গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এখন ‘কবরস্থান’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় গতকাল মঙ্গলবার ৪০ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একে ‘ধীরগতির হত্যাযজ্ঞ’ আখ্যা দিয়েছে। উপত্যকার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালের চত্বরে এদিন ১৭৯ ফিলিস্তিনিকে গণকবর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়াহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ার করে বলেছে, গাজায় থাকা সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা এখন প্রায় ‘একটি কবরস্থান’। এদিকে ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের পার্লামেন্ট দখলে নিয়েছে। মঙ্গলবার আবু সালমিয়াহ বলেন, ইসরাইলের হামলার ভয়াবহতায় মারা যাওয়া ১৭৯ জনকে হাসপাতালটির চত্বরে গণকবর দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। হাসপাতালে জ্বালানি শেষ হওয়ার পর থেকে মারা যাওয়া শিশু ও অন্য রোগীদের সেখানে কবর দেওয়া হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আল-শিফার মতো বেহাল উত্তরের হাসপাতালগুলো। সেখানকার সব হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে সোমবারই জানানো হয়েছিল। মঙ্গলবারও আল-শিফা হাসপাতাল ট্যাঙ্ক দিয়ে ঘিরে রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে সেখানে শিশুসহ একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছেন। সেখানে এখনও ৬ শতাধিক রোগী ও হাজার হাজার শরণার্থী রয়েছেন। আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলের নৃশংসতার মধ্যে প্রথমবারের মতো এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বাইডেন। ইসরাইলকে গাজার হাসপাতালগুলো রক্ষার আহ্বান জানিয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘আশা করছি হাসপাতালগুলো ঘিরে তুলনামূলক কম অভিযান চালানো হবে। আমরা ইসরাইলের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এদিকে গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জোর আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও। ইসরাইলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকার রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই কাজ করতে হবে। আর হাসপাতালসহ নিরপরাধ মানুষকে রক্ষায় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে উগ্রবাদীদের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হুঁশিয়ার করে বলেছে, গাজায় থাকা সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা এখন প্রায় ‘একটি কবরস্থান’। যার ভেতরে এবং বাইরে মরদেহ জড়ো করে রাখা হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আল-শিফা হাসপাতালটি গত কয়েক দিন ধরে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ফ্রন্টলাইন বা সম্মুখ সারিতে পড়ে গেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ দাবি করেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আল-শিফা হাসপাতালটির নিচে সুড়ঙ্গে একটি কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল কেন্দ্র পরিচালনা করছে হামাস। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছে হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমিয়ার বলেছেন, এই মুহূর্তে হাসপাতালটিতে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ আটকে পড়েছেন। হলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন আরও অনেক মানুষ। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের চারপাশে মরদেহ পড়ে আছে, যাদের দাফন করা যাচ্ছে না বা সরিয়ে অন্য কোথাও মর্গে নেওয়াও যাচ্ছে না।’ লিন্ডমিয়ার আরও বলেন, ‘হাসপাতালটির যেভাবে কাজ করা দরকার এটি আর সেভাবে কাজ করতে পারছে না। এটা এখন প্রায় একটি কবরস্থান।’ চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, হাসপাতালে মরদেহ জড়ো করে রাখা হয়েছে এবং সেগুলো পচতে শুরু করেছে। আল-শিফার চিকিৎসক ডা. মোহামেদ আবু সেলমিয়া বিবিসিকে বলেছেন, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এখনও পচতে থাকা মরদেহগুলো হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে দাফন করার অনুমতি দেয়নি। এর মধ্যে কুকুরগুলো হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকে মরদেহগুলো খেতে শুরু করেছে। সেলমিয়া জানিয়েছেন, ওই শিশুদের মধ্যে সাতটি শিশু অক্সিজেনের অভাবে এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বলেছেন, ইসরাইল হাসপাতাল থেকে শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার ‘বাস্তবসম্মত সমাধান’ দিয়েছে; কিন্তু হামাস তাতে রাজি হচ্ছে না। তবে হামাস এই দাবি অস্বীকার করেছে। আল-শিফার সঙ্গে সঙ্গে গাজার অন্য হাসপাতালগুলো থেকেও নানা ধরনের অভিযোগ আসছে। চলমান সংঘাত এবং ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানা যাচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে এই সংঘাত চলছে। ইসরাইলি হামলায় জিম্মি নিহতের দাবি হামাসের : ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র, গত ৭ অক্টোবর হামাসের অপহরণের পর নিহত ১৯ বছর বয়সি নেওয়া মার্সিয়ানোর পরিবারের প্রতি বাহিনীর পক্ষ থেকে সমবেদনা জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, মার্সিয়ানো নিজের পরিচয় দিচ্ছেন এবং বলছেন তিনি চার দিন ধরে জিম্মি রয়েছেন। তার মানে হলো এই ভিডিওটি ১০ কিংবা ১১ অক্টোবর রেকর্ড করা হয়েছিল। হামাসের পার্লামেন্ট দখলের দাবি ইসরাইলের : ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, তাদের সপ্তম সাঁজোয়া ব্রিগেড এবং গোলানি কামান ব্রিগেড হামাসের কয়েকটি সরকারি ভবন ও পার্লামেন্ট দখল করেছে। গাজা সিটির শেখ ইজলিন এবং রিমালে অবস্থিত এসব ভবন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে তারা। দখল করা ভবনের মধ্যে রয়েছে হামাসের পার্লামেন্ট, সরকারি কমপ্লেক্স এবং রাজনৈতিক সদর দফতর। সেনারা দাবি করেছে, গাজার গভর্নর হাউসও দখল করেছে তারা। এই ভবনে হামাস সরকারের পুলিশ এবং সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডসের সদস্যর থাকতেন। এ ছাড়া হামাসের ইন্টিলিজেন্স বিভাগসহ আরও কিছু অবকাঠামো-যেগুলো গত ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোও দখল করার দাবি জানিয়েছে ইসরাইলের সেনারা।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news



