চট্টগ্রাম বাংলাদেশ

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলে দুর্ঘটনা : অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গতি

নদীর তলদেশে নির্মিত টানেলে দুর্ঘটনা
print news

চট্টগ্রাম অফিস :  কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের পর যান চলাচল উন্মুক্ত করার ৬ দিনে টানেলের ভেতরেই ঘটলো দুটি দুর্ঘটনা। আর দুটি দুর্ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায় দুটি প্রাইভেট কারকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে লোকাল দুটি বাস।টানেলের ঢালু সড়ক বেয়ে উপরে ওঠা এবং সমপরিমাণ ঢালু বেয়ে নিচে নামার সময় গতি নিয়ন্ত্রণ, গতি বোঝার সক্ষমতা সব চালকের আছে কিনা সেটিও প্রশ্ন উঠছে। টোল আদায়ের মাধ্যমে টানেল কর্তৃপক্ষের আয় হলেও লোকাল বাসগুলো টানেল দেখতে আসা অন্যান্য পর্যটকদের জীবন ঝুঁকি তৈরি করছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাতে ঘটা দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লাল বাসটি বেপরোয়াভাবে প্রাইভেটকারকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে। বাস চালক গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। জানিনা গাড়ির ফিটনেস কিংবা রুট সব ঠিকঠাক আছে কিনা। যদি না থাকে কর্তৃপক্ষে উচিত বিষয়গুলো তদারকি করা।দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা এবং বাঁশখালীর বাস মালিকদের সংগঠন—পিএবি বাস মালিক সমিতি। সমিতির সদস্য রফিক সওদাগর বলেন, আমাদের রুট পারমিট আছে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত। টানেলের অপরপ্রান্তও তো শহরে। সে হিসেবে আমাদের নতুন রুট পারমিট দরকার হচ্ছে না।কিন্তু টানেলের ঢালু পথ পাড়ি দেওয়ার দক্ষতা তাদের চালকদের এবং গাড়ির ফিটনেস আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জবাব দিতে পারেননি।বিআরটিএর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক শফিকুজ্জামান ভূঞা বলেন, টানেল কেন্দ্রীক আমাদের নতুন কোনো রুট এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কেউ আবেদন করলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে আমরা নতুন রুট নিয়ে কাজ করবো।রুট অনুমোদন ছাড়া বাস চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ অনুমোদিত রুটের বাইরে গিয়ে বাস চালালে তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সিএমপির উপ-কমিশনার ট্রাফিক (বন্দর জোন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পতেঙ্গা এবং কর্ণফুলী এলাকায় আগে যেসব রুট ছিল তাই বলবৎ আছে। আমরা সিএমপির আওতাধীন পতেঙ্গা কিংবা কর্ণফুলী এলাকায় লোকাল বাস চলাচলের নতুন রুটের অনুমোদন দিইনি।চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষে পর্যটন শিল্প বিকাশ ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেব চট্টগ্রাম নগর থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিআরটিএ’র দোতলা বাস এবং ছাদখোলা বাস চলছে। টানেল উদ্বোধনের পর বিআরটিএ জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে দুটি ছাদখোলা বাস টানেলের ভেতর দিয়ে পর্যটক পরিবহণ করছে এবং বেশ সাড়াও পেয়েছে।বিআরটিএ ডিপো মানেজার জুলফিকার আলী বলেন, মাননীয় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আমরা দুটি ছাদখোলা বাসে পর্যটকদের এপার থেকে ওপারে নিয়ে যাচ্ছি আবার ওপার থেকে এপারে নিয়ে আসছি। পর্যটকদের মাঝে বেশ সাড়া পড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের চালকরা তো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। আবার গাড়ির ফিটনেস নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। তবু টানেলের ঢালু পথে আমাদের চালকরা অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করছে।সিটিতে ১১টি রুটে বিআরটিএর অনুমোদন রয়েছে। তার মধ্যে ৬ নম্বর রুট লালদীঘি থেকে কাঠগড়-সী বিচ, ১০ নম্বর রুট কালুরঘাট থেকে কাঠগড়, ১১ নম্বর রুট ভাটিয়ারী থেকে অলংকার হয়ে সী-বিচ। নগরীর এসব রুটের কিছু গাড়ি টানেলে একশ টাকায় যাত্রী পারাপার করছে। আবার অনেকেই দুইশ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ভাড়া নৈরাজ্য ছাড়াও যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবাচ্ছে অনেককে। বঙ্গবন্ধু টানেল যারা ভ্রমণ করেছেন তারা এটিকে প্রকৌশল বিদ্যার অনন্য নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন। নদীর উভয় প্রান্তে ১৮ মিটার আর তলদেশে সর্বোচ্চ ৩১ মিটার অর্থ্যাৎ ১শ ফুট পর্যন্ত গভীরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটারের এই টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর উপরিভাগ (সি-লেভেল) থেকে সর্বোচ্চ গভীরতা ৪২ দশমিক ৮ মিটার।
সেই ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে উপরে ওঠা এবং উপর থেকে ঢালু পথ বেয়ে নীচে নামার সময় গাড়ির স্বাভাবিক গতির সঙ্গে যে গতি যুক্ত হয় তা হিসাব করে নিরাপদে গাড়ি চালানোর দক্ষতা পর্যটকবাহী লোকালগাড়ীগুলোর চালকদের আছে কিনা সেটি তদারকি করার আহ্বান জানান পর্যটকরা।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *