অনুসন্ধানী সংবাদ

খুলনায় থেমে নেই জুয়ার আসর

KP
print news

ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনা :
বর্তমান সরকারের একের পর এক ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের ফলে বন্ধরয়েছে খুলনার ক্লাব পাড়াসহ বেশিরভাগ ক্লাবের জুয়ার আসর। তবে খুলনার কয়েকটি জায়গায় কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না পারিবারিক কলহ সৃষ্টিকারী জুয়া। শুধু সশরীরে নয়, তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জুয়া চলছে এখন স্মার্ট ফোনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জুয়াড়ীদের অংশগ্রহণে জমজমাট অনলাইন জুয়ার আসর। বিদেশী জুয়া এ্যাপের মাধ্যমে কৌশলে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বহির্দেশে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এসকল জুয়াড়ীদেরকে বারংবার আটক করা হলেও, আইনের ফাঁকফোকড়ে বেরিয়ে পড়ছে তারা। জুয়ার নুন্যতম আইনের সহজ শেকল পেরিয়ে পুনরায় জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করছে এ সকল জুয়া সম্রাটেরা। এদের মধ্যে শীর্ষস্থানে অবস্থানকারীর নাম মনোয়ার হোসেন মনা । বেনীবাবু রোডস্থ প্রেসক্লাব খুলনা -২ নামক একটি স্থানে জমজমাট মনার জুয়ার আসর। জুয়া ও মাদক মামলায় কয়েকবার আটক হলেও পুনরায় একই কাজ করছে । অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনার বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে নির্বিঘেœ জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে মনা। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পুলিশ অভিযান চালালেও ধরাছোয়ার বাইরে থাকে সে। দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই জুয়া পরিচালনা করে আসছে মনা। খুলনার অভিজাত এলাকা সোনাডাঙ্গা ২য় আবাসিকের একটি আলিসান বাড়িতে ভাড়া থাকে মনা। চড়েন সাদা একটি প্রাইভেট গাড়ীতে। তার বিলাসিতা খুলনার অনেক ধন্যাঢ্য ও বিত্ত শালী ব্যাক্তিদেরকেও হার মানাবে। সবই সম্ভব হয়েছে জুয়ার কল্যাণে।

সম্প্রতি বেণী বাবু রোডস্থ প্রেস ক্লাব খুলনা – ২ এর সাইনবোর্ড ব্যাবহার করে জুয়া চালানোর তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে কিছুদিন বন্ধ থাকে। পুনরায় প্রেস ক্লাব খুলনা-২ তে একই
ধারাবাহিকতায় জুয়া পরিচালনা করছে খুলনার আলোচিত জুয়াড়ী হোতা মনা। জুয়ার এই আসর শক্ত করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে বিভিন্ন সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জানা যায় , কয়েকবার জুয়া মামলায় আটক হলেও সে একটি মহলকে ম্যানেজ করে পুনরায় জুয়া চালায় । প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে আগত জুয়াড়ীদের অংশগ্রহণে চলে এই জুয়ার আসর। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলমান এ জুয়ার মেলায় ১৫ থেকে ২৫ জন জুয়াড়ীর সমাগম হয় । আঞ্চলিক কাটাকাটি নামক খেলায় প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার জুয়া চলে । এদের মধ্যে মোঃ বাদল সহ ৩ জন ব্যাক্তি জুয়াড়িদেরকে সুদে টাকা দেওয়ার জন্য উপস্থিত থাকে। বাকিরা সকলেই খেলোয়ার। এছাড়া খুলনা পাইওনিয়র স্কুলের বিপরীতে একটি দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ও কয়লাঘাটের সাচ্চুর বাড়ী রমরমা ছিল হান্নানের জুয়ার আসর। তবে কে এম পি’র গোয়েন্দা ও খুলনা থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে প- হয় এই আসর। এই আসরটি মোঃ ফিরোজের নেপথ্যে পরিচালনা করত আব্দুল হান্নান। হান্নান একটি স্থানে বোর্ড চালালেও ফিরোজ নগরীর ৩/৪ টি স্থানে জুয়া চালায়। প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব জুয়ার আসর থেকে মোটা অংকের টাকা নেন তিনি। স্থানীয় কাচ্চু নামে জুয়া চলে এসব বোর্ডে। নতুন রাস্তা সংলগ্ন কাশিপুরে একটি বোর্ড চালায় এক স্থানীয় নেতা। কয়লাঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে বোর্ড চালায় সাচ্চু ও তার ছেলে। শান্তিধাম মোড়ে জুয়ার আসর পরিচালনা করে সজল হোসেন। এছাড়া রুপসা মাছবাজার, রেলওয়ে ষ্টেশন, লঞ্চ ঘাটেও ছোট-বড় কয়েকটি জুয়ার আসর চলমান। সম্প্রতি ক্রিকেট বিশ্বকাপ শেষ হলেও চলছে ক্রিকেটের দেশি বিদেশী লীগের খেলা। ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে খুলনার বিভিন্ন চায়ের দোকানে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। তবে এই ক্রিকেটকে পুঁজি করে একটি পক্ষ লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গনযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে লোভনীয় অফারের মাধ্যমে আকৃষ্ট করছে এসকল অনলাইন জুয়াড়ীদের। ক্রিকেট খেলার মাঝে বিজ্ঞাপন আকারে এসব অফার দেওয়া হয়। ওয়ান এক্স বেট, বেট টুয়েন্টি ফোর, সেভেন এক্স বেট সহ নানা নামে এসকল অনলাইন জুয়ায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। খুলনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ক্লাবসহ নানা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়িত চলছেএই অনলাইন জুয়া। এছাড়া কিশোর, যুবক মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষের অন্যতম আকর্ষন এখন এ্যাপভিত্তিক অনলাইন জুয়ায়। একটি বিদেশীএ্যাপের মাধ্যমে আট থেকে নয়গুন পর্যন্ত লাভের আশা দেখিয়ে টাকা নেয় সংশ্লিষ্ঠ দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত এজেন্টরা। স্পিনিংসহ নানা পদ্ধতির জুয়ারলোভে একটি নির্দিষ্ট একাউন্টে টাকা বিনিয়োগ করে এসকলজুয়াড়ীগন। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয় বিকাশ, নগদ,
রকেটসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া কিছু কিছু অনলাইনজুয়ায় ব্যবহার করা হয় অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি কিংবা বিট কয়েন। খুলনার লোকাল জুয়ার এজেন্টগণ যোগাযোগ রাখে মাস্টার এজেন্টদেরসাথে। প্রান্তিক পর্যায়ের জুয়াড়িদের নিকট থেকে গৃহীত এসবটাকা বিট কয়েন কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পৌছে যায়বিদেশী গ্রান্ড এজেন্টদের কাছে। আইনের জালে এসকল অনলাইনজুয়াড়ীরা আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে এজেন্ট ও মাস্টারএজেন্টগন। এসকল জুয়াড়িদের মধ্যে কিছু অংশ রয়েছে শিক্ষার্থী। লাভেরআশায় বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পেতে পুনরায় জুয়ায় বিনিয়োগকরছে টাকা। পরিবারের সমর্থন না পাওয়ায় এসকল শিক্ষার্থীরা জড়িয়েপড়ছে নানা কু কর্মে।এ বিষয়ে নাদিরা বেগম নামক একজন অভিভাবক বলেন, “স্কুল কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন থাকায়, সহজেই এসকল জুয়ারএপলিকেশনে বেট লাগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাথে সাথে প্রশাসনেরও পদক্ষেপ জরুরী। এই জুয়া পারিবারিক অশান্তির অন্যতম কারনবলে মনে করেন ফাতেমা খানম নামক এক স্কুল শিক্ষিকা। তিনি বলেন “একজন জুয়াড়ি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে। জুয়ার বোর্ডেটাকা নষ্ট করতে কোনোভাবে দ্বিধাবোধ করে না। ফলে আর্থিক সমস্যা হয় ও সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়।এই বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)র গোয়েন্দা শাখারউপ কমিশনার বি এম নুরুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালনাকরে বেশ কয়েকটি জুয়াড়িকে আটক করা হয়েছে। আমাদের মাদক ওজুয়া বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।সম্প্রতি খুলনায় নবাগত পুলিশ কমিশনারের যোগদানের পর নড়েচড়েবসেছে সকল জুয়া সম্রাট ও এজেন্টগন। পুলিশের লাগাতার জুয়াবিরোধী অভিযানে বেশ কয়েকজন জুয়াড়্ধীসঢ়;দেরকে আটক করায় বেশকয়েকটি জুয়ার পয়েন্ট আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে অদৃশ্য শক্তির বলে কয়েকটি আসর এখনো জমজমাট।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *