রাস্তার দুইপাশে জনতার দীর্ঘ সারি। কেউ বিএনপি কর্মী আবার কেউবা উৎসুক সাধারণ মানুষ। অনেকের চোখে উচ্ছ্বাস। কারও মুখে স্লোগান। কারও হাতে ব্যানার, কারও হাতে ফেস্টুন। তাদের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলছে সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি’র ৫ম রোডমার্চ। সকালে ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে রোডমার্চ শেষ হয় খুলনার শিববাড়ি মোড়ে। মাগুরা, যশোর হয়ে দীর্ঘ ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ এই সড়কে ৬টি স্থানে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পথসভায় বক্তব্য দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
এ ছাড়াও বিএনপি কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তারা বলেন, বর্তমান সরকারকে ‘বিদায়’ করে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। তারা মনে করেন যে, আন্দোলন শুরু হয়েছে এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারলে সরকারের পতন হবে।
ঝিনাইদহে উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা আব্বাস বলেন, রোডমার্চে আজ আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছিল ঈদের আগে চাঁদ রাত পালন করছি। আজ সারা দেশের মানুষ উদ্দীপ্ত, উদ্বেলিত-উচ্ছ্বসিত, আবেগতাড়িত, মনোবেদনায় অস্থির। একদিকে বিজয়ের আনন্দ করছে, আরেক দিকে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে বার বার আবেদন করা হলেও সরকার বিদেশে চিকিৎসা নিতে সুযোগ দিচ্ছে না। আমি কয়েকদিন আগে ম্যাডামকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আমি তখন ম্যাডামকে বলে এসেছি- সারা দেশবাসী আপনাকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। মানুষ আপনার জন্য দোয়া করছে। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয়ই আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে। ইতিমধ্যে সারা দেশে সেটা শুরু হয়ে গেছে। আমরা শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবো।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির খুব খারাপ অবস্থা। বাংলাদেশে এখন ডলারের রিজার্ভ নাই বলেই চলে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের খেলাপিঋণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। আজকে বাংলাদেশে খেলাপিঋণের পরিমাণ ১০৯ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কে খেলো, এই টাকা গেল কোথায়? আপনার টাকা, আমার টাকা, জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এই টাকা কোথায় গেল জনগণ জানতে চায়?
এর আগে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী রোডমার্চে যোগ দেন। পথে পথে মাগুরা, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রোডমার্চের বহরে যোগ দেন। একপর্যায়ে রোডমার্চের বহর কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই ধারে নারী-পুরুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে রোডমার্চের বহরকে স্বাগত জানান। অনেক স্থানে নারীরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে রোডমার্চের বহরকে সিক্ত করেন। এ সময় দলের সিনিয়র নেতারা হাত নেড়ে তাদের অভিবাদন জানান।
এদিকে ঝিনাইদহে উদ্বোধনী সমাবেশে একটি শিশুকন্যা খালেদা জিয়া সেজে লোহার খাঁচায় বন্দি হয়ে সবার নজর কাড়েন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ মজিদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সৈয়দ মেহেদী হাসান রুমী, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, রকিবুল ইসলাম বকুল, সোহরাব উদ্দিন, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, যুবদল নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা এসএম জিলানী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদল নেতা রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রংপুর থেকে দিনাজপুর, বগুড়া থেকে রাজশাহী, ভৈরব থেকে সিলেট ও বরিশাল থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত চারটি রোডমার্চ করেছে বিএনপি। এ ছাড়া রাজধানীতে একাধিক সমাবেশ করেছে তারা। আগামী ১লা অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ, ৩রা অক্টোবর ফরিদপুর বিভাগে এবং ৫ই অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত