মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : আর কতো অপেক্ষা করবো। টানা ৪ দিন ধরে পদ্মার পাড়ে অপেক্ষায় আছি, কখন ভাইয়ের সন্ধান পাবো। জীবিত অথবা মৃত যেভাবেই হোক আমার ভাইকে চাই। অন্তত লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেও ভাইয়ের বাচ্চাদের সান্ত্বনা দিতে পারবো। জানি না আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছেন। আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন পাটুরিয়ায় ফেরি ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রজনীগন্ধার দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম শাওন। তিনিসহ পরিবারের ৯ সদস্য ৪ দিন ধরে পাটুরিয়া ঘাটে অপেক্ষায় আছে হুমায়ুন কবিরের সন্ধানে। গতকাল দুপুরে সরজমিন পাটুরিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরিটি উদ্ধারে যুক্ত হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। এ সময় প্রত্যয়ের ভেতর থেকে উদ্ধার তৎপরতা প্রত্যক্ষ করছেন নিখোঁজ ফেরির ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই রফিকুল ইসলামসহ আত্মীয়-স্বজনরা। দুর্ঘটনার ঘটনার খবর পেরে ওদিনই তারা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মাটিভাঙ্গা এলাকা থেকে হুমায়ুন কবিরের সন্ধানে ছুটে এসেছেন দুর্ঘটনাস্থল পাটুরিয়া ঘাটে।
টানা ৪ দিন তারা অনেকটা খেয়ে না খেয়ে অপেক্ষায় রয়েছে কখন মিলবে হুমায়ুন কবিরের সন্ধান। ৪ দিনেও হুমায়ুন কবিরের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় তারা উদ্ধার তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নিখোঁজ হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম শাওন আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আর কতো সময় অপেক্ষা করলে ভাইয়ের সন্ধান পাবো জানি না। ওদিকে আমার দুই ভাতিজি, ছোট্ট ভাতিজা ও ভাবীকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দেয়া যাচ্ছে না। তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়ি থেকে বারবার ফোন করে আমার কাছে জানতে চাচ্ছে- খোঁজ পাওয়া গেছে কিনা। আমি কোনো উত্তর দিতে পারছি না। ফোন রিসিভ করলেই ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। আমিও ওদের কান্না সহ্য করতে পারছি না। শাওন বলেন, আমার বড় ভাতিজি কামরুন নাহার বাবার শোকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সে এইচএসসি’র প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে নুরে জান্নাত দশম শ্রেণিতে এবং ১০ বছরের একমাত্র ছেলে ইয়াসির আরাফাত পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ওরা আমার সঙ্গে বাবার খোঁজে পাটুরিয়া আসার জন্য বায়না ধরেছিল। কিন্তু ওদের নিয়ে আসলে কন্ট্রোলে রাখতে পারতাম না। তাই বহু কষ্ট করে বুঝিয়ে শুনিয়ে ওদের গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছি। উদ্ধার তৎপরতা সন্তুষ্ট না হয়ে রফিকুল ইসলাম শাওন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি করেছেন। আমরা পুরো পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগ করি সেহেতু প্রধানমন্ত্রী এখন আমাদের শেষ ভরসা। তার কাছে আমার আকুল আবেদন- ‘আমার ভাইকে ফেরত চাই জীবিত অথবা মৃত। উপরে আল্লাহ এরপর প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন আমাদের ভরসা।’ শাওন আরও বলেন, ফেরি ডুবির ঘটনার পর উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম এবং হামজা উদ্ধার তৎপরতায় কোনো কাজে আসেনি। পানির নিচ থেকে ডুবন্ত ফেরি উদ্ধারে যে সক্ষমতা দরকার সেটা ওই জাহাজ দু’টির নেই। আমরা শুনেছিলাম প্রত্যয় এবং দুর্জয় উদ্ধার তৎপরতা চালাবে। প্রত্যয় দেরিতে আশায় উদ্ধার তৎপরতা বিলম্বিত হয়েছে। যার ফলে আমার ভাইয়ের সন্ধান ও ৪ দিনও পেলাম না। তার বড় ভাই হুমায়ুন কবীর ২০১১ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। এরমধ্যে গেল ৭ মাস ধরে পাটুরিয়ার রজনীগন্ধা ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আমরা তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন হুমায়ুন কবীর।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া যাওয়ার পথে ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ৯টি ট্রাকসহ রজনীগন্ধা নামের ফেরিটি পদ্মায় ডুবে যায়। ফেরি উদ্ধার তৎপরতায় প্রথমে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার সঙ্গে যুক্ত হয় রুস্তম। তারা এ পর্যন্ত ফেরির আশপাশ থেকে ভেসে যাওয়া তিনটি ট্রাক উদ্ধার করেছে। ফেরি উদ্ধারে রুস্তম এবং হামজার সক্ষমতা না থাকায় শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়।
সকাল ১১টার দিকে প্রত্যয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। তবে দুর্ঘটনার ৪ দিনেও নিখোঁজ দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবিরের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুর রহিম।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত