অনুসন্ধানী সংবাদ

ঘুষের টাকায় কোটিপতি মির্জাগঞ্জ শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক

71401 mirrjaganj
print news

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই অফিস সংশ্লিষ্টদের কাছে এখন মূর্তিমান আতঙ্ক।

অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী শিক্ষকরা সম্মিলিতভাবে গত ১৩ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এবং গত ১৭ আগস্ট বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী (কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) পদে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি পান। এরপর থেকেই তার ঘুষ ও দুর্নীতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ উপজেলার মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকরা।ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল টাকার মালিক হওয়া ছাড়াও নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রয়েছে তার কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দের তালিকার হার্ডকপি তার অফিসে জমা নেওয়ার সময় তাকে প্রতি শিক্ষার্থী বাবদ ৫০ টাকা হারে ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়াও তিনি জাতীয় কারিকুলামের রূপরেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতা থেকে প্রকাশ্যে ৩শ’- ৫শ’ টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করেন। এর বাইরে বিভিন্ন স্কুলের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীকে শিক্ষক দেখিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সম্মানীসহ অফিসের বিভিন্ন খরচের নামে প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক আদায় করেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, উপজেলার সুবিদখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় দার দুইতলা বাড়ি রয়েছে। তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক ও মাদ্রাসার সুপার নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁস করে মেধা তালিকায় প্রথম বানিয়ে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়া বাবদ ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকাসহ-প্রধান শিক্ষক/সহ-সুপার নিয়োগের জন্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও অফিস সহকারী নিয়োগে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন।

এ ছাড়াও শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তি, যে কোনো সংশোধনীর জন্য, বিএড স্কেল ও উচ্চতর স্কেলের অনলাইনে আবেদন ফরোয়ার্ড করতে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উক্ত হিসাবরক্ষক ঘুষ নিয়ে থাকেন।

জানা গেছে, তিনি বিভিন্ন উপায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে নিজ উপজেলায় প্রায় ৬ বছর ধরে ঘুষ ও নিয়োগে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। চাকরি হারানো কিংবা বিভিন্ন হয়রানির ভয়ে কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। জাতি গড়ার কারিগররা তার কাছে জিম্মি হয়ে আছেন।

আরও অভিযোগ আছে যে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক লাগামহীনভাবে এসব ঘুষ, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্তের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায় তিনি ছুটিতে আছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক  জানান, অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা. মুজিবুর রহমান জানান, মির্জাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি হয়ে নরসিংদী চলে গেছেন। আলোচ্য হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান আছে ।

 

* দেশ  বিদেশের  সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *