বরগুনার চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যা মামলায় ১৬ শিশুকে কারাদণ্ড


বরগুনার চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যা মামলায় আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত অভিযুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১২ জনকে ১০ বছর, ৪ জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৩ জন শিশুকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জেলা জজ মো. মশিউর রহমান খান এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় ১৭ জন শিশু আদালতে উপস্থিত ছিল। বাকি দুইজন জামিনে থেকে পলাতক রয়েছে।
রায় ঘোষণার আগে সকাল ৯টায় ১৬ জন শিশুকে বরগুনা জেলখানার ভেতর (শিশু সেফহোম) থেকে শিশু আদালতে উপস্থিত করে পুলিশ। রায় ঘোষণার সময় পলাতক শিশু নয়ন আদালতে উপস্থিত হয়।
১০ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত শিশুরা হলো- ইউনুছ কাজি (১৬), মো. রানা আকন (১৬), মো. ইমন হাওলাদার ইমন (১৭), জুয়েল কাজী (১৭), নয়ন (১৭), মো. সজিব (পলাতক) (১৩), মো. নাজমুল সিকদার (১৭), রাইয়ান বিন অন্তর (১৬), সিফাত ইসলাম সিফাত (১৭) (পলাতক), মো. মোশারফ (১৫), মো. সাইফুল মৃধা (১৬) ও মো. রাব্বি (১৭)।
৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত শিশুরা হলো- মো. সাগর গাজী (১৭), মো. সজিব (১৩), মো. ফাইজুল ইসলাম (১৪) ও মো. সাইদুল (১৬)। দণ্ড পাওয়া সবাইকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। শিশুদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। রায় ঘোষণার পরে দণ্ডপ্রাপ্ত শিশুদের স্বজনদের আহাজারিতে কোর্ট এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
এ মামলার চার্জশিটে থাকা শিশু মো. শফিকুল ইসলাম ঘরামী, মো. নাঈম ও মো. রবিউলকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর পিপি মোস্তাফিজুর রহমান।
জানা যায়, নিহত সুজন হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ২০২০ সালের ২৬ মে রাত ১০টায় শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় অভিযোগ করেন।
হত্যার শিকার সুজন হৃদয় (১৬) বরগুনা সরকারি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট থেকে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। ২০২০ সালের ২৫ মে বিকাল অনুমান সাড়ে ৫টায় ঈদের দিন তার কিছু বন্ধুসহ বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া বাজারসংলগ্ন উত্তর পাশে জাফর সিকদারের বাড়ির পূর্বপাশে পায়রা নদীর তীরে চায়না প্রজেক্টের ব্লক ইয়ার্ডে ঘুরতে যায়। পূর্বশত্রুতার জেরে রফিক কাজীর নির্দেশে হেলাল মৃধার নেতৃত্বে সব আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে লোহার রড, লাঠি ও ইট দিয়ে হৃদয়সহ তার বন্ধুদের পথরোধ করে মারপিট করে। আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সুজন হৃদয়কে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পর দিন ২৬ মে সকাল ৭টার দিকে হৃদয়কে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওই দিন সাড়ে ১০টায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় ২৬ মে রাতে সুজন হৃদয়ের মা বরগুনা থানায় মামলা করেন।
বরগুনা থানার পরিদর্শক শরজিৎ কুমার ঘোষ মামলাটির তদন্ত করে ১৬ জন শিশুর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বাদী নারাজি দিলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহবুব আলম ৩ জনকে অন্তর্ভুক্ত করেন। শিশু আদালতে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৮ জন সাক্ষ্য দেয়।
অপরদিকে একই তারিখে ৯ জন প্রাপ্ত বয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে ওই একই তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের জেলা ও দায়রা আদালতে বিচার শুরু হয়নি।
এ রায়ে বিশেষ পিপি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, একটি যুগান্তকারী রায় হয়েছে। রায়ে রাষ্ট্র এবং বাদী সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, আমি আশা করি প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদেরও শাস্তি হবে।
বাদী ফিরোজা বেগম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমার জীবনের নিরাপত্তা নেই।
তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। মামলা তুলে না নিলে আমার ছেলের মতো আমাকেও হত্যা করবে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, তিনি আমার বোন, তার একটি ছেলে আছে। আমার একটিমাত্র ছেলেকে আসামিরা দিবালোকে হত্যা করে আমার কোল খালি করেছে। আমার স্বপ্ন ছিল হৃদয় বড় হয়ে চাকরি করে আমাকে ঘর তুলে দেবে। আজ আমি মানুষের বাড়ি কাজ করে খাই। আমার স্বামী রিকশাচালক।