দশমিনায় দেড় শতাধিক খাল এখন প্রায় অস্থিত্বহীন


আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল,দশমিনা(পটুয়াখালী) :
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক খাল এখনঅস্থিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা বেশ কঠিনহয়ে পড়ছে। এক সময়ের খাল থাকলেও এখন সেই স্থানে
চাষাবাদযোগ্য জমিতে পরিনত হয়ে গেছে। উপজেলায় বর্ষা হলেজলাবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে পানি শুন্যতা দেখা দেয়। প্রতিকুলতার মধ্যেদশমিনা উপজেলার কৃষকরা জমি চাষাবাদ এবং ফসল উৎপাদন করেআসছেন। সি.এস ম্যাপে উপজেলায় দেড় শতাধিক খাল থাকলেওপর্চা ম্যাপে খালগুলো কৃষি খাসজমি দেখানো হয়েছে। ফলে পানিনিস্কাশনের মাধ্যম খালগুলো দিয়ে নদী কিংবা সাগরে থেকে পলিমাটিআসতে না পারায় ফসলি জমির উর্বরা শক্তি হারিয়েছে। এছাড়া ক্ষতিকরকীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া উৎপাদন হচ্ছে না ফসল।ভুক্তভোগী কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,এক সময় উপজেলারবুড়াগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদী থেকে প্রাকৃতিকভাবে উৎপত্তি হওয়াপ্রায় দেড় শতাধিক খাল দিয়ে ফসলি জমিতে পলিমাটি এসে পড়তো।গ্রাম থেকে গ্রাম ছিল নৌ-যোগাযোগ। দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহীবাউফল উপজেলার কালাইয়া বাজার ও গলাচিপার উলানিয়া বাজারে নৌকা ওট্রলারে মালামাল পরিবহন করা হতো। কিন্তু সেই খালগুলো মানচিত্রে থাকলেওবাস্তবে এর চিহ্ন নেই। চলে না নৌকা, পড়ে না ফসলি জমিতে পলিমাটি।ফলে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি উর্বরা শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ফসলউৎপাদন করতে প্রয়োগ করতে হয় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। যা মানবদেহের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, বিগতসময়ে ভূমি খাদকরা নামে বেনামে খাল বন্দোবস্ত নিয়েছে। কেউ ভরাটকরে কিংবা বাধঁ দিয়ে মাছ চাষ করছে। এছাড়া অপরিকল্পিত বাঁধ ওকালভার্ট নির্মাণ করায় খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বর্ষা হলে সৃষ্টিহয় জলাবদ্ধতা। আর শুকনো মৌসুমে দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট।জলাবদ্ধতা ও পানি সংকটে ফসল ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে ।সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত গালর্স স্কুলসংলগ্ন আবুতারা নামক খালের ওপর ২০১৬ সালে নির্মিত ব্রিজটিকালের ম্মৃতি হয়ে গেছে। খালে দুই পাশ কেটে মাটি ভরাট করেচাষযোগ্য জমি তৈরি করেছে। অথচ এই খালটি দিয়ে আগে নৌকাচলাচল করতো। প্রায় দুই হাজার একর জমির পানি উঠানামা করতো। নদীথেকে পলিমাটি পড়ে জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করতো। এখন কীটনাশক ওসার ছাড়া কোন ফসল উৎপাদন হয় না। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নেরচরহোসনাবাদ গ্রামের খালটি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এই খাল দিয়েপ্রায় ৫হাজার একর ফসলি জমির পানি উঠানামা করতো। স্থানীয়রা ঐবন্দোবস্ত বাতিলের জন্য একটি মামলা দায়ের করেছে। লক্ষীপুর গ্রামেরনিবারন কবিরাজের নামের বিশাল খালটি ১০-১৫ হাত পানি থাকা অবস্থায়বন্দোবস্ত দিয়েছে ভূমি অফিস। বন্দোবস্ত প্রাপ্তরা খালটি ভরাট করেবোরো ধান চাষাবাদ করছে। এই খাল দিয়ে প্রায় ৩ হাজার একর জমিরপানি উঠানামা করতো। উপজেলা সদরের দক্ষিন আরজবেগী আজগুরিয়াখালটি স্থানীয় প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বন্দোবস্ত নিয়েছে। ঐ খালে শুস্কমৌসুমে ১০/১২ হাত পানি থাকে। খালটি দখলকারীরা বাঁধ দিয়ে মাছেরঘের তৈরি করেছে। ফলে পানি উঠানামা করতে পারে না। জলাবদ্ধতায়যথাসময়ে প্রায় ১হাজার একর জমি চাষাবাদ হয় না। উপজেলার দশমিনাসদর ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষীপুর খাল, আবুতারা খাল, গাজীপুরা খাল,গয়নাঘাট খাল, পূর্ব লক্ষীপুর বাবুর খাল, আলীপুর ইউনিয়নের খলিশাখালীগ্রামের কেয়ার খাল, ইঞ্জি নারায়ন খাল, শিংবাড়িয়া খাল,গুলবুনিয়ারখাল,রণগোপালদী ইউনিয়নের কাটাখাল, আউলিয়াপুর গ্রামের নাপ্তার খাল,তালতলার হোতা খাল স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্দোবস্ত নিয়েছে। এসব খালপ্রভাবশালীরা দখল করে মাটি ভরাট ও বাঁধ দিয়েছে। ফলে প্রতি বছরজলাবদ্ধতা ও পানি শূণ্যতায় নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমিরফসল। বাঁধ ও অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণের ফলে বুড়াগৌরাঙ্গ ওতেঁতুলিয়া নদী থেকে পলি মাটি আসতে পারছে না। ফলে ফসলি জমিরউর্বর শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিস্কাশনের খালগুলোকালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।অপরদিকে, নদীর পানি উপজেলার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারায় অতিরিক্তপানির চাপে নদীর তীরে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। খালগুলো উদ্ধার করা হলেজলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news