বরিশালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতি : তদন্ত রিপোর্ট জমা হলেও চলছে তালবাহানা


বরিশাল অফিস : বরিশালের ৫নং মধ্য কড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর পৃথক ৩টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এরমধ্যে দুটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে এবং একটি চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রথম দুটি অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে জমা হয়েছে বলে স্বীকার করেন উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন।অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার ৫নং মধ্য কড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান টানা ১৩ বছর একই স্কুলে কর্মরত রয়েছেন। ২০১০ সালে তিনি এই স্কুলে যোগদানের পর থেকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামের সাথে যোগসাজস করে বিভিন্ন অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহানের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিকার চেয়ে তাকে অন্যত্র বদলীর আবেদন জানায়।
অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সভাপতি ছিলেন- রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জহিরুল ইসলাম। সরকারি প্রাইমারি স্কুল পরিচালনার নিয়ম অনুযায়ী একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি কমিটির সভাপতি থাকার নিয়ম নেই। তাছাড়া সরকারি নতুন আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার জন্য গ্রাজুয়েশন থাকা আবশ্যক, যা জহিরুল ইসলামের নেই। তাই এবারের ২০২৩ সালের কমিটিতে শ্রাবণী আক্তার নামে একজনকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু শ্রাবণী আক্তার সভাতির দায়িত্ব গ্রহণের পরও তাকে ব্যাংক হিসেবের সাথে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। ফলে ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় লেনদেন করেন প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান এবং সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম। এতে বর্তমান সভাপতি অশ^স্তিবোধ করে ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে শ্রাবণী আক্তার তার ইস্তফা পত্রে ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। এসময় কয়েকজন অভিভাবক বলেন, এই স্কুলে ভর্তি ফরম ও প্রত্যয়ন বাবদ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা হয়, বিদ্যালয়ের একাধিক চাম্বল ও মেহেগনি গাছ বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বিক্রি করে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান বিদ্যালয়ে সময়মত আসেন না ও সময়ের পূর্বেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন, তিনি কোন শ্রেণি পাঠদানেও অংশগ্রহণ করেন না বলে জানান কয়েককজন অভিভাবক। তাছাড়া এই স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত স্লিপের টাকা প্রতিবছর আসলেও সেই টাকার যথার্থ কাজ হয়না, প্রতিটি প্রান্তিক মূল্যায়নের উত্তরপত্র শিক্ষার্থীদের নিজ খরচে কিনে পরীক্ষার হলে আসতে হয় (অথচ এই উত্তরপত্র সিøপের টাকা থেকে বহন করার নিয়ম), প্রায় ৫ বছর যাবৎ এই স্কুলের শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় কোমলমতি শিশুদের অসহনীয় কষ্ট ও দুর্ভোগ হচ্ছে। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি বরিশাল সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক মনোনীত হওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি চক্র প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতারা ষড়যন্ত্র করছেন, আমি তাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
এবিষয়ে সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সভাপতি শ্রাবণী আক্তার অসুস্থ থাকায় আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এতদিন এ নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি, হঠাৎ করে এ বিষয়ে আমার ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গেছে, আমি তা জেনেছি। কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নিবেন আমি তাই মেনে নেবো। তিনি আরো বলেন, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির খুব বেশি ক্ষমতা থাকে না। বর্তমান সভাপতি শ্রাবণী আক্তার বলেন, আমি অসুস্থ নই।ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান আমাকে কাগজে কলমে সভাপতি দেখিয়ে সব কাজ নিজেরাই করেন। আমি স্কুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কোন সিগনেটরিতে নেই। এসব অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদেই আমি ইস্তফা দিয়েছি। ৫নং মধ্য কড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরিশাল সদর উপজেলা সহকারী প্রথমিক শিক্ষা অফিসার আল মামুন বলেন, তদন্ত হয়ে গেছে। এখন তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। বরিশাল সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফয়সাল জামিল বলেন- ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে আরেকটি তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন- ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
*গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news