ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

আগুনের ঝুঁকিতে ঢাকার ৫৫ ভাগ ভবন

818298 167
print news

ডয়চে ভেলে: ২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিস ঢাকার এক হাজার ১৬২টি ভবন পরিদর্শন করে। এরমধ্যে ৬৩৫টি ভবনকে আগুনের ঝুঁকিতে থাকা চিহ্নিত করে নোটিশ দেয়। তারমধ্যে আবার ১৩৬টি আবার অতি ঝুঁকিপূর্ণ। মোট ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ৬৩৪টি। শতকরা হিসাবে ৫৪ দশমকি ৬৭ ভাগ।

ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা আমাদের জনবল অনুযায়ী প্রতিবছরই ভবন পরিদর্শন করি। আর আমাদের অভিজ্ঞতা হলো ঢাকার ভবনগুলোর ৫৫ ভাগেরও বেশি আগুনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর তার মধ্যে সরকারি ভবনও আছে।’পরিদর্শন করা ওই এক হাজার ১৬২টি ভবনের মধ্যে সরকারি ভবন ৪৯৭টি আর বেসরকারি ৬৬৫টি। সেই হিসাব আলাদা থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে ঝঁকিপূর্ণ ভবন সরকারি ও বেসরকারি আলাদা করা হয়নি।ফায়ার সার্ভিস থেকে জানা যায়, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন ছাড়াও এই ঝঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় সরকারি ও বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যাংক ও মার্কেট সবই আছে।২০২২ সালে সারাদেশে মোট পাঁচ হাজার ৮৬৮টি ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। তার মধ্যে দুই হাজার ২২৩টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। সেই বিবেচনায় সারাদেশে ৩৮ ভাগ ভবন আগুনের ঝুঁকিতে আছে।২০২৩ সালেও দুই হাজারের মতো ভবন ঢাকায় পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস। সেখানেও অর্ধেকের বেশি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানান ফয়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করেনি।পরিদর্শনের সময় ভবনের মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা ইত্যাদি খতিয়ে দেখে ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস।২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস ঢাকায় একটি সার্ভে করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক। তাতে দেখা যায় ঢাকার তিন হাজার ৭৭২টি প্রতিষ্ঠান আগুনের ঝুঁকিতে আছে। তার মধ্যে এক হাজার ৩০০ শপিংমল, মার্কেট ও বিপনিবিতান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৬১টি, ব্যাংক ৬৪, হাসপাতাল ৪২২, আবাসিক হোটেল ৩১৮ এবং ২৪টি মিডিয়া ভবন আগুনের ঝুঁকিতে আছে।ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে ২০২৩ সালে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন ৭৭টি। এইসব আগুনের ঘটনায় সারা দেশে মোট ২৮১ জন আহত এবং ১০২ জন নিহত হয়েছেন। এইসব ঘটনায় ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকা মূল্যের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।ফায়ার সার্ভিস তার প্রতিবেদনগুলোতে ওই সব অনিয়ম এবং ঝুঁকির ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তার উল্লেখ করেনি। বাস্তবে তারা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয় না। যেমন বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজের’ ব্যাপারে তারা তিন বার নোটিশ দিলেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নোটিশের পর মামলা ও মেবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারি। তবে মামলা করে তেমন ফল হয় না। ২০১৪ সালের ফায়ার বিধিমালা স্থগিত থাকার ফলে মামলা কাজে আসে না। আর আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় মেবাইল কোর্ট পারিচালনাও কঠিন।আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিলগালা করতে পারি না। আইনে আমাদের সেই ক্ষমতা নাই। বার বার নোটিশ দেয়ার পরও যখন ভবন মালিক আমলে না নেয় তখন আমরা ভবনটি অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বলে নোটিশ টানিয়ে দিই। কিন্তু আমরা চলে আসার পর তা তারা ছিড়ে ফেলেন।’ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আলি আহমদ খান বলেন, ‘নোটিশ দেয়া প্রাথমিক পদক্ষেপ। শুধু নোটিশ দিয়ে তো হবে না। এরপর মামলা দায়ের ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। জরিমানা এবং অন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়।’

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, ‘ভবন মালিকদের নোটিশ দিলে তাদের কেউ কেউ ভবনের নিরাপত্তা বাড়ান। তবে অধিকাংশই এটা আমলে নেন না। কারণ তারা জানেন এরপর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তারা এটা নানাভাবে এড়াতে পারেন।স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ভবনের নানা ধরনের অনুমোদন এবং নিরাপত্তার বিষয় দেখার জন্য সরকারের ছয়টি মন্ত্রণালয় আছে। তারা কেউই দায়িত্ব পালন না করে চাঁদাবাজি করে। তারা বিভিন্ন ধরনের অনুমোদনের নামে ব্যবসা করে।তিনি বলেন, ‘ঢাকার ভবনগুলোর মধ্যে ৮৮ ভাগ ভবন অবৈধ। আর বাকি ১২ ভাগ কোনো না কোনোভাবে ব্যত্যয় করেছে। এটা ড্যাপের সমীক্ষা রিপোর্ট। রাজউক এলাকায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট আছে। তাহলে পরিস্থিতি বুঝুন।এই দুইজন মনে করেন, ‘ভবনের অনুমোদনসহ নানা বিষয় একটি ছাতার নিচে আনা দরকার। আর আইনেরও সমন্বয় দরকার। কারণ রাজউকের আইনে ১০ তলার পর বহুতল আর ফায়ার সার্ভিসের আইনে ছয় তলার পর বহুতল-এই দুই রকম তো হতে পারে না।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *