বাংলাদেশ রাজশাহী

রাজশাহীতে শীতে জনজীবন স্থবির : ভোগান্তিতে ছিন্নমূল মানুষ

12 2312180154
print news

রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীতে গত দুই দিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। কুয়াশা-বাতাসে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রবিবারও (১৪ জানুয়ারি) একই অবস্থা ছিল। দুপুরের পর বিকালের দিকে রোদ ওঠে কিছু সময়ের জন্য। তবে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা আবার বেড়ে যায়। এতে সাধারণ ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়েছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নগরীর শিরোইল স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, ছিন্নমূল মানুষের অনেকে কষ্ট করে শীত নিবারণ করছেন। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা সবার। চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে পুরো রাজশাহী। শীতজনিত নানা জটিলতায় রোগীদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। উষ্ণতা পেতে শীত কাপড়ের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বেড়েছে।

জেলায় শনিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মৌসুমে সর্বনিম্ন। এর আগে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) উত্তরের হিমেল হাওয়ায় রাজশাহীতে হঠাৎ তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছিল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নগরীর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘন কুয়াশায় দুপুর গড়িয়ে দেড়টার পর সূর্যের দেখা মিলেছিল কিছু সময়ের জন্য। যদিও হিমেল বাতাসে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ছিল সারাদিন। হঠাৎ তাপমাত্রার এমন নিম্নমুখী আচরণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। দিনের স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করছে এই ঠান্ডা। ছিন্নমূল ও খেটে-খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে। দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন শ্রমজীবীরাও। সকালে কথা হয় নির্মাণশ্রমিক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই শীতে কাজ করা অনেক কষ্টের। কিন্তু জীবিকার তাগিদে ঘন কুয়াশা মাড়িয়ে ভোরেই কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে। না হয় খাবার জুটবে না।’

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে। এই শৈত্যপ্রবাহ কয়েকদিন থাকতে পারে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই সেটি শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আর তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে করা হয়। সেই হিসেবে রাজশাহীতে এখন মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’

গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। সূর্যের আলো ঠিক মতো না পাওয়ায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ইতোমধ্যে কিছ জায়গায় বীজতলা হলুদ ও ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে।

তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজশাহী অঞ্চলের বীজতলা উঁচু জমিতে হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। প্রতিদিন তারা মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন এবং কৃষকদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এবার বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বীজতলা তৈরি হয়েছে চার হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে। যা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলা-উপজেলায় বিক্রি করবেন চাষিরা।

চার বিঘা জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন চারঘাট উপজেলার কৈ ডাঙা গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিজের তিন বিঘা জমিতে চারা রোপণ করবো। বাকি চারা বিক্রি করবো। উঁচু জমিতে বীজতলা করার কারণে নষ্ট কম হচ্ছে। কিন্তু পানির সংকট আছে। প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে, তাতে খরচ বাড়ছে।’

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, ‘শীত ও কুয়াশার কারণে কিছু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কাদা মাটির বীজতলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই আবহাওয়ায় করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জমিতে পানি রাখা ও কুয়াশা বেশি হলে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে বীজতলা নিয়ে শঙ্কার কোনও কারণ নেই।’

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘রবিবার সকাল ৯টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৯টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। আর সন্ধ্যায় ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৬ শতাংশ। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আরও দুই-তিন দিন এই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করবে।’

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে রবিবার (১৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৬৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এখনও বিভিন্ন এলাকায় কম্বল বিতরণ অব্যাহত আছে।

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ ডেস্ক :

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *