নির্বাচনে যাচ্ছেন না রওশন এরশাদ : উজ্জীবিত বিএনপির নেতাকর্মীরা


ঢাকা প্রতিনিধি : জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ ও রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মশিউর রহমান রাঙ্গা।তিনি বলেন, ম্যাডাম নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই তার আসনেও প্রার্থী দিয়েছেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ম্যাডামের ময়মনসিংহ-৪ আসনে প্রার্থী হিসেবে আবু মুসা সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে তারা।এটা অন্যায় করা হয়েছে।এর আগে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ ও জাতীয় পার্টির চলমান সংকট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে অনুসারীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন রওশন এরশাদ। প্রায় ১ ঘন্টার ও বেশী সময় বৈঠকের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।রওশন এরশাদ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আমি স্বাগত জানিয়েছিলাম এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্ত নির্বাচনে অংশ অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সহযোগিতা না করার কারণে দলের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। এমতাবস্থায় দলের ও নেতাদের অবমূল্যায়ণ করার কারণে নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।রওশন এরশাদ বলেন, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা মনোনয়ন সংগ্রহ করতে গিয়ে কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের অপমান করা হয়েছে। তাই আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজপথে অবরোধ, হরতাল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এসব কর্মসূচিতে বড় নেতারা অংশগ্রহণ না করলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা কর্মসূচি অনেকটা সফল করছেন। এ অবস্থায় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার কৌশলে বিকল্প কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘দেশের জনগণ ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো চায় দেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। কিন্তু সরকার একতরফা নির্বাচন করার পথে হাঁটছে। এতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না বলে মনে করছে সবাই। গতকাল সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাইরের থাবা পড়েছে।” তার এমন বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ছুটি শেষে কাজে যোগ দেওয়ায় আমাদের নেতাকর্মীরা উদ্দীপ্ত হয়েছে। তারা আশাবাদী হয়ে উঠছে। আশা করছি, নেতাকর্মীরা উদ্দীপ্ত হবে ও আগামীর কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ বাড়বে।’
নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাচনে কিন্তু বাইরের থাবা পড়েছে। তারা থাবা বিস্তার করেছে। দেশের অর্থনীতি, ভবিষ্যৎসহ অনেক কিছু রক্ষা করতে হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি বেহাল। গার্মেন্টসশ্রমিকদের বেতন আশানুরূপ বাড়েনি। সরকার তাদের আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করেছে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গার্মেন্টশিল্পের ক্রেতারা ক্ষুব্ধ। আশঙ্কা করা হচ্ছে গার্মেন্টশিল্পে কোনো আঘাত আসতে পারে। সেদিকে সরকারের নজর নেই। জনগণ ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। সরকার সেদিকে না হেঁটে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। এতে দেশ বেকায়দায় পড়তে পারে। এত কিছুর মধ্যেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকর, মানবাধিকার রক্ষায় আমরা রাজপথে রয়েছি। দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের, বিশেষ করে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার উচিত এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া। যারা জনগণের পক্ষে থাকবে না তারা জনগণের শত্রু হিসেবে গণ্য হবে। এ বিষয়টি বোঝানোর জন্য আমরা কাজ করছি। সিইসির বক্তব্যেও নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে বলে আমরা মনে করছি। ধীরে ধীরে সবাই জনগণের পক্ষে আসবে।’
১৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বরমনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে।
বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম করছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করেছে এবং সরকারের বিভিন্ন দল ও জোটের নেতাদের ভাগিয়ে নির্বাচনে নিতে নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ করার মতো বিএনপি নেতা কিংবা জোট নেতাদের ভাগিয়ে নিতে পারেনি। এতে করে জনগণ ও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কাছে প্রত্যাশিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে সরকার এবং আগামীতেও ব্যর্থ হবে।
*গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news