চবির বিএনসিসি বিমান শাখার চড়ুইভাতি


মোঃ আমিনুল ইসলাম :
শনিবার,আশ্বিন মাসের ১৬ তারিখ। সকালের আকাশটা কেমন যেনো মেঘাচ্ছন্ন, মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি বিমান শাখার আয়োজনে চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান । ভাবছিলাম বৃষ্টি কারণে অনুষ্ঠানটি পন্ড হয়ে যায় কিনা। তারপরও সেজেগুজে বের হলাম অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য। যেতে যেতে সূর্যি মামার উদয়। উষ্ণ আকাশ মৃদু মৃদু বাতাস বইছে। প্রকৃতি সেজেছে সজীবতায়। প্রকৃতির এই সজীবতায় নানা বিস্ময় ও উদ্দিপনা নিয়ে চবির বোটানিক্যাল গার্ডেনে আবির্ভূত প্রায় চল্লিশের মতো ক্যাডেট ।
অনেক জল্পনা কল্পনার পর আজ আমাদের চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান । নানা ব্যাস্ততার কারণে চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়ে উঠেনি । আবার সামনে নতুন ব্যাচ আসতেছে। জুনিয়র আসার আগে আমাদের চড়ুইভাতি করার প্রয়াস চলছে। সিইউও স্যার সবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত দিলেন এখনই মোক্ষম সময় চড়ুইভাতি করার। এবং এরপর চড়ুইভাতির দিন ক্ষন ঠিক করা হলো । এরপর পরই সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল চড়ুইভাতি বাস্তবায়নের কাজে। চড়ুইভাতি আয়োজনের অন্যতম কাজ হলো সবার থেকে চাঁদার টাকা উত্তোলন করা এবং সেই সাথে অন্যান্য ডেকোরেশন গুলা ম্যানেজ করা। সেই কাজে দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের সিইউও তারেক মাহমুদ স্যার।
চড়ুইভাতির আগেরদিন থেকে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে সকলকে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। চড়ুইভাতি কে ঘিরে জাঁকজমক ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা চলছে । নানারকম বাহারি রঙ আর ককশিটের উপর সুনিপুণ কারুকার্যে অতিচমৎকার ভাবে তুলে ধরা যায় সেটার ও পরিকল্পনা চলছে। দায়িত্ব অনুযায়ী সকলে যে যার মতো কাজ শুরু করল । চড়ুইভাতির আগের দিন রাত বারোটা পর্যন্ত কাজ অব্যাহত ছিল এই কঠোর পরিশ্রম ছিলেন সিইউও তারেক মাহমুদ স্যার, সার্জেন্ট কাফি স্যার ও ইসমাইল স্যার এবং ক্যাডেটদের মধ্যে ছিলেন জাহিদ, মিশকাত,ও কৌশিকী । গ্রুপে স্যারদের কার্যক্রমের ছবি দেখে এক্স সিইউও মোশাররফ স্যার ও আতিক স্যার এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই চড়ুইভাতি বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকা অসামান্য।
চড়ুইভাতির দিনটির কার্যক্রম সফল করতে আমরা স্যারের নির্দেশনায় সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছিলাম। সবাই মিলে একসাথে উৎসবমুখর পরিবেশে বাকিদের সহায়তায় জমে উঠলো চড়ুইভাতি।
গল্প, আড্ডা ও ছবি তোলার কাজ চলতে থাকল সমানতালে। এরপর অনুষ্ঠানটিকে আরো মনমুগ্ধকর করতে শুরু হলো ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পর্ব। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করছিলেন এক্স সিইউও আতিক স্যার । এবং অনুষ্ঠানটি সিইউও তারেক মাহমুদ স্যারের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হলো । এবার ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পর্ব শুরু হবে প্রথম খেলাটি ছিল ব্যাঙের লাফ । খেলাটি আমরা সকলেই উপভোগ করলাম। এরপর দ্বিতীয় খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। এইবারের খেলাটি হলো পুশ আপ প্রতিযোগিতা । কে কতক্ষণ হাতের উপর নিজের শরীরকে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। অবশেষে খেলাটি শুরু হলো এবং সকলকে হারিয়ে ক্যারেট আরাফাত প্রথম স্থান অধিকার করেছে । এরপর শুরু হলো বিস্কুট দৌড়ের প্রতিযোগিতা এবং এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে আমিরুল মুমিনিন। এবং এই খেলার মধ্যে দিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ১ম পর্বের ইতি ঘটে।
