বেশি গরিব বরিশালে : বিবিএসের জরিপ
 
                                
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার এখন বরিশাল বিভাগে। তথ্য অনুযায়ী বিভাগটিতে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ। সেখানে দারিদ্র্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে ওই বিভাগে দারিদ্র্য হার ছিল ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে। সেখানে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএস বলছে, গত ছয় বছরে ঢাকা, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এখন ঢাকায় দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, সিলেটে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, রংপুরে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ আর ময়মনসিংহে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ।
দেশে এখন সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশে অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ; ছয় বছর আগে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
দেশে নিরাপদ শৌচাগার সবচেয়ে কম বরিশালে
গত এপ্রিল মাসে খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়। দারিদ্র্য হারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ফলের সঙ্গে চূড়ান্ত ফলের পরিবর্তন নেই।
২০১৬ সালে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৭ শতাংশের মতো দারিদ্র্য হার ছিল; এখন তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে বরিশালে দারিদ্র্য বেড়ে দেশের সর্বোচ্চ হয়েছে। কেন বাড়ল, আজকের অনুষ্ঠানে তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দীপংকর রায়। তিনি বলেন, হয়তো মঙ্গার অভিবাসন হয়েছে। নদীর অববাহিকা ধরে তা বরিশালের দিকে গেছে।
বরিশাল শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত, সেখানে কেন দারিদ্র্য বাড়ল, তা–ও নীতিনির্ধারকেরা ভেবে দেখতে পারেন। দীপংকর রায় আরও বলেন, বরিশালে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি। সেখানে দারিদ্র্য কমার কথা। আবার কেউ বলতে পারেন, দারিদ্র্যের হার বেশি বলেই সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা বেশি। এটি আপেক্ষিক বিষয়।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বেশি খুলনা জেলায়। সেখানে দারিদ্র্যের হার বেশি হারে বাড়ার কথা। কিন্তু পাশের বিভাগে দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, দারিদ্র্য কমানোর প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বেশি জরুরি। কারণ, হঠাৎ যে কোনো ধরনের আঘাতে তাঁরা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারেন। তাদের সুরক্ষা দিতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচন টেকসই হবে।
জরিপের তথ্যানুসারে, গ্রামে বসবাসরত জনসংখ্যার ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তবে শহরে এ হার ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দেশের মানুষ এখন প্রতিদিন গড়ে ৩২৮ গ্রাম ভাত গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু ২০১৬ সালে ভাত গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৩৬৭ গ্রাম। ওই সময় দৈনিক ১৩ দশমিক ৬ গ্রাম ডিম গ্রহণ করা হলে এখন তা কমে ১২ দশমিক ৭ গ্রামে নেমে এসেছে। একই সময়ে পেঁয়াজ গ্রহণের পরিমাণও কম এসেছে।
‘দেশে বৈষম্য অ্যালার্মিং লেভেলে পৌঁছে গেছে’ উল্লেখ করে সভায় বিশেষ অতিথি হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের মোট আয়ের ৩০ শতাংশ ৫ শতাংশ উচ্চ আয়ের মানুষের হাতে আবদ্ধ হয়ে আছে। যেখানে নিম্ন আয়ের ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ১৮ শতাংশ আয়। তাই বৈষম্য এখন দারিদ্র্যের চেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের দারিদ্র্য কমলেও আর্থিক দুর্বলতা বেড়েছে। মধ্যবিত্তের আয় কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ, একইসঙ্গে কমেছে খাদ্য গ্রহণও।
অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিবিএসের উপপরিচালক এবং খানার আয় ও ব্যয় জরিপ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য কাউসার আহাম্মদ, বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। সশরীর উপস্থিত হতে না পারলেও তিনি ভিডিও বার্তা দেন।
 
         
        



 
                         
                            