বগুড়ায় ভাঙছে বাঙালি নদীর পাড় নেপথ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন


বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ আশাদুজ্জামান আশাঃ বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার চককল্যানীতে নদীর পাড় ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি চলে যাচ্ছে নদীর গর্ভে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপাড়ের প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষ।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে শেরপুর উপজেলার বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চককল্যানী গ্রামের রাস্তাসহ প্রায় ১০০ মিটার ভূমি নদীতে ধ্বসে গেছে। নদীগর্ভে ধসে গেছে বেশ কিছু ফসলি জমি। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের প্রায় পঞ্চাশটি গ্রামের মানুষ দুশ্চিন্তায় দিন অতিবাহিত করছে। ১৯৮৭ সালে সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিআইডিপি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ধুনট উপজেলার বধুয়াবাড়ি থেকে শুরু করে শেরপুর উপজেলার সাহেববাড়ি ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা প্রতিরোধক বাঁধ নির্মাণ করে। যে বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করে শেরপুর এবং ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি, পেঁচিবাড়ি, বিলকাজুলি, জালশুকা,চানদিয়ার, কুমিরিয়াডাঙ্গা, ভুবনগাতি, চকধলি, চককল্যানী, গুয়াগাছি, জয়লা জুয়ান, কল্যানী, বেলগাছি, জয়নগর, সুঘাট ইউনিয়নের কিছু গ্রাম সহ প্রায় ৫০ গ্রামের মানুষ। বন্যার দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায় প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ।
সরেজমিনের পরিদর্শন কালে এলাকাবাসী জানায় প্রায় ১০ বছর ধরে এই বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙ্গন দেখা দেয়। বাঁধে বসবাসকারী প্রায় পঞ্চাশটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানায় তারা। চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় এলাকাবাসী। তারা জানান, প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয় বাঙালি নদীর এই অংশ থেকে। ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি পেলেও পাড় ছাপিয়ে পানি বাইরে যেতে পারে না। ফলে বাঁধের উপর পানির চাপ বৃদ্ধি পেয়ে স্রোত বেড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়। এ পর্যন্ত বসতবাড়ি, রাস্তা এবং ফসলি জমি মিলিয়ে প্রায় ২৫০ মিটার জমি এবং অন্তত ৫০ টি ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এই বালু খেকোদের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অনবরত বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে তারা। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা । ভুক্তভোগীরা বলেন, প্রায় দশ বছর ধরে এমন প্রতিকূল অবস্থার সাথে প্রতিযোগিতা করে জীবন নির্বাহ করলেও বাঁধের ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দ্রুত মেরামত এবং স্থায়ী সমাধান গ্রহণ না করলে বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি লোকালয়ের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়তে পারে এবং দুর্বল বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
সম্প্রতি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। দ্রুত বাঁধটির সংস্কারসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন উপজেলা প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম বলেন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা করছি।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।ধ্বসে যাওয়া অংশ মেরামত করা হবে।