বরিশালে শ্রমজীবী মানুষের হাট


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : বরিশাল নগরীর সাগরদী,হাতেম আলী কলেজ,চৌমাথায় ও চকেরপুলে শ্রমজীবী মানুষের হাট বসে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এ হাট চলে। এ শ্রমজীবী মানুষের হাটে নিম্নআয়ের মানুষ প্রতিদিন ফজরের আজানের পরপরই ভিড় জমায়।
তাদের কারো হাতে থাকে কোদাল, কারো হাতে ঝুড়ি, কারো হাতে কাস্তে। প্রতিদিন শত লোক এখানে ভীড় জমায় তাদের শ্রম বিক্রির জন্য। শ্রম বিক্রির জন্য মালিক পক্ষ কাউকে দৈনিক ভিত্তিতে, সপ্তাহ ভিত্তিতে বা মাসিক ভিত্তিতে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। মালিক পক্ষ যে শ্রমিক বা শ্রমিক দল পছন্দ করেন তাদের সঙ্গে দর কষাকষি করে তাদের নিয়ে থাকেন।
নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক ২ বেলা খাবার এবং মাথাপিছু ৬০০/৭০০ টাকা পেয়ে থাকেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত হলে ১ বেলা খাবার ও ৫০০ টাকা পেয়ে থাকে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত হলে ৭০০ টাকা এবং সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার পেয়ে থাকেন।
অন্যদিকে মাটিকাটা ও রাজমিস্ত্রি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি। তাদের বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাথাপিছু রেট বেশী। সাগরদী ব্রীজ ,হাতেম আলী কলেজ,চৌমাথায় ও চকেরপুলে শ্রমজীবী মানুষের হাট দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। শ্রমিকরা দূর দূরান্ত থেকে এখানে এসে জড়ো হয়। এখানে কোন দালাল চক্র নেই। তবে সাব কনট্রাক্টেও শ্রমিকদের দরদাম ঠিক করা হয়।
সাগরদী এলাকার আহমেদ শামিম জানান, যে কোন কাজে শ্রমিক দরকার হলে এখানে আসি। তুলনামূলক ভাবে সস্তায় এবং পছন্দ মত দিন মজুর পাওয়া যায়। দিন মজুররা এক সঙ্গে এখানে জড়ো হয় বলে আমাদের অন্য কোথাও খুজতে যেতে হয় না।
দিনমজুর রহমত আলী বলেন, আমরা প্রতিদিন সকালে শ্রম বিক্রির জন্য অপেক্ষা করি। যাদের বয়স কম ও শক্তি বেশি মালিক পক্ষ তাদের পছন্দ করে নিয়ে যায়। আমরা যারা বয়স্ক তাদের মাঝে মাঝেই শ্রম বিক্রি করা হয় না। যেদিন শ্রম বিক্রি করতে না পারি সেদিন অনাহারে থাকতে হয়।
শ্রমজীবী মানুষের হাটে বরিশাল ছাড়াও ঝিনাইদহ, মাগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ এখানে এসে জড়ো হয় কাজের আশায়। তারা সস্তা ঘর ভাড়া করে বরিশালে মাসের পর মাস থাকে। পরিবার পরিজন দূরে রেখে তারা অর্থ উপার্জনের আশায় এখানে অবস্থান করেন। যারা প্রতিদিন বিক্রি হন তাদের চোখে দেখা যায় আলোর ঝিলিক। কিন্তু যারা অবিক্রিত থাকেন, তাদের কষ্ট হাহাকার জাগায় প্রতিনিয়ত।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news