রাজনীতি

আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা পেয়েও টেনশনে : লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে মনোনয়নবঞ্চিতরা

ec 24
print news

ঢাকা প্রতিনিধি :  বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোটে না আসার সিদ্ধান্তে অনড়। এ কারণে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে এবং ভোটের আমেজ ধরে রাখতে নির্বাচনে কৌশলী অবস্থানে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দলটি প্রতি আসনে ডামি প্রার্থী রাখার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের এমন অবস্থানের কারণে এবার ভোটের মাঠ ছাড়তে নারাজ মনোনয়নবঞ্চিতরা। ইতোমধ্যে দলের মনোনয়নবঞ্চিত দুই ডজন বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা এমপিদের বিরুদ্ধে লড়তে অনড় অনেক প্রার্থী। সব মিলিয়ে সারা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইসি থেকে মনোনয়নপত্রও কিনতে শুরু করেছেন অনেকেই। ফলে প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এবার নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের প্রার্থীরাই। এ নিয়ে টেনশনে আছেন দলের অনেক প্রার্থী।

এছাড়া আওয়ামী লীগ যে ২৯৮ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তাদের সবাই যে শেষ পর্যন্ত নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন এমন নয়। কারণ, জোট শরিক ও অন্য দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা ও ছাড় দেওয়ার বিষয়টি এখনো ফয়সালা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তারা ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচন করবে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি। ভোটে আনার সমীকরণে নতুন ও ছোট কয়েকটি দলকেও আওয়ামী লীগ আসন ছাড়তে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি ফয়সালা করবেন। শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন ছাড়ের এই অঙ্কেও ছাড় দিতে হবে অনেককেই। সব মিলিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও টেনশন কাটছে না আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। তারা যত সহজে নির্বাচনে পাশের চিন্তা করেছিলেন বাস্তবে ততটা সহজ হবে না বলে অনেকেই মনে করছেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু  বলেন, আমরা ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচন করব। আমরা (আওয়ামী লীগ) আমাদের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছি। এটা আমাদের দলের প্রার্থী তালিকা। এখন শিগগিরই আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জোট শরিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

 

আরও পড়ুন:   নৌকার বিপক্ষে মাঠে নামছেন নৌকাবঞ্চিতরা

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে ডামি প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনে যেন ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ে। এমন সিদ্ধান্তে দলের প্রার্থীরা টেনশনে পড়ে গেল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের প্রার্থীদের অসুবিধার বিষয়টি অবশ্যই আমরা দেখব। এখনো তো সময় আছে। ৩০ তারিখ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। এরপর যাচাই-বাছাই চলবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে। আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধন্ত নেব। ফলে এই মুহূর্তে এত চিন্তা করার কিছু নেই। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই লক্ষ্য রাখব।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুমতি দলের প্রয়োজনে কৌশলগত সিদ্ধান্ত। তিনি আরও বলেন, দল দলের কৌশল ঠিক করে। দলের অবস্থান অনুযায়ী দলের ভবিষ্যৎকে মাথায় রেখে দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন এবং সিদ্ধান্ত দেন। নতুন সময়ে নতুন কৌশলও দলকে গ্রহণ করতে হবে। এ সময় যে কৌশল দরকার আমাদের নেত্রী সে কৌশলই ঠিক করেছেন এবং গতকাল (রোববার) তার বক্তব্যে প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের অনেকেই নির্বাচনি মাঠে থেকে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যারা এবার দলের সমর্থন পাননি তারাও দলের ইতিবাচক অবস্থানের কারণে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্রও কিনেছেন অনেকেই। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পরেও অনেক নেতার কর্মী-সমর্থকরা মিছিল করছেন। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিও করেছেন অনেকেই।

আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দার বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক কথা বলতেও নিষেধ করেছেন তিনি। এটা থেকেই তো পরিষ্কার নৌকার বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এমপি বলেন, রাজনীতির মাঠে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার একটি কৌশল হলো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইস্যু। এটিকে সরলিকরণ করার সুযোগ নেই। ভোটের মাঠের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তও আসবে নেত্রীর কাছ থেকে। একাধিক প্রার্থী হলেও সংঘাত নিরসনে কি করা হবে তা সময়ই বলে দেবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ও শরিকরা ভোট বর্জন করায় ওই নির্বাচনে ১৫১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন মহাজোটের প্রার্থীরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১২৭টি আসন, জাতীয় পার্টি ১৮টি, জেপি একটি, জাসদ তিনটি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি আসন পেয়েছিল। ওই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা মহলের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। ফলে এবার আর সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি না এলেও ভোটের মাঠে যত বেশি সম্ভব দল ও প্রার্থীদের আনার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এছাড়া দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও কৌশল হিসাবে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থীদের মাঠে রাখতে চাইছে আওয়ামী লীগ। এবার ৩০০ আসনের বিপরীতে ৩৩৬২টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছিল আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড বৈঠক করে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে। রোববার বিকালে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে গণভবনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাশ করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে।

 

*গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *