বাংলাদেশ শিক্ষা সিলেট

মৌলভীবাজারে আট বছর পর বিদ্যালয়ে ফিরলেন প্রাথমিক শিক্ষক

10 1 750x430 1
print news

সিলেট প্রতিনিধি :  এক দুইদিন নয়, দীর্ঘ আট বছর পর নিজ কর্মস্থল সাতবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিরলেন শিক্ষক বিমলেন্দু গোস্বামী। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, এতদিন কোথায় ছিলেন তিনি? কেন বিদ্যালয়ে আসেননি? জানা যায়, দীর্ঘ ৮ বছর স্কুলে না গিয়েও বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাতবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিমলেন্দু গোস্বামী। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যাবৎ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিগত ০৬/০৪/২০১৫ সাতবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ে যাননি।

সাতবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিমলেন্দু গোস্বামী স্কুলে না গিয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বসে অফিসের দাপ্তরিক কাজ করেছেন। তাছাড়া বিদ্যালয়ের নামে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং ভাতা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তিনি প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রয়োগ করেননি। এতে তিনি নানাভাবে লাভবান হলেও বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষাগ্রহণ থেকে হয়েছে অনেকটা বঞ্চিত।

একটি সূত্রে জানা যায়, তিনি এ বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসার পূর্ব থেকেই উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাজ করছেন। তার একজন নিকট আত্মীয় উপজেলা শিক্ষা অফিসের একজন দায়িত্বশীল পদে থাকায় তিনি এ সুযোগ পেয়েছেন।

এ ব্যপারে প্রতিকার চেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর গত ২৫/৬/২০২৩ইং লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান। কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে সাতবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায় সহকারী শিক্ষক বিমলেন্দু গোস্বামী ৪র্থ শ্রেণির গণিতের ক্লাস নিচ্ছেন।

শিক্ষক বিমলেন্দু গোস্বামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসের মৌখিক নির্দেশে অফিসে দাপ্তরিক কাজ করার জন্য আমাকে নেওয়া হয়েছিল। ৮ অক্টোবর রোববার থেকে আবার আমার কর্মস্থলে প্রেরণ করা হয়েছে। আমি এখন আমার কর্মস্থলে মনোনিবেশ করেছি।

দীর্ঘদিন কর্মস্থল রেখে অন্যত্র থেকেও বেতন ভাতা গ্রহণ করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কর্মস্থলে কার্যসূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আর ওখানে আমাকে প্রায় দিনই সন্ধ্যা, এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে।

কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার অবর্তমানে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা এসে পাঠদান করেছেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়নি নিশ্চয়। তিনি আরও বলেন, আমিতো চাইনি সেখানে যেতে। আমাকে নেওয়া হয়েছিল। এখানে আমার কী দোষ।

সহকারী শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র দাস বলেন, আমি ২০২০ সালে এই স্কুলে যোগদানের পর করোনার জন্য বন্ধ হয়ে যায় পাঠদান। আমি উনার বিষয়টা শুনেছি সহকারীদের কাছ থেকে। তবে উনার অবর্তমানে বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য স্কুল থেকে শিক্ষকরা এসে পাঠদান করিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিমলেন্দু গোস্বামীর স্থলে পাঠ দানকারী দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমর রঞ্জন দাস চৌধুরী বলেন, মৌখিক নির্দেশ পেয়ে আমার প্রধান শিক্ষক আমাকে সাতবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখানে আমি ৭ মাস পাঠদান করেছি। প্রধান শিক্ষক মো. আকিদুজ্জামান বলেন, রিক্যুইজিশনের মাধ্যমে বিমলেন্দু গোস্বামীকে উপজেলায় নেওয়া হয় কাজের জন্য। তার অবর্তমানে কখনো আমরা আবার কখনো অন্যান্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক এসে পাঠদান করিয়েছেন। বিদ্যালয় সভাপতির আবেদনের প্রেক্ষিতে আবার ফিরে এসে দু’দিন ধরে নিয়মিত পাঠদান করছেন।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) অরবিন্দু কর্মকার বলেন, জনবল সংকটের কারণে সাতবাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক বিমলেন্দু গোস্বামী মূলত এখানে ছিলেন। উনার স্কুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উনাকে গত ৮ তারিখ থেকে উনার স্কুলে উনি দায়িত্ব পালন করতেছেন। আমি যতটুকু জানি উনাকে যখন আনা হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে উনি ওখানে সংযুক্ত ছিলেন। লিখিত আদেশ না থাকায় সঠিকভাবে আমি সবকিছু বলতে পারছি না। কারণ তখনতো আমি এখানে ছিলাম না।

 

*গুরুত্বপূর্ণ  সব সংবাদ ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়।
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *