মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ,স্থলমাইন বিষ্ফোরণ


কক্সবাজার প্রতিনিধি : ঘুমধুম সীমান্তের মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ এখন ছড়িয়ে পড়েছে উখিয়ার থাইয়্যংখালী সীমান্ত পর্যন্ত। সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কে আছেন বাংলাদেশিরা।মঙ্গলবার আশ্রয় নিতে পালিয়ে আসেন সব মিলিয়ে ২৬৪ জন। এরমধ্যে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সদস্যরা রয়েছেন।রাতভর ঘুমধুমে ভারী অস্ত্রের শব্দ শোনার পর মঙ্গলবার সকালে তা বিস্তৃত হয় উখিয়ার থাইয়্যংখালী সীমান্ত পর্যন্ত। এ সীমান্তে সকাল থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গোলাগুলির দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরায়।দেখা যায়, স্থলমাইন বিষ্ফোরণ ও মর্টারশেল থেকে বের হওয়া আগুনের ফুলকিও। তবে গোলাগুলি একটু থামতেই সীমান্ত থেকে পালিয়ে আসতে থাকেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।তুমব্রুর সীমান্তের মতো থাইয়্যংখালীর সীমান্ত ঘেষা বাসিন্দারাও আছেন আতঙ্কে।এক বাসিন্দা বলেন, গোলাগুলি ও বোমার কারণে রাতে ঘুমাতে পারছি না। শিশুরা আঁতকে উঠছে। বাড়িতে অনেক গুলি লেগেছে। টিয়ারশেল পড়েছে।কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হাসান কবীর জানান, সীমান্তের ওপারের সংঘর্ষে এখানকার মানুষ ভালো নেই। এ পর্যন্ত দুই জন নিহতের সাথে আহতের সংখ্যা সাতজন। সীমান্তে কোন দুষ্কৃতকারীদের প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।তিনি বলেন, আমরা অন্য সংস্থাগুলোর সাথে মিলে চেষ্টা করছি, যাতে আমাদের দেশের ভিতরে কোনো জানমালের ক্ষতি না হয়।এদিকে আতঙ্কে থাকা সীমান্তঘেঁষা মানুষদের সরিয়া নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বান্দরবন জেলা প্রশাসক।তিনি বলেন, আমর দুটি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছি। তবে অধিকাংশ মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি যেতে চায়। অনেকে চলেও গেছেন।মঙ্গলবার তুমব্রুতে এসে পড়ে মিয়ানমারের একটি রকেট। আর থাইয়্যংখালীতে উড়ে আসা গুলিতে আহত হন একজন কৃষক। তাকে পুরাতন রোহিঙ্গা বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশনাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ গত কয়েকদিন ধরেই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে।বাংলাদেশের নাগরিক নিহত হওয়ায় মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।মিয়ানমারে পরিস্থিতি যাই হোক না কেনো, বাংলাদেশে কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের আর ঢুকতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন দিয়েছেন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।বিজিবি প্রধান বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের আর বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকতে দেবো না।মহাপরিচালক জানান, ৬৫ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলো। তবে তাদের পুশব্যাক করা হয়েছে।পরিস্থিতি দেখতে বুধবারই তিনি সীমান্ত পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান বিজিবি নতুন এই মহাপরিচালক। বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, ধৈর্য ধরে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।বিজিপিসহ সকল সদস্যদের নিয়ম মেনে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিজি।
গত অক্টোবরে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক টহল চৌকি, অস্ত্রাগার ও বেশ কিছু শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিদ্রোহীদের হাতে। সবশেষ ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা দলে দলে আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে।শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী চীন ও ভারতেও মিয়ানমারের সেনারা আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ধরনের বিজয় বিদ্রোহী অন্য গোষ্ঠীগুলোকেও সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণে উৎসাহিত করেছে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news