ফিচার

ভালো নেই টিভি মেকানিকরা : পেশা ছেড়ে দিয়েছে অনেকই

image 31868 1697616173
print news

ইত্তেহাদ অনলাইন ডেস্ক :  ‘বর্তমানে বাজার থেকে উঠে গিয়েছে এক সময়ের আলিফ লায়লা ও সিন্দবাদ দেখার সেই আদি মডেলের টিভিগুলো। এক সময় কেউ টিভি সার্ভিসে দিলে তিন দিন পর্যন্ত দোকানেই পড়ে থাকতো টিভি। হাতে এতো পরিমাণ কাজের চাপ থাকতো, দুই দিনের আগে নতুন কাজ ধরার সুযোগই ছিল না। তবে এখন কাজ নেই বললেই চলে।’কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের জাজিরা পুরাতন বাজারের টিভি মেকানিক মো. মনির হোসেন ঢালী। ৬৫ বছর বয়সী মো. মনির হোসেন ঢালী গত ৪০ বছর ধরে টিভি মেরামতের কাজ করে আসছেন। এর মাঝে সময় বদলেছে। নিত্য-নতুন আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়। তারই ধারাবাহিকতায় পুরাতন সিআরটি টিভির পরিবর্তে এসেছে নতুন স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড এলইডি টিভি। আধুনিক সব সুবিধাযুক্ত এসব এলইডি টিভি তুলনামূলক নষ্ট কম হয়। ফলে এলাকাভিত্তিক টিভি মেকানিকদের কাজও কমে এসেছে বলে জানান তিনি। মেকানিক মনির হোসেন ঢালী আরও বলেন, আগে বক্স টিভিগুলোর টুকিটাকি নানান কাজ ছিল। কোনো একটা টিভি সার্ভিসে আসলে ৪০০-৫০০ টাকার কাজ থাকতো। এখন স্মার্ট এলইডি টিভিগুলোর খুচরা কোনো কাজ নাই। এগুলোর মূল যন্ত্রাংশই হলো ডিসপ্লে প্যানেল, ব্যাক লাইট আর মেইন বোর্ড। এর মধ্যে মেইন বোর্ডে কিছু হলে ঠিক করে দেওয়া যায়। ডিসপ্লে বা ব্যাক লাইট নষ্ট হলে নতুন কিনে এনে লাগিয়ে দেই। সেইখান থেকে যা লাভ করতে পারি। তবে সেই কাজও সব সময় আসে না। মাসে দুই একটা। কোম্পানি ওয়ারেন্টি দেয়, আবার তাদের সার্ভিস সেন্টারও আছে। সেখানেই যায় সবাই।জানা যায়, ২০১২ সালের পর থেকেই টিভি মেয়ামতের কাজে ভাটা এসেছে। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বক্স টিভির বাজার ভালো ছিল। ২০১২ এরপর থেকে সেই বাজার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু এটাই স্বাভাবিক। সব কিছুরই শেষ আছে, নতুন আসবে পুরাতন জিনিস বন্ধ হবে। এখন তো ক্যাসেট প্লেয়ার নাই। মোবাইলে সব পাওয়া যায়। ভিসিয়ার, ডিভিডি এগুলোও মার্কেট আউট।জাজিরা উপজেলার গোডাউন মোড় এলাকার টিভি মেকানিক আবুল হোসেন বলেন, একটা স্মার্ট এলইডি টিভি সার্ভিসে ২ থেকে ৪ হাজার বা তার বেশিও খরচ হয়। আর প্রতিনিয়তই নতুন মডেলের টিভি আসছে বাজারে। ৪-৫ বছর গেলেই পুরোনোটা বদলে বা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন টিভি কিনে নেয় সবাই। ঠিক করে ব্যবহার খুব কম লোকই করে। তখন সেই নষ্ট টিভিগুলো কম দামে কিনে ঠিক করে আমরাই আবার বিক্রি করি। এর পাশাপাশি বাসাবাড়িতে অন্যান্য যেসব ইলেকট্রিক জিনিসপত্র আছে ওইগুলো সার্ভিস করে দিন চলে এখন। বর্তমানে আমাদের অবস্থা ভালো না। সকালে ৫০০ টাকা নিয়ে বাজার করতে গেলে তেমন কিছুই পাওয়া যায় না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, নিত্য নতুন ইলেকট্রিক পণ্য সম্পর্কে ধারণা থাকলে এই পেশায় টিকে থাকা যায়। অনেকই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। আগের মতো এলাকাগুলোতে টিভি সার্ভিসিংয়ের দোকান খুব একটা দেখবেন না। তবে এখন আর শুধু টিভির ওপর ভরসা না করে অনান্য ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতিও যদি ভালো সার্ভিস দেওয়া যায়, তাহলে কোনোভাবে ডাল ভাত খেয়ে বাঁচা যাবে।পাসের দোকানি মনি হোসেন মাদবর বলেন, টিভি মেরামতের কাজ কমে আসলেও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য মেরামত করে জীবন চলে এক সময়ের ব্যস্ত সময় কাটানো টিভি মেকানিকদের। আগের সিআরটি টিভিগুলার নানা পার্টস ঠিক করার মতো কাজ ছিল। তবে বর্তমানে এলসিডি বা এলইডি টিভি ম্যাকানিজম কম। সার্ভিসের তেমন কিছু নেই। টিভির সব পার্টস বাজারে কিনতেই পাওয়া যায়। নষ্ট পার্টস ঠিক করার চাইতে নতুন পার্টস লাগিয়ে নেন টিভি মালিকরা। এই পার্টস লাগানো বাবদ কিছু টাকা পান টিভি মেকানিকরা। এতে তেমন আয় হয় না। তাই অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র-চার্জার ফ্যান-লাইট, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওভেন এসব মেরামত করে চলার মতো আয় করেন টিভি মেকানিকরা।বাজারে টিভি ঠিক করতে আসা বিপ্লব মাদবর জানান, পুরান মডেলের টিভি এখন আর কেউ ব্যবহার করে না। এগুলার ঝামেলায় বেশি। আধুনিক যুগে এসে এখন সবাই স্মার্ট টিভি ব্যবহার করে। বাজারে আসলে মেকারদের বসে থাকতেই দেখি। এই কাজ করে সংসার চালানো কঠিন।

 

* দেশ  বিদেশের  সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *