বরিশাল বাংলাদেশ

পিরোজপুর থানা পুলিশকে ঘুষ দিয়েও মামলার চার্জশীটে ব্যবসায়ীর নাম

IMG 0837
print news

চুরি মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ ও চোরাই সিমেন্ট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।এমনকি ঘুষ গ্রহণের পরেও ওই ব্যবসায়ীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে চুরি মামলার চার্জশীটে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ হেড কোয়ার্টার এবং জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. আলমগীর শেখ।তিনি পিরোজপুর সদরের তুলাতলা পুরাতন ঈদগাহ্ সংলগ্ন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক এবং শহরের মাছিমপুর এলাকার ধোপাবাড়ির বাসিন্দা মৃত হোসেন আলী শেখের ছেলে।তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশের অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। তার দাবি সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি। যদিও বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন পিরোজপুর জেলার পুলিশ সুপার শফিকুর রহমান।লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ‘গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট পুরাতন হাসপাতাল ঘাটে ইমারত নির্মাণ সামগ্রি বিক্রির গোলা সংলগ্ন খালের ঘাটে একটি ট্রলার থেকে ট্রাকে সিমেন্ট তোলা হচ্ছিল। এসময় হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলে ঠিকাদার স্থানীয় কুমারখালী এলাকার মো. বাবুল শেখ আমাকে ফোন করেন। তিনি বৃষ্টি থেকে সিমেন্ট রক্ষায় আমাকে অনুরোধ করে একদিনের জন্য ৫০৬ ব্যাগ সিমেন্ট আমার দোকানে রাখেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জান্নাত এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মো. জুলফিকারের দোকানে রাখেন আরও ২৪০ ব্যাগ সিমেন্ট।

আলমগীর শেখ বলেন, ‘ঘটনার পরদিন সকালে দোকান খোলার পর পরই পিরোজপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজুল ইসলাম জানান, আমার দোকানে রক্ষিত আকিজ সিমেন্টগুলো চোরাই। আমি পুলিশ কর্মকর্তাকে জানাই ওই সিমেন্ট ঠিকাদার মো. বাবুলের। তিনি বৃষ্টির কারণে আমার দোকানে রেখে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের জন্য সিমেন্টগুলো নিবেন বলে আমাকে জানিয়েছে। এরপর এসআই মনিরুল আমাকে জানায় সিমেন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে। তার অনুমতি ছাড়া কেউ যাতে সিমেন্ট না নিতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য আমাকে বলেন।আলমগীর শেখ দাবি করেন, ‘পরবর্তী ৯ সেপ্টেম্বর সকালে এসআই মনিরুল ইসলাম উপস্থিত থেকে আমাদের দুই দোকান থেকে আকিজ সিমেন্টের ৬২৬ ব্যাগ সিমেন্ট বের করে। সেখান থেকে আজিক সিমেন্ট কোম্পানীর লোকেরা চারটি গাড়িতে বেশিরভাগ সিমেন্টগুলো নিয়ে গেলেও বাকী ১২০ ব্যাগ সিমেন্ট পরে নেয়ার কথা বলে আমার দোকানে রেখে যান এসআই মনিরুল ইসলাম।এরপরই আবার ওই সিমেন্টগুলো আমাকে বিক্রি করে টাকা দেয়ার জন্য বলেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। এর প্রেক্ষিতে একই বছরের ৩১ অক্টোবর, ১৩ নভেম্বর এবং ১১ ডিসেম্বর তিন দফায় এসআই মনিরুল ইসলাম আমার কাছ থেকে সিমেন্ট বিক্রির মোট ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে যান।সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘সিমেন্ট জব্দ করার সময় এসআই মনিরুলকে, ঠিকাদার বাবলু আমার কাছে যে সিমেন্ট রেখে গেছে তার মোবাইল রেকর্ড শুনিয়েছি। রেকর্ড শুনে এসআই মনিরুল আমাকে আশ্বস্থ করেন, এ ঘটনা নিয়ে আমার চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। এমনকি এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আমার নাম নেই বলেও নিশ্চিত করেন।কিন্তু পরবর্তীতে সদর থানার বকশি রিয়ান আমার মুঠোফোনে কল করে এসআই মনিরুল ইসলামের সাথে দেখা করতে বলেন। থানায় দেখা করতে গেলে এসআই মনিরুল আমাকে চুরির মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামি করার ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি করে। নিরুপায় হয়ে এসআই মনিরুলকে ৪০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে আসি। এরপর ওই টাকায় হবে না বলে বকশি রিয়ানের মাধ্যমে আমাকে আবার থানায় ডেকে পাঠান। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেয়ার কথা বলে আরও ৩০ হাজার নিয়েছেন এসআই মনিরুল ইসলাম।এই ঘটনার পর চলতি বছরের গত ১৫ জুন আদালত থেকে চার্জশীটের নকল তুলে দেখতে পাই আমাকে ওই মামলার ৮ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ২২ জুন রাত ৮টার দিকে এসআই মনিরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তার বিরুদ্ধে ডিআইজি’র কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা বললে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর শেখ বলেন, ‘পুরো ঘটনা তুলে ধরে আমি ডিআইজি এবং পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ঝালকাঠি জেলা পুলিশ একটি তদন্ত কমিটিও করেছে। ঘটনার তদন্ত করছেন নেছারাবাদ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহবুবা। এরই মধ্যে আমি মোবাইল রেকর্ডসহ সকল তথ্যপ্রমাণ তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। এমনকি অভিযুক্ত এসআই মনিরুল ইসলামকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি।

অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনায় ওই ব্যক্তি আগেও একাধিক জায়গায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্তও হয়েছে। কিন্তু তদন্তে অভিযোগের কোন প্রমাণ মেলেনি। এখন সংবাদ সম্মেলন করছে। অথচ বহুবার জিজ্ঞাসা করার পরেও তিনি বলতে পারছে না সিমেন্টগুলো তার দোকানে কে রেখে গেছে।

পিরোজপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমি এই থানায় নতুন যোগদান করেছি। যতটুকু যেনেছি ওই মামলাটির চার্জশীট হয়েছে। তবে এ নিয়ে অফিসারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা তদন্ত হচ্ছে কী-না আমার জানা নেই।

অপরদিকে পিরোজপুরের পুলিশ সুপার শফিকুর রহমান বলেন, ‘একজন অভিযুক্ত চার্জশীটভুক্ত হলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই পারে। তবে আমি পিরোজপুরে দুই মাস হলো যোগদান করেছি। এমনটি হয়ে থাকলে অবশ্যই খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। আমি নিজে দুর্নীতি করিনা, দুর্নীতির প্রশ্রয়ও দেই না।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *