বরিশাল শহীদ মিনারে সাংবাদিক এসএম ইকবাল’র নামাজে জানাজা ২টায়


বরিশাল অফিস : বরিশালের অন্যতম বটবৃক্ষ এসএম ইকবাল। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় নগরীর অনামী লেনের নিজ বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না-লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তাঁকে শান্তিতে রাখুন।)
আরও পড়ুন :
বরিশালের প্রবীণ সাংবাদিক এসএম ইকবাল আর নেই
তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে ছিলেন। গত প্রায় একমাস তাঁর শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। উদ্বিগ্ন শুভাকাঙ্খীদের শত চেষ্টাতেও তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে সম্মতি দেননি। তিনি কিছুতেই হাসপাতালে যেতে রাজী হননি। পরে বাসাতেই তার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। বুধবার দুপুরের পর তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর বিকেল সাড়ে চারটায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান এসএম ইকবাল এর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়ক নান্নু। সাংবাদিক, আইনজীবী ও সমাজসেবক এসএম ইকবাল এর মৃত্যুর সংবাদে নগরীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর সভাপতি মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক, সিনিয়র সাংবাদিক মুরাদ আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদসহ সাহিত্য, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সবাই অনামী লেনে তাঁর বাসায় ভিড় করেন। এসএম ইকবাল সর্বশেষ কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি এবং দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার প্রকাশক হালিম রেজা মোফাজ্জল জানান, মেয়র ও জেলা প্রশাসকসহ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের আলোচনায় আগামীকাল সকাল দশটায় আইনজীবী সমিতি, ১১ টায় প্রেসক্লাবে এবং ১২ টায় বরিশাল শহীদ মিনার মাঠে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দুপুর ২টায় এসএম ইকবাল এর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তার দুই সন্তান রয়েছে। তারা এখনো এসে পৌছায়নি। তাদের এই সিদ্ধান্তে সহমত হলে মুসলিম গোরস্থানেই মরহুমকে সমাহিত করা হবে বলে জানান হালিম রেজা।
এসএম ইকবাল বরিশালের সাহিত্য সাংস্কৃতিক এবং সাংবাদিক অঙ্গনের সকলের অতিশয় প্রিয়জন ছিলেন। ৮০ বছর বয়সে তিনি বরিশালের সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক অঙ্গনকে কাঁদিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
বরিশাল খবর পরিবারের শোক
বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ এর সাবেক সভাপতি সাংবাদিক এস এম ইকবাল ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না–লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রজিউন)।
তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবার বর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন বরিশাল খবর সম্পাদক ও প্রকাশক মামুনুর রশীদ নোমানী। তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন।
আরও পড়ুন :
সাংবাদিক এস এম ইকবাল ছিলেন একজন মানবতাবাদি মানুষ
এসএম ইকবাল সম্পর্কে যতই জানা যায়, ততই বিস্ময় বাড়ে। যৌবন বয়সে আশেপাশের প্রতিবেশী বা সাংবাদিকদের বিপদে-আপদে তাকে কখনো ডাকতে হয়নি, নিজেই ছুটে এসে যুক্ত হতেন প্রয়োজনীয় সেবায়। দুঃসময়ে পাশে থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতেন তিনি। এমন একজন পরোপকারী আইনজীবী, সাংবাদিক ও সম্পাদক এস এম ইকবাল আজ নিজেই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রশাসন আর দু-চারজন শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া এখন আর তেমন কেউ খোঁজ রাখেননি তার। তিনি ছিলেন একাধারে আইনজীবী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও সংগঠক হিসেবে পরিচিত সর্বমহলে। কখনোই নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, পদ-পদবি ও ক্ষমতার কথা ভাবেননি। সৎ ও নির্লোভ মানুষ হিসেবে বরিশালের সাংবাদিক জগত ও সুশীল সমাজে তার সুনাম আজো অটুট রয়েছে।
এস এম ইকবাল ১৯৪৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বানারীপাড়া উপজেলার লবনসড়া গ্রামের এক ধর্মপ্রাণ সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ শামসুল হুদা এবং মায়ের নাম ফরিদা বেগম। প্রারম্ভিক শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণিতে বরিশাল জিলা স্কুলে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬৪ সালে বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন এস এম ইকবাল। স্বাধীনতার পরে সংস্কৃত সাহিত্যে কাব্যতীর্থ এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণ করেন তিনি। যুব বয়সে তিনি বরিশালে যুব সংঘ গঠন করে সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সমরাস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে এ যুব সংঘের সদস্যরা নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ভাবন করেন। বরিশাল শহরের সদর রোডের একটি ঘরে যুব সংঘের কর্মকা- চলতো। পরে কালিবাড়ি রোড ধর্মরক্ষিণী ভবনে গোপনে এ যুব সংঘের সদস্যরা বোমা বানানোর কাজ শুরু করেন। যুব সংঘ মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলাযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখে। এ সময়ে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম পত্রিকা, যার নাম ‘বাংলাদেশ’। এস এম ইকবাল এ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রকাশিত দলিলের ৬ষ্ঠ খ-ে এর উল্লেখ রয়েছে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধকালীন লুণ্ঠিত সম্পদের হিসাব সংরক্ষণের দায়িত্ব পায় যুব সংঘ। যার সরাসরি নেতৃত্বে ছিলেন এস এম ইকবাল। সাহিত্য সচেতন এস এম ইকবাল ১৯৭২ সালে কলকাতার সাহিত্য গবেষক দিলীপ কুমার দাসের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেন জীবনানন্দ দাশ এর ‘রূপসী বাংলা’। তখন জীবনানন্দ দাশের রচনাবলী খুব বেশি সংখ্যক মানুষের সংগ্রহে ছিল না। সেই থেকে শুরু, তারপর থেমে থাকেননি। একে একে সম্পাদনা করতে থাকেন জীবনানন্দ দাশ এর ‘বনলতা সেন’, ‘সুরঞ্জনা’, ‘সাতটি তারার তিমির’, ‘সুকান্তের ঘুম নেই’ ইত্যাদি গ্রন্থ। এছাড়া মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে ‘ছোটদের নজরুল’, ‘ছোটদের রবীন্দ্রনাথ’, ‘ছোটদের শরৎচন্দ্র’সহ প্রায় অর্ধশত গ্রন্থ। ১৯৭৩ সালে জনসমর্থনে নির্বাচিত হন বরিশাল পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার। ১৯৭৪ সালে দু’বার দায়িত্ব পালন করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে। ১৯৮৫ সালে বানারীপাড়া উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পদাধিকার বলে বানারীপাড়া উপজেলার ২৭টি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। এই শিক্ষানুরাগী মানুষটি বাইশারীতে একটি স্কুল ও একটি কলেজ নির্মাণ করেন।
* দেশ বিদেশের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।