বরগুনায় বিধবার বয়স্ক ভাতা নিচ্ছেন ইউপি সদস্যের স্ত্রী


বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় গত দুই বছর ধরে অসহায় বিধবা বৃদ্ধার বয়স্ক ভাতার টাকা পাচ্ছেন এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের স্ত্রী। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার ওই বৃদ্ধা মামলা করেছেন বরগুনা থানায়। পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও তার স্ত্রীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে আদালতে। বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনার সোনাতলা গ্রামের ৬৫ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম (৬২) এখন বিচারের জন্য ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়।অভিযোগ রয়েছে, ২০২১ সালে নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পনু মৃধাকে ১ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে মরিয়ম বেগম বয়স্ক ভাতার আবেদন করেন সমাজসেবা অফিসে। ভাতা উপযুক্ত হওয়ায় দুই বছর মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা চালু হয় মরিয়ম বেগমের। মরিয়ম বেগমের অভিযোগ, পনু মৃধা আবেদনপত্রে তার বিকাশ নম্বর না দিয়ে তার বাসার গৃহকর্মীর বিকাশ নম্বর দিয়েছেন। সিম গৃহকর্মীর নামে থাকলেও ব্যবহার করেন তার স্ত্রী তানজিলা এনি। প্রতি মাসের ভাতার টাকাও পাচ্ছেন এনি।এ বিষয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, আমরা অশিক্ষিত মানুষ। আবেদনের সময় আমার বিকাশ নম্বর না দিয়ে পনু মেম্বার তার বউয়ের বিকাশ নম্বর দিয়েছেন। দুই বছর ধরে আমার নামে ভাতা আসে, কিন্তু টাকা খায় পনু মেম্বারের বউ।
আমি এখন অসুস্থ ওষুধ কেনার টাকাও নাই। শেখ হাসিনার দেয়া এই টাকাটা যদি আমি পেতাম তাহলে ওষুধ কিনতে পারতাম। স্বামীহারা মরিয়ম বেগমের ৩ সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে কহিনুর ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গেছেন বসতঘর ও ফসলি জমি। ছেলে ইউনুস তাড়িয়ে দিয়েছেন মাকে। তাই মরিয়মের ঠাঁই এখন বড় মেয়ে মমতাজের ঘরে। অভাবের সংসারে দুইবেলা খাবার দিতে পারলেও ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই তাদের। মরিয়ম বেগমের বড় মেয়ে মমতাজ বেগম বলেন, আমার ছোট বোন বাবার মৃত্যুর আগে সব জমি টিপ সই দিয়ে ভুল বুঝিয়ে তার নিজের নামে করে নিয়েছেন। সেই ক্ষোভে ভাইও মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে নিজের বাড়ি থেকে। আমার মাকে আমি ফেলতে পারিনি। মাকে আমি খাবার দিতে পারি কিন্তু, আমাদের ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। মরিয়ম বেগমের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে আদালতে পনু মৃধা, তার স্ত্রী তানজিলা এনি ও গৃহকর্মী সোনা ভানুকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বয়স্ক ভাতার আবেদনের সময় বাদী মরিয়ম বেগমের দেয়া বিকাশ নম্বর না দিয়ে অভিযুক্ত পনু মেম্বারের বাড়ির গৃহকর্মী সোনা ভানুর নামের রেজিস্ট্রেশনকৃত বিকাশ নম্বর যুক্ত করে দিয়েছেন। এই সিম ব্যবহার করছেন পনু মেম্বারের স্ত্রী তানজিলা ইভা এনি নিজের ফোনে। তদন্ত করে প্রতারণার সত্যতা পেয়ে পুলিশ পনু মৃধা, তার স্ত্রী তানজিলা ইভা এনি এবং সোনা ভানুর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অসহায় মরিয়ম বেগমের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে মামলা পরিচালনা করছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইমুল ইসলাম রাব্বি। তিনি বলেন, আদালত পনু মৃধার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। এখন আমরা সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করবো। আমরা আশাবাদী ন্যায়বিচার পাবো।
অন্যদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে পনু মৃধা বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং মরিয়ম নামের কাউকে তিনি চেনেন না। বরগুনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে পৃথকভাবে তদন্ত করছেন তিনি।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়