চট্টগ্রাম বাংলাদেশ

লোমহর্ষক বর্ণনা পুত্রবধূর ‘তখন আমার আবেগ কাজ করছে, বিবেক না’

news 1696237938331
print news

গ্রেপ্তারের পর তল্লাশিতে অংশ নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে শ্বশুরকে দশটুকরো করে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন পুত্রবধূ। আনারকলি নামের ওই নারী চট্টগ্রামে নির্মমভাবে খুন হওয়া মো. হাসানের ছোট ছেলের স্ত্রী।নিহত হাসানকে তারই স্ত্রী-ছেলেরা মিলে প্রথমে টুকরো টুকরো করেন। এরপর হত্যার ঘটনা মুছে দিতে মরদেহের সেই খণ্ডগুলো কয়েকভাগে ভাগ করে ফেলে দেন খাল ও নালায়।সেই হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ না থাকলেও লাশের টুকরো ফেলায় হাসানের ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে সহযোগিতা করেছিলেন তার স্ত্রী আনারকলি।তিনি জানান, সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন আনারকলি, তবে আলামত গোপনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত উপাদানের যোগানও তিনি দিয়েছেন। তবে তিনি এসব কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন।তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের পেছনে ময়লার স্তূপ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধামা উদ্ধার করা হয়েছে। আনারকলি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পাথরের ব্লকের ফাঁকে মাথাটি ফেলে দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন। পিবিআই টিমের সঙ্গে থাকা আনারকলি সেদিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন সাংবাদিকদের কাছে।তিনি বলেন, ‘না আমি নিজেকে নির্দোষ দাবি করতেছি না। আমি যখন জানি তখন আমি নিজেকে কেন নির্দোষ দাবি করব। আমি দোষী। আমি কি আপনাদের একবারও বলেছি আমি নির্দোষ। তখন আমার আবেগে কাজ করছে, বিবেকে কাজ করে নাই। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আদালত হচ্ছে মানুষের বিবেক। তখন যদি আমার বিবেকটা কাজ করত তাহলে আমি এত বড় পাপের মধ্যে জড়িয়ে যেতাম না। আমার সন্তানের কপালে যা আছে তাই হবে।’এর মধ্যে মাথা ছাড়া হাসানের শরীরের অন্য সব অঙ্গের খোঁজ মিলেছে। আনারকলিকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেই মাথার সন্ধানে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা।

প্রথমে রোববার ভোরে পুত্রবধূ আনারকলিকে নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের টানেলের প্রবেশমুখ এলাকায় যায় পিবিআইয়ের টিম। সেখানে রাখা পাথরের ব্লকের মধ্যে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু বেলা গড়াতেই জোয়ার আসায় সেই তল্লাশি বাধাগ্রস্থ হলে ফিরে আসে পিবিআই। পরে জোয়ার নামার পর বিকেলে গিয়ে আবারও তল্লাশি চালানো হলেও হাসানের মাথার খোঁজ মেলেনি। আজ সোমবার ফের সেখানে গিয়ে তল্লাশি চালায় পিবিআই। কিন্তু এবারও হতাশ হতে হয়েছে তাদের। জোয়ার চলে আসায় ফিরে আসতে হয়েছে। তবে এখনই হাল ছাড়ছে না পিবিআই।

গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেটে একটি ট্রলিব্যাগ পায় পুলিশ। কফি রঙের সেই ট্রলিব্যাগে মানবদেহের ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ ছিল। এই ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির বাদী হয়ে এক বা একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচনে মাঠে নামে পিবিআই।

আঙুলের ছাপ ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে প্রথমে হাসানের পরিচয় নিশ্চিত হন পিবিআই। এরপর আকমল আলী রোড এলাকায় হাসানের ছোট ছেলের বাসার সন্ধান পান তারা। পরে বাসার আশপাশের সিসি ক্যামরার ফুটেজ সংগ্রহের পর পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় পিবিআইয়ের কর্মকর্তাদের কাছে। তারা সিসি ক্যামেরায় দেখতে পান হত্যার পর ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে শরীরের অংশবিশেষ বস্তায় ভরে বের করছিলেন হাসানের ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পিবিআই জানতে পারে, হত্যাকাণ্ডে শুধু ছোট ছেলে নয় ওই বাসায় হাসানের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম, বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও ছোট ছেলের স্ত্রী আনারকলিও ছিলেন। হাসানের অবস্থানও ছিল সেখানে।

মূলত হাসানকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রমাণ গায়েব করতে। তবে পিবিআইয়ের তদন্তের জালে হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলে আটকা পড়ার পর বেরিয়ে আসে কোথায় ফেলা হয়েছে লাশের খণ্ডাংশ।

গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় বাবার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনারকলিকে। তবে সফিকুর এখনও পলাতক আছেন। শনিবার আনারকলিকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। ইতিমধ্যে বড় ছেলে দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *