাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে অর্ধশতাধিক নেতার নাম জমা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানাগেছে।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মী ও পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। সর্বশেষ গত বছরের ২৩ জানুয়ারি সম্মেলনের দিন ঘোষণা করা হলে নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেন। অনেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই সম্মেলন স্থগিত করা হয়। খুলনাসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় আবার নতুন করে সম্মেলন হওয়ার খবরে অনেকেই হন উচ্ছ্বাসিত। সভাপতি-সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় আছেন জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রায়, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, পৌর কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা মিলন, যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলম প্রমুখ। সূত্রের দাবি, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দৃশ্যমান দুটি গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপ রাজনীতির বিষয়টি মাথায় রেখে যুবলীগের কমিটিতে দু’পক্ষের নেতাকর্মী ছোট-বড় পদে স্থান পাবেন। যুবলীগের কমিটি ঘোষণার মধ্যদিয়ে যশোর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের বিভক্তির রাজনীতির অবসান ঘটানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছেন।

কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগনেতারা নাম না প্রকাশে জানিয়েছেন, যুবলীগের পরে সম্মেলন হয়েছিল জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের। মেয়াদ শেষে ছাত্রলীগের তিনবার (রিয়াদ-বিপুল কমিটি), (শাহী-জিসান কমিটি), (পিয়াস-পল্লব কমিটি) সম্মেলন হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে দুইবার। এতে শহিদুল ইসলাম মিলন-শাহীন চাকলাদার নেতৃত্ব পান। কিন্তু যুবলীগের সম্মেলন হয়নি। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে হচ্ছে; হচ্ছে করে হয়নি যুবলীগের সম্মেলন। সর্বশেষ গেল বছরের ২৩ জানুয়ারি সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। দীর্ঘদিন সংগঠনটির সম্মেলন না হওয়ায় নতুন পদপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় আমরা হতাশ। তবে নেতৃত্বের সংকট নেই। বর্তমান যুবলীগের পদধারীনেতারা রাজনীতিতে সক্রিয় না। যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে আমি যুবলীগের নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। যুবলীগের মানবিকতা আমরা জনগণের কাছে পৌছে দিচ্ছি। নির্বাচনের আগে যশোরে কমিটি দেওয়া উচিত। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, নির্বাচনের আগে যুবলীগের কমিটি না হলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। নির্বাচনে ভ্যানগার্ড হিসাবে যুবলীগ রাজপথে কাজ করবে। আমরা যারা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা; তাদের কোন পদপদবী না থাকায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ হচ্ছে না। আশাবাদী ভোটের আগে নতুন কমিটি হবে; যারা রাজপথে জামাত-বিএনপিকে রুখে দিতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় যশোর যুবলীগের সাংগঠনিক কোন ভিত্তি নাই। অনেকেই জেলা আওয়ামী লীগের চলে গেছে, কেউ মারা গেছে, অনেকেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। যে কারণে নির্বাচনের আগে দলে যুবলীগ গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করবে বলেই কেন্দ্রীয় যুবলীগ জোর দিচ্ছে সম্মেলনের দিকে। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, যুবলীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হওয়া সংগঠনটির ঐতিহ্য। আমরা রাজপথে সক্রিয় আছি। নির্বাচনের আগে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হওয়া উচিত। যার স্বচ্ছ রাজনীতির ধারক বাহক। যারা কখনো আদর্শের বাইরে যায়নি; তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দেয়া হোক।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল সাইফুল বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। সম্মেলন করার উদ্দেশ্যে গত বছর যশোরে বর্ধিত সভা করেছিলাম। তারিখ চূড়ান্ত হলেও করোনার কারণে সেটি হয়নি। যশোরেও দ্রুত কমিটি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *