বরিশাল বাংলাদেশ শিক্ষা

কলাপাড়ায় ইউএনও’র প্রত্যয়নে অধ্যক্ষ হলেন দুইবার জেল খাটা জামায়াত নেতা!

মোজাহারউদ্দিন বিশ্বাস কলেজ
print news

নাশকতার পরিকল্পনা ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে ২ বার জেলে থাকা জামায়াত নেতাকে সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠিতে প্রতিস্বাক্ষর করে তা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে সাগর পাড়ের কলাপাড়া উপজেলায় চলছে তোলপাড়। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে এটি করার অভিযোগ উঠেছে ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কলাপাড়া মোজাহারউদ্দিন বিশ্বাস (এমবি) ডিগ্রি কলেজ সরকারি হয় ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট। এই কলেজের সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন মোল্লা লিয়াকত আলী। ৯ অক্টোবর তার চাকরির বয়সসীমা পূর্ণ হলে তড়িঘড়ি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খান মোহাম্মদ আবদুল খালেক ফারুকীকে। এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয় মাউশির মহাপরিচালক বরাবরে। বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় হয়ে ওঠে উপজেলাজুড়ে। কারণ উপজেলা জামায়াতের আমির থাকাবস্থায় সরকারবিরোধী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পরপর ২ বার গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিলেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে তদন্তাধীন রয়েছে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মামলা।

কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি বিপুল হালদার বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে বিস্মিত হয়েছি। ২০১২ সালে প্রথম তাকে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ। কয়েকদিন জেলে থাকার পর মুক্তি পায়। ২০১৬ সালের ১৪ মে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন, নাশকতার পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্টের অভিযোগে দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতার হন ফারুকী। তখনই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবি ওঠে। কিন্তু তৎকালীন প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় তা হয়নি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে কলেজের অর্থ আত্মসাতের একটি মামলাও (নং-০২/২৩) বিচারাধীন। এমন একজন লোককে কী করে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হলো সেটাই প্রশ্ন। আমি মনে করি সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন তাই পরিকল্পিতভাবে কাজটি করা হয়েছে।’

ফারুকীর এই নিয়োগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব হাওলাদারও। তিনি এই নিয়োগ বাতিল দাবি করেছেন।’

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘ফারুকী যখন জেলে যান তখনো নানা কথা বলে তার চাকরি বাঁচানো হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ ৫ জনের মধ্যে যে কোনো একজনকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। জ্যেষ্ঠ হলেই যে সে সব দিক দিয়ে যোগ্য হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্যই সরকার ৫ জনের মধ্যে যে কোনো একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ রেখেছে। তাছাড়া ফারুকীর চাকরির মেয়াদ আছে ৪-৫ মাস। স্বল্প এই সময়ের জন্য তাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণ আছে।’

অভিযোগের বিষয়ে খালেক ফারুকী বলেন, ‘এটা ঠিক যে আমি এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে ছিলাম। ২০১৮ সালে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা জামায়াতের আমির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এরপর থেকে আমার আর কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।’

পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘তিনি (ফারুকী) যে জামায়াত করতেন বা নাশকতার মামলায় জেলে ছিলেন এটা জানতাম না। দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় নির্বাচন বিষয়ক এক প্রশিক্ষণে ২ দিনের জন্য কলাপাড়ার বাইরে ছিলাম। ফেরার পর সাবেক অধ্যক্ষসহ কলেজের ১৫-২০ জন শিক্ষক এলে তাদের কথামতো চিঠিতে স্বাক্ষর করি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে ফারুকীর জামায়াত সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানতে পারি। সাবেক অধ্যক্ষ যদি বলে থাকেন যে, আমার সঙ্গে আলোচনা করে তাকে অধ্যক্ষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে; তবে তা সত্য বলেনি। মাউশিকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। নতুন কাউকে অধ্যক্ষ করার উদ্যোগ নেব।’ সূত্রঃ যুগান্তর

 

* দেশ  বিদেশের  সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।

 

অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়।
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *