খেলায় মন দিতে চায় বাংলাদেশ


এশিয়া কাপ থেকে বিশ্বকাপ-এ সময়ে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘটনাকে সার্কাস বললে ভুল হবে না। এটি অবশ্য আমার কথা নয়, দেশের ক্রিকেটের ভক্ত ও ক্রিকেট বোদ্ধারা তাই মনে করেন। এমনটা ভাবার কারণও আছে। তামিম ইকবালের অবসরে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফিরে আসা, ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো ফের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়া নিয়ে নাটক আর নাটকীয়কতার যেন শেষ নেই। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানের অধিনায়ক হওয়া এবং তামিমের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসা। তার না চাওয়াতে জাতীয় দলের লজিস্টিক ম্যানেজার তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবালকে বাদ দেয়ার ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয় দেশের দুই অন্যতম মহাতারকা নিজেদের মতো করে পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য রাখেন। তবে ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে এসে সেই সব স্মৃতি ভুলে যেতে চায় বাংলাদেশ। মাঠ ও বাইরের বিতর্কিত ঘটনা বা সার্কাস যাই হোক না কেন সেখান থেকে বের হয়ে মনোযোগ দিতে চায় ক্রিকেটেই। গতকাল ধর্মশালা স্টেডিয়ামে ফুরফুরে মেজাজেই অনুশীলন করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
আর সেই জন্যই ক্রিকেটারদের সংবাদ মাধ্যম থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় মনোযোগটা ক্রিকেটেই থাকুক। যেহেতু আমাদের ফোকাস বিশ্বকাপ খেলার দিকেই, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ম্যাচের আগে একজনই কথা বলুক। আর ছেলেরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটু দূরে থাকলে মনে হয় মনোযোগ আরো ভালো দিতে পারবে।’
গোহাটিতে বিশ্বকাপের প্রস্ততি ম্যাচ খেলতে ভয়ঙ্কর চাপ নিয়েই গিয়েছিল বাংলাদেশ। মাঠের হার আর বাইরের বিতর্ক ভুলে কতটা ভালো করতে পারবে টাইগাররা তা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ এক জয় দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও দারুণ লড়াই করে টাইগার বোলাররা। ছোট পুঁজি নিয়েও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে বাংলাদেশ। এবার বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ধর্মশালাতেও চলছে ওই প্রস্তুতি। কয়েকদিন আগেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। এরপর অবশ্য হারিয়েছে এশিয়া কাপে। সুজন মাঠে নামতে চান ওই স্মৃতিকে সঙ্গী করেই।
তিনি বলেন, ‘শেষ পারফরম্যান্সের কথা যদি চিন্তা করি শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছি। আমরা একটি ইতিবাচক নোট নিয়ে শুরু করছি। আফগানিস্তানের খুব ভালো বোলিং অ্যাটাক আছে। তাই বলে যে ওদের হারানো যাবে না, তা না। অথবা ওরাও আমাদের হারিয়ে দেবে এমনও না।’
২০০৭ বিশ্বকাপে খেলেছে এমন ক্রিকেটার বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনও দলে নেই। সেই দলে খেলা তরুণ সাকিব আল হাসান এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। আছেন মুশফিকুর রহীমও। এই অভিজ্ঞদের নিয়ে দলকে এগিয়ে রাখছেন সুজন। তিনি বলেন, ‘সেখান থেকেই আমার আশাটা। এবার না হলে আর কখন? আমাদের পুরো অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেল আছে। অনেক ভালো পারফর্মাররা আছে। হয়তো কয়েকদিন আগেও চিন্তা ছিল শান্ত-হৃদয়রা বেশিদিন হয়নি জাতীয় দলে খেলছে। কিন্তু তারা পারফর্ম করেছে। সেজন্য আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি।’ দলের শক্তি নিয়েও দারুণ আশায় টিম ডিরেক্টর সুজন। আর দলকেও দেয়া হচ্ছে দারুণ স্বাধীনতা। তিনি বলেন, ‘মিরাজ ভালো অলরাউন্ডার হয়ে গেছে। এটার প্রমাণ প্রতিদিন রাখছে। সাকিব, মুশফিক আছে অভিজ্ঞ, রিয়াদ আছে। আমাদের ইন্টারেস্টিং পেস বোলিং আছে। বিশ্বেই মনে হয় দ্বিতীয় স্ট্যাট বেজে। শুধু আমাদের এক্সপোজ করতে হবে নিজদেরকে। ওই ফ্রিডম নিয়ে খেলতে হবে। আমি চাই ছেলেরা ওভাবে ফাইট করুক মাঠে। আমি মনে করি আমাদের হারানোরও কিছু নাই, চাপেরও না । আমরা যদি ওই মন-মানসিকতা নিয়ে খেলতে পারি, যদি এক্সপোজ করতে পারি ঠিকমতো। চাপ আসবে, কিন্তু আমি প্রেশারটা ওভাবে বলছি ফ্রিডম নিয়ে খেলতে হবে। তাহলে আমাদের সাফল্য আমাদের কাছে আসবে অবশ্যই। আমার মনে হয় দলের অবস্থা খুবই ভালো। সাকিবও জয়েন করেছে দলের সঙ্গে, প্র্যাক্টিস করেছে। দারুণ ইনটেনসিটি আছে। ছেলেরা পাম্পড আপ ভালো খেলার লক্ষ্যে। ধর্মশালায় আমাদের অনেকেরই খেলার অভিজ্ঞতা আছে।’
তবে আশা, স্বপ্ন থাকলেও প্রত্যাশার চাপ নিতে চান না সুজন। তিনি বলেন, ‘আমি এর আগেও বলেছি, প্রত্যাশা বলবো না। আমি মনে করি আমাদের ভালো খেলার অনেক সুযোগ আছে। আমরা ভালো কিছু করতে চাই, আমরা সেমিফাইনাল নক আউট স্টেজে যেতে চাই। আমি জানি কতটা কঠিন। অনেকে মানতেও নারাজ বাংলাদেশ কীভাবে পারবে। কিন্তু এটা ক্রিকেট খেলা। আমাদের সামর্থ্য আছে। যথেষ্ট ভালো ব্যাটার আছে, মুশফিক-সাকিবের মতো ব্যাটার মিডল অর্ডারে ব্যাট করবে। আমরা চ্যালেঞ্জ করার মতো দল একটা। এর আগেও প্রতিটা দলের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ জেতার রেকর্ড আছে। অনেকে বলছিল আমরা প্রস্তুত না কিন্তু আমরা প্রস্তুত আছি।’
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে ইনজুরিতে পড়েন অধিনায়ক সাকিব ও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তবে তাদের নিয়ে শঙ্কা নেই। দু’জনই খেলতে পারবেন প্রথম ম্যাচে। তিনি বলেন, ‘সবাই ফিট আছে। কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো আছে। সাকিব ভালো আছে। ওকে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে খেলাতে পারতাম, খেলাইনি। ওটাই কনসার্ন ছিল। সে পুরোপুরি সুস্থ।’