ধারন ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুন বন্দি বরিশাল কারাগারে


বরিশাল অফিস : চলমান হরতাল-অবরোধে নাশকতা-মূলক কর্মকান্ড করার অভিযোগে বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন বরিশাল মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আটক-গ্রেফতার হচ্ছেন বিএনপি-জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী। আইনী প্রক্রিয়ায় এসব নেতাকর্মীদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। বরিশাল জেলার একমাত্র কারাগার হিসাবে স্বাভাবিকভাবেই সব বন্দীদের আশ্রয় এই কারাগারটিতে। যে কারনে সাম্প্রতিক সময়ে এই কারাগারটিতে চাপ বেড়েছে । বর্তমানে ধারন ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুন বন্দী রয়েছে কারাগারটিতে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্দী যুক্ত হয়েছেন গত এক মাসের মধ্যে। বন্দী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী বন্দী থাকায় দুর্বিসহ নানা সমস্যা নিয়ে মানবেতর অবস্থায় আছেন বন্দীরা। তবে জেল কর্র্তৃপক্ষ বলছে বন্দীদের সংখ্যা বেশী হলেও কোন ধরনের সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরী হয়নি। জেল কোড মেনে সব সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে বন্দীদের। গতকাল মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল কারাগারে মোট বন্দী ছিলেন ১ হাজার ৭৫ জন। যার বিপরীতে ধারন ক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৬৩৩ জনের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কারাভ্যন্তরে সংকট তৈরী হয়েছে। এর সাথে রয়েছে খাওয়া,গোসলসহ বসবাসের নানা সমস্যা। জানা গেছে বরিশাল কারাগারে স্বাভাবিক সময়ে ধারন ক্ষমতার চেয়ে একটু বেশী বন্দী থাকে। তবে এর সংখ্যা ৮ থেকে সাড়ে ৮’শ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। দেশে রাজনৈতিক সংকট তথা হরতাল অবরোধ ডাকা হলেই বন্দীদের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। কারাগার সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত এক মাস ধরে দৈনিক গড়ে ২০ থেকে অর্ধশতাধিক বন্দী কারাগারে প্রবেশ করছে। যার বিপরীতে দৈনিক মুক্তি পাচ্ছে কম বন্দী। যে কারনে কারাগারে বন্দীদের সংখ্যা বর্তমানে অনেক বেশী। তাদের ধারনা সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বন্দীদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। বন্দীদের অভিযোগ, ভেতরে তাদের সংখ্যা বাড়লে অনিয়মের মাত্রা বাড়ে। এ ছাড়া বন্দীদের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয়ভাবে কাজ করে। যাদের দ্বারা সাধারণ বন্দীরা হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া অসুস্থ নয় এমন বন্দীরা টাকা দিয়ে মাসের পর মাস কারা হাসপাতালে থাকেন। জামিনে বের হওয়া কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মী জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি চাহিদা কারা হাসপাতালের। টাকার বিনিময়ে ওখানে স্বাচ্ছন্দে থাকা যায়। এ কারণে যারা একটু বিত্তশালী এবং প্রভাবশালী তারা ওখানেই থাকেন। জামিনে মুক্ত হয়ে আসা আরো কয়েকজন আসামী বলেন, কারাগারে ধারন ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দির জন্য টয়লেটের ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। দিনে ব্যবহারের জন্য অর্ধশতাধিক এবং রাতে ব্যবহারের জন্য আরো কম টয়লেট রয়েছে। যা মহা দুর্ভোগের সৃষ্টি করে।বরিশাল কারাগারের জেলার জয়নাল আবেদীন ভুঞা বলেন, কারাগারে মঙ্গলবার মোট বন্দী সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৭৫ জন আর ধার ক্ষমতা রয়েছে ৬৩৩ জনের। বেশী বন্দী থাকায় কারা কর্র্তৃপক্ষ ও বন্দীদের তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে কাউকে কোন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৮২৯ সালে বরিশাল শহরের মূল অংশের ২১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় জেলা কারাগার। ১৯৯৭ সালের ৩ মার্চ এটিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের মর্যাদা দেওয়া হয়। কারাগারের ভেতরে ৫৮ শয্যার একটি হাসপাতাল, পাঁচটি বন্দী ভবন, ১২টি সেল এবং একটি লাইব্রেরি রয়েছে।
*গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news