পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি : ছালেহা বেগম। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে গেছে। পেটের দায়ে এ বয়সে এসেও কাজ করতে হয় তাকে। সিডরে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক ছালেহা! স্বামী থেকেও যেন নেই... অনেক বছর ধরে অসুস্থ। আজও ছেলের অপেক্ষায় আছেন প্রতি মুহূর্ত।প্রান্তিক জনপদ বাদুরতলা গ্রাম। এ গ্রামে প্রতি পরিবারই মাছ ধরার কাজ করে। এক কথায় জেলেপল্লী বলা যেতে পারে। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ছেলে বাবু ফকির আর ফিরে আসেনি। আজও ছেলের পথপানে ষাটোর্ধ ছালেহা।বরগুনাসহ উপকূলীয় বাসিন্দাদের জীবন চলে অতি কষ্টে। ঝড়,জ্বলোচ্ছাস ও দুর্যোগের সঙ্গে তাদের বসবাস। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে উপকূলবাসী। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ মৎস্য পেশার ওপর নির্ভরশীল। জীবিকার তাগিদে অথৈ সাগরে নিয়ে অনেকেই না ফেরার দেশে চলে যান। অসহায় হয়ে পড়েন অনেকেই। সন্তান হারা হন মা-বাবা, মা-বাবা হারা হন সন্তান। এমন চিত্র প্রান্তিক জনপদে নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রান্তিকের অন্তহীন দুর্দশার সব সময় থাকে।২০০৭ সালের ১৫ নভম্বর। উপকূল দিয়ে বয়ে যায় ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডর। পাথরঘাটার উপকূলে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়। প্রাণহানি হয় সেই সময় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অসংখ্য জেলে। অনেকে ভাগ্যক্রমে ফিরে আসলেও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। আজও তাদের সন্ধান মেলেনি। সিডরের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাবু ফকিরের মতো অসংখ্য জেলের সন্ধান মেলেনি। বেঁচে আছে না মারা গেছে এমন প্রশ্ন রয়েছে সবার মনে। একই ট্রলারে থাকা জাকির হাওলাদার, ইসমাইল হোসেন ও হারেজ বিডিয়ারসহ প্রতিবেশি নয়জন আজও ফিরে আসেনি।একমাত্র ছেলে মো. বাবু ফকির। স্বামী অনেক বছর ধরে অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারে না। একমাত্র ছেলের উপার্জনেই নির্ভর মা ছালেহা ও আজিজ ফকির ফকিরের সংসার। পূর্ব পুরুষের পেশা ধরে রাখতে এবং বেঁচে থাকার সাগরে মাছতো ধরতেই হবে। একমাত্র ছেলে সাগরে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। ২০০৭ সালের ভয়াল ১৫ নভেম্বর সিডরে ছালেহা বেগমের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আজও একমাত্র ছেলেকে ভুলতে পারেননি ছালেহা। প্রতি মুহূর্ত ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদেন ছালেহা।কথা হয় ছালেহা বেগমের সঙ্গে। সিডরের আগে একমাত্র ছেলে বাবু ফকির সাগরে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ কান্না যেন একদিনের নয়, ১৬ বছর ধরেই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে চলেছেন ছালেহা। স্বামীর অসুস্থতার কারণে নিজের ওপরই সংসারের দায়িত্ব। কাজের ফাঁকে ছেলের কথা মনে পড়লেই আলাদা জায়গায় গিয়ে কান্না করেন। কখনো কখনো নামাজ বসেও কান্না করেন। আজও ছেলের পথের দিকে তাকিয়ে আছেন ছালেহা।ছালেহা বেগম বলেন, বাবু সাগরে যাওয়ার সময় একটি বড় পোমা (পোয়া) মাছ দিয়া গেছে খাওয়ার জন্য। আর বলে গেছে, এবার সাগর থেকে আসার সময় বড় ইলিশ মাছ নিয়া আইবে। কিন্তু ইলিশ মাছ দিয়া কি করমু, মোর পোলাডাইতো আয়নায়। বিয়া করার ১০ মাস পর সাগরে যাইয়া পোলায় আর আয়নায়। আমার ছেলে সিডরে নিখোঁজ হওয়ার কয়েকমাস পুত্রবধূর গর্ভে একটি সন্তান এলেও গর্ভেই মারা যায়।তিনি আরো বলেন, একমাত্র পোলার কামাইতে সংসার চলতে। স্বামী কাজ করতে পারছে না। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি আর বনের মধ্যে খালে মাছ ধরি, তা বিক্রি করে যা পাই তা দিয়া সংসার চালাই। আমার পোলা হয়তো আর বেঁচে নেই। মনতো মানে না। আজও আমরা বুড়াবুড়ি সন্তানের অপেক্ষায় পথের দিকে তাকিয়ে আছি।পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, সিডর গোটা উপকূলের স্মরণীয় দিন। এ দিনটি ভোলার মতো নয়।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত