দৌলতখানে এলডিডিপি প্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ


ভোলা প্রতিনিধি : ভোলার দৌলতখানে সরকারি অর্থায়নে মুরগির শেড নির্মাণে, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) পিজি সদস্যের প্রশিক্ষণে ব্যাপক অনিয়ম এবং দূর্ণীতির অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, যে কাজগুলো উপকারভোগীদের সম্পাদন করার জন্য ব্যাংক হিসাবে টাকা দেয়া হয়েছিল। সেই টাকা কৌশলে প্রকল্পের কর্মীরা হস্তগত করে শেড নির্মাণ শুরু করেন। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) এর অর্থায়নে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আগষ্ট/২৩ ও সেপ্টেম্বর /২৩ মাসে ১ দিন করে আলাদা ২টি প্রশিক্ষণের বরাদ্দ এলডিডিপি প্রকল্প থেকে সেপ্টেম্বর মাসে দেওয়া হয় দিবস ৭/৮ আলাদা আলাদা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে একদিনে। বাকি একদিনে টাকা আত্মসাৎ করেছে দৌলতখানের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এনিয়ে নানা অনিয়মে উপকারভোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছে তারা। আরো জানা গেছে, (এলডিডিপি) প্রকল্প কর্তৃক উপজেলা পর্যায়ে গঠিত প্রডিউসার গ্রুপের (পিজি) সদস্যদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট সাপোর্টের আওতায় মুরগি পরিবেশবান্ধব শেড (ঘর) নির্মাণের জন্য এ বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পের অর্থ দিয়ে ঘর নির্মাণের লক্ষ্যে পিজি সদস্যদের সঙ্গে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সম্পাদন করেন ওই প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। প্রতিটি শেড নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ২০ হাজার করে টাকা। দৌলতখান উপজেলার মোট ৭৭ জনকে দেয়া হয় সর্বমোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অ্যাকাউন্ট-পে এই চেকের টাকা মালিক ছাড়া প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষে উত্তোলন সম্ভব না।
এদিকে, প্রকল্পের কর্মকর্তারা সদস্যদের সদস্য পদ বাতিল করার হুমকি দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, জোরপূর্বক সদস্যের চেকে স্বাক্ষর করিয়ে পিজি সদস্যদের ম্যানেজ করে এলডিডিপি প্রকল্পের এলএসপি পারভেজ, প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তা ডা. ভূবন চন্দ্র হালদার ও এলডিডিপি প্রকল্পের অফিসার কৌশলে টাকাগুলো নিজেদের আয়ত্তে নেন। বরাদ্দের এই টাকা দিয়ে সদস্যরা নিজেরাই নকশা অনুযায়ী মুরগির ঘর তৈরী করার নির্দেশনা থাকলেও নিয়মবহির্ভূত ভাবে কথিত লোক দ্বারা ৮-৯ হাজার টাকা খরচ করে অতি নিন্মমানের মালামাল দিয়ে ঘর তৈরী করতেছেন। খড়ি হিসেবে বিক্রি হবে এমন সব কাঠ দিয়ে শেডের বাটাম বানানো হয়। এতে উপকারভোগী সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাদের দূর্নীতির কারনে ভেস্তে যেতে বসেছে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দৌলতখানের মুরগী পালন নারী খামারিদের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রকল্প।জাফর নামে এক সুবিধাভোগীর ছেলে জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে এলডিডিপি প্রকল্পের একদিনের প্রশিক্ষণে ৪/৫ টি স্বাক্ষর নিয়েছে। দুইদিন প্রশিক্ষণ দেয়নি। মন মতো তারা স্বাক্ষর নিয়েছে। কেউ কেউ বলে স্যাররা আমাদের স্বাক্ষর নিজেরা দিয়েছে। এতো স্বাক্ষর কই দিছে বুঝলাম না। এছাড়া নামে বেনামি সুবিধা পাচ্ছে এসব প্রকল্পে। রুহুল আমীন নামে আরেক সুবিধাভোগী জানান, প্রশিক্ষনার্থীরা এ প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তাদের খামারের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও তারা দু’দিন প্রশিক্ষণ দেয়নি। দু’দিন না করে একদিন প্রশিক্ষন দিয়েছে। একদিনের খাবার ও টাকা দেয়নি। এছাড়া এলডিডিপি প্রকল্পে পিজি সদস্যে আমার নাম থাকলেও তা অফিসাররা আত্মসাৎ করেছে। সুবিধাভোগীর সাজি বলেন, ‘শেডের জন্য ইটের যে পিলার তৈরি করা হয়, তা মাটির ওপরে। মাটির নিচ থেকে পিলার তোলা না হলে কীভাবে ঘর টিকবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বালু, সিমেন্ট ও কাঠ ব্যবহার করা হয়নি। নির্মাণাধীন এসব শেড এলএসপি ও প্রকল্পের অফিসাররা হুমকি ও জোরপূর্বক তারা নিজেরা করিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দূর্নীতি পরায়ন ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন পিজির সদস্য ও স্থানীয় প্রতিনিধি।এবিষয় তথ্য সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকরা গেলে ভেটেরিনারি সার্জন ও দৌলতখান উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. ভূবন চন্দ্র হালদার সাংবাদিকদের সাথে উগ্র আচরণ করেন এবং কোন বক্তব্য বা তথ্য দিবে না বলে জানিয়ে দেন। এনিয়ে সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দৌলতখান প্রাণিসম্পদ অফিসের এক কর্মচারী নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, এই টাকার ভাগ জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পায় বলে দাবি। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার কুন্ডু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো অসত্য আমি এরকম কিছু করি না। এলডিডিপি প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার উম্মে হাবিবা জানান, প্রত্যেক উপজেলার অফিসারদেরকে আলাদা আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরকম যদি কোন অভিযোগ থাকে দুদিনের ট্রেনিং একদিনে করা হয়েছে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলডিডিপি প্রকল্পের (সিটিসি) ডাঃ গোলাম রব্বানী জানান, দুই দিনের প্রশিক্ষণ একদিনে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই, এরকম কোন অভিযোগ পেলে পরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
* দেশ বিদেশের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।