শিক্ষা

ভর্তিতে জিপিএ শর্তের জালে বেসরকারি অনার্স কলেজ

nuJ 6e099db716ec5f8026139f9e85277aec
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর গন্তব্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (জিপিএ) শর্তে ভর্তি হতে পারবে না অনেক শিক্ষার্থী। আর এ কারণে কলেজে কর্মরত অনার্স স্তরের নন-এমপিও শিক্ষকদের যৎসামান্য আয়ও কমে আসবে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তিতে জিপিএ শর্ত শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।

শিক্ষকদের এই দাবির বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের আগের রেকর্ড অনুযায়ী এই পয়েন্টের নিচে যারা তারা এমনিতেই চান্স পায় না। একদিকে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা চাইবো আবার ভর্তিতে পয়েন্ট শিথিল করবো, তা তো হয় না। ছাত্র ভর্তি করালে আমাদের লাভ, কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না। আমরা দেখছি স্ট্যান্ডার্ড। আস্তে আস্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ালিটি নিয়ে স্টুডেন্টরা আসুক। যারা রেজাল্ট ভালো করতে পারছে না তাদের কেন অনার্সে ভর্তি হতে হবে? যারা রেজাল্ট ভালো করতে পারছে না, তারা তো খারাপ স্টুডেন্ট না। অনেক ট্রেড তো আছে, সেখানে ভর্তি হতে পারবে তারা। সবার অনার্স পড়া কোনও সমাধান না। যারা ভর্তি হতে পারবে না তারা নানান রকম কারিগরি ট্রেডে ভর্তি হবে, ডিপ্লোমা বা শর্ট কোর্সে ভর্তি হবে। অনার্সে ভর্তি হতে পারবে না, তারা ডিগ্রিতে ভর্তি হতে পারবে। আবার যারা ডিগ্রিতে ভর্তি হতে পারবে না তারা বিভিন্ন কারিগরি ট্রেড কোর্সে ভর্তি হতে পারবে।

গত ১৮ জানুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি বিকাল ৪টা থেকে। ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তিতে কোনও পরীক্ষা নেই। কিন্তু পরীক্ষা না থাকলে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩ পয়েন্টসহ দুই পরীক্ষায় ৬.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন না। আবার দুই পরীক্ষা মিলে ৬.৫ থাকলেও একটি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩ পয়েন্টের কম হলে সে আর ভর্তি হতে পারবে না।

এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি আবেদনের যোগ্যতা ছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম ২ করে ৪ পয়েন্ট। কিন্তু কয়েক বছর আগে পয়েন্ট বৃদ্ধি করে দুটি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩ করে মানবিক বিভাগের সাবজেক্টগুলোয় মোট ৬.৫ এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৭ করা হয়। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। গত বছর শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে আন্দোলন, মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই শর্ত শিথিলের ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায়নি।

অনার্স স্তরের শিক্ষকরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্সে ভর্তি কমিয়ে পাস কোর্সে ভর্তির ব্যাপারে উৎসাহিত করলেও শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে আগ্রহ কম। তাই তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকছে। অনেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মোটা অঙ্কের টাকা জোগাড় করতে না পেরে লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে।

বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নয়ন কান্তি দাশ বলেন, আগে অনার্সের ভর্তি পয়েন্ট ছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম ২, বর্তমানে তা বেড়ে ন্যূনতম ৩ হয়। আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট পয়েন্ট মানবিকে ৬, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষায় ৭ করা হয়। যা বিগত বছরে শর্ট সিলেবাসের কারণে সমস্যা না হলেও এই বছরে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এই বছরে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার জন্য পাসের হার ও জিপিএ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে চাইলে ভর্তি পয়েন্ট ন্যূনতম ২.৫ এবং মোট ৫.৫ বা ৬ করতে পারে। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পয়েন্ট বেশি হওয়ায় এসব শাখার শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা লক্ষ করা যাচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। এ কারণে এসব পর্যায়ে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের অনীহা লক্ষ করা যাচ্ছে।

সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, যেখানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেসব কলেজ ভর্তি পরীক্ষা নেয়, তাদের আবেদন পয়েন্ট ন্যূনতম ৬, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ভর্তিতে মোট ৫ পয়েন্ট প্রয়োজন, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম ৬.৫ এবং ৭, যা অযৌক্তিক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত গ্রামের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে পয়েন্ট কমানো, নয়তো গ্রামের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়বে। আর অধিকাংশ সরকারি এবং বিশেষ করে বেসরকারি কলেজগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে। লাভবান হবে দুর্বল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি কলেজে পাঠদানরত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা এমপিও বঞ্চিত। ২০২০ সালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আশ্বাস দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসম্মতির কারণে তারা এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির সামান্য অর্থ কলেজ থেকে যা দেওয়া হয়, তা-ই শিক্ষকদের আয়ের একমাত্র পথ।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *