শাহজাহান ওমরের ‘ডিগবাজি’ যা বলছেন স্থানীয় নেতারা


ঝালকাঠি প্রতিনিধি : বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার ঘোষণাকে ভোটের রাজনীতিতে শেষ মুহূর্তের ‘ডিগবাজি’ হিসেবে দেখছেন ঝালকাঠির নেতারা। বিএনপির নেতারা তাঁকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ‘ঘাপটি মেরে থাকা শত্রু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর আওয়ামী লীগের নেতারা স্থানীয় রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বদলের জন্য দুষছেন তাঁকে। বৃহস্পতিবার ঝালকাঠি-১ আসনে (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শাহজাহান ওমর। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তাঁকে বহিষ্কার করেছে দলটি। শাহজাহানসহ এই আসনে এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন দুইজন। এর আগে ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার সময় এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় বজলুল হক হারুনকে। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি)। এই দুজন ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরো একজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি হলেন কেন্দ্রের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম মনিরুজ্জামান মনির। আওয়ামী লীগের ঝালকাঠি জেলা, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা শাখার নেতারা বলছেন, শাহজাহান ওমর প্রার্থী হওয়ায় এখন হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। বিশেষ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এত দিন দলীয় ও ‘বিদ্রোহী’ বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে মাঠে থাকতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শাহজাহান ওমর এককভাবে দলীয় প্রার্থী হলে নেতাকর্মীদের সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। বিপরীতে কয়েক নেতা বলেছেন, দলীয় প্রধানের (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত যার পক্ষে যাবে, তারা তার হয়ে ভোটের মাঠে থাকবেন। কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিমল চন্দ্র সমাদ্দার বলেছেন, বজলুল হক হারুন নৌকার মনোনয়ন পেয়ে আমাদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন শাহজাহান ওমরের বিষয়ে কেন্দ্র বা জেলা থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। শাহজাহান ওমর একজন বীর-উত্তম। তিনি যদি নৌকা প্রতীক নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে আমরা নৌকার জন্য কাজ করব। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামানের পক্ষের রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল আলম সরফরাজ বলেছেন, ‘ঝালকাঠি-১ আসনে স্থানীয়দের কাঙ্ক্ষিত কাউকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য মাঠে নেমেছেন। এখন শুনছেন শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। শাহজাহান ওমর ১৯৯০ সালে আমাকে মারধর করেছিলেন। আরো অনেককে নির্যাতন করেছেন। সেই নির্যাতনকারী দলের মনোনয়ন পাবেন এটা হতে পারে না।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শাহজাহান ওমরকে দেখছেন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ নেতা হিসেবে। তিনি বলেছেন, ‘হুট করে উড়ে এসে জুড়ে বসা শাহজাহান ওমরকে দলের নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার আমলে তাঁর নির্দেশে অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে। এগুলো এখনো মানুষ ভোলেনি।’ তবে আওয়ামী লীগের রাজাপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়া হায়দার খান লিটন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে দলের মনোনয়ন দিয়েছেন, তাকে নিয়েই মাঠে থাকা উচিত। দলের সবার উচিত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা। আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পররাজধানীর পান্থপথে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শাহজাহান ওমর। সেখানে স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন সাংবাদিকরা। জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘কোয়ালিটি ম্যাটারস। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কী করবে, সেটা তাদের বিষয়। নির্বাচিত হলে এলাকার জনগণকে শান্তি দিতে চাই।’ শাহজাহান ওমর বলেন, ‘জিয়ার রাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে আসা, আমি তো মনে করি এটা প্রমোশন।’
বিএনপির নেতারা যা বলছেন
শাহজাহান ওমরের সিদ্ধান্তকে মন্দের ভালো হিসেবে দেখেছেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম জামাল। তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দলের শত্রু আজ চিহ্নিত হয়েছে। দলের সঙ্গে বেঈমানি করায় নেতাকর্মীরা শাহজাহান ওমরের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছেন। তিনি কখনোই বিএনপিকে এবং নেতাকর্মীদেরকে ভালোবাসেননি। অজনপ্রিয় ছিলেন। তিনি দল থেকে চলে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা স্বস্তি পেয়েছেন।’
সদস্যসচিব শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ঝালকাঠি জেলা বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি আজ জঞ্জালমুক্ত হয়েছে। তিনি দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে রাখতেন। ব্যক্তিগত সুবিধা পেতেই তিনি দলে ছিলেন।’ আর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মুবিনের ভাষ্য, ১৫ বছর ধরে দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন ও লড়াই-সংগ্রাম করছে। এর মধ্যে শাহজাহান ওমর নৌকার মাঝি হয়ে নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়েছেন।
*গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news