দুপুর ২:৩০ মিনিটের দিকে শুরু হলো ভোজন পর্ব। রান্নাটা খুব সুস্বাদু হয়েছে সকলেই তৃপ্তি করে খেলাম। খাবার পরিবেশনার দায়িত্বে ছিলাম আমি এবং আমার সাথে সহযোগিতা করেছিলেন ক্যাডেট ইসমাইল ও মিশকাত।সকলকে খাবার পরিবেশনা করে, আমরা খেতে বসেলাম। পাশাপাশি গল্প, একে অপরের সাথে খোশগল্পে মেতে রোমাঞ্চকর এক মুহূর্ত পার করছে সবাই। ১ বছরের পথচলার সমাপ্তির ঠিক আগ মুহুর্তে এমন রোমাঞ্চকর আয়োজনে মাতোয়ারা সবাই। যেন নিজ পরিবারের বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে। সবার অনভূতি প্রকাশে উঠে এল এমন কথা। সব মিলিয়ে শৈশবের সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোতে যেন ফিরে গেল সবাই আরেকবার।
সকলের খাওয়া শেষ। এইবার ফটো সেশনের পালা, সকলে মিলে স্যারদের সাথে গ্রুপ ফটো সেশনে যোগ দিয়েছি। এই যেনো এক অনবদ্য সৃষ্টি । এই চড়ুইভাতির মাধ্যমে সিনিয়র স্যারদের সাথে ভালোবাসার বন্ধন যেনো আরো দৃঢ় হলো ।
ফটো সেশন শেষে আবারা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। এইবার মেয়ে ক্যাডেটদের খেলার প্রতিযোগিতা শুরু হবে, তাদের খেলাটি ছিল বাস্কেটের মধ্যে বল ফেলা। অতঃপর খেলাটি শুরু হল খেলাটি পয়েন্ট সিস্টেম থাকার কারণে অনেকক্ষণ ধরে খেলাটি অব্যাহত ছিল অবশেষে সকলকে হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন ক্যাডেট তামান্না।
এরপর ছেলেদের বাস্কেট বল খেলার প্রতিযোগিতা শুরু হলো। অনেকই ফেলতে সফল আবার অনেকেই ব্যার্থ ।সকলকে হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন সার্জেন্ট ইসমাইল স্যার। এরপর ছেলেদের আরেকটি আকর্ষণীয় খেলা ছিল সেটা হচ্ছে মোরগ লড়াই । এবং সকলকে হারিয়ে, এই মোরগ লড়াইয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে ক্যাডেট মিশকাত। এরপর মেয়েদের আরেকটি খেলা বাকি ছিল, সেটি হল বালিশ নিক্ষেপ। অনেকক্ষণ ধরে খেলাটি চলতে থাকলো এবং অবশেষে ১ম স্থান অধিকার করেছে ক্যাডেট মাহি। সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ইতি ঘটল। এবং আজকের অনুষ্ঠানটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল র্যাফেল ড্র। র্যাফেল ড্র এ প্রথম হয়েছিল আমাদের ক্যাডেট কৌশিকি এর ছোট বোন।
এইবার পুরস্কার বিতরণীর পালা। পর্যায়ক্রমে সকল খেলার পুরস্কার খেলায় বিজয়ীদের মাঝে বিতরণ করা হলো করা হয় । পুরস্কার বিতরণ করেন এক্স সিইউও আতিক স্যার এবং সিইউও তারেক মাহমুদ স্যার ও সিইউও রোমানা। এবং এরপর এক্স সিইউও আতিক স্যারের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
আজকের এই অনুষ্ঠানটিকে বাস্তবায়ন করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের প্রতি আমরা সকলেই কৃতজ্ঞ। সকলের অংশগ্রহণে এই আয়োজন হয়ে উঠেছিল আরও বেশি উৎসবমুখর। আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং জমা হবে স্মৃতির পাতায়।
ক্যাডেট মোঃ আমিনুল ইসলাম
বিএনসিসি বিমান শাখা , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
*গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।