সমবায় অধিদফতর : দুর্নীতি অনিয়ম প্রমাণিত হলেও সাজা হয় না মৃণাল কান্তির!


ঢাকা প্রতিনিধি : দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত হয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন সমবায় অধিফতরের যুগ্ম নিবন্ধক মৃণাল কান্তি বিশ্বাস। একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে সাজা দেয়ার সুপারিশ করা হলেও অদৃশ্য শক্তিবলে আলোরমুখ দেখছে না সেই ফাইলগুলো। উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় আইন-কানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে লাগামহীন অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।অভিযোগ রয়েছে, অনুমতি ছাড়াই উচ্চপদস্ত কর্মকর্তার গাড়িতে বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন মৃণাল কান্তি। এতে গাড়িটির প্রায় ১৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসে নানা অনিয়ম, যা প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন সচিব মৃণাল কান্তিকে বিভাগীয় মামলাসহ কয়েকটি অভিযোগে শাস্তি দেয়া হয়। যার মধ্যে লঘুদণ্ড হিসেবে ক্ষতি হওয়ায় টাকা পরিশোধও করেন মৃণাল। কিন্তু গুরুদণ্ড দেয়া নির্দেশনা ধামাচাপা পড়ে যায়, যা প্রায় আড়াই বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের মার্কেট ভাঙা থেকে শুরু করে নতুন ১০ তলা মার্কেট নির্মাণ দোকান বরাদ্দসহ পদে পদে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দেয়া একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয় মৃণাল কান্তিকে। সিলেটে থাকাকালীন মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পরিদর্শককে নিবন্ধকের দেয়া শাস্তির ফাইলটি ধামাচাপা পড়ে যায়। এ ছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য করেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।একের পর এক অপকর্ম করে গেলেও রহস্যজনক কারণে মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয় না। মৃণাল কান্তি সিনিয়রদের ইতঃপূর্বে প্রমোশন নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : সমবায়ীদের টাকা লুটে বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট
যশোরের প্রতিমন্ত্রী ও তার পুত্রের কারণেই এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতি করা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ ও বিভিন্ন ফাইলপত্রে দেখা যায়, মৃণাল কান্তি বিশ্বাস ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঊর্ধ্বতনের অনুমতি না নিয়ে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ওই গাড়িতে করে বান্ধবীকে নিয়ে রাজশাহী যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ১৫ সেপ্টেম্বর গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনায় তদন্তে মৃণালকে দায়ি করে প্রতিবেদন দেয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের ও বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মৃণালকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সেই ফাইলকে আর আলোর মুখ দেখতে দেননি তিনি। যার কারণে প্রায় দুই বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও কোনো ধরনের সাজার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে।টাঙ্গাইলে থাকাকালীন সেখানকার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি কুদরত-ই-এলাহী খানেএর সাথে তার বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে। তারা পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে সমবায় ব্যাংকের তহবিল তসরুফ করাসহ মার্কেট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন টেন্ডার ছাড়াও পুরাতন মার্কেটের ১৫৫ জন ব্যবসায়ীকে বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নতুনদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেন।অবশেষে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে মৃণাল কান্তি বিশ্বাসকে সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দানের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্চাচারিতার প্রমাণ পাওয়া গেলেও অদ্যাবধি তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে মৃণাল কান্তি বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news