বাংলাদেশ ঢাকা

চিনির বাজার অস্থির : কৃত্রিম সঙ্কট

imageoo
print news

ঢাকা প্রতিনিধি : রমজান দরজায় কড়া নাড়ার সাথে সাথে অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের চিনির বাজার। সরকার চিনির আমদানি পর্যায়ে যে শুল্ক কমিয়েছে এর কোনো প্রভাব তো নেই বরং উল্টো দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। ভারত, পাকিস্তান এমনকি সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিকদের চেয়েও বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে এ দেশের ভোক্তাদের। এর ওপর নতুন করে এস আলম সুগার মিলের অগ্নিকাণ্ডকে পুঁজি করে চিনির কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি ১৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে তাৎক্ষণিক ডেলিভারি নেয়া চিনির দাম। যদিও ডিওর মাধ্যমে (ডেলিভারি অর্ডার কিনে পরে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে পণ্য ডেলিভারি নেয়া) কেনা চিনির দাম বেড়েছে সামান্য। ব্যবসায়ীরা বরাবরই চিনির উচ্চমূল্যের জন্য উচ্চ শুল্ক-কর আরোপকেই দূষছেন। অবশ্য ভোক্তারা সরকারের উচ্চ শুল্ক কর আরোপের সাথে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর অসাধুতাকেও দায়ি করছেন।

খাতুনগঞ্জের একাধিক বৃহৎ পাইকারি ব্যবসায়ী জানান,  প্রতিমণ রেডি চিনি (তাৎক্ষণিক ডেলিভারী নিলে) দেশীয় মিলের ৫১০০ টাকা এবং ভারতীয় চিনি ৫০৩০ টাকা করে বিক্রি হয়। এ ছাড়া যারা ডিও কিনেন তাদের প্রতি মণ ৪৯৪০-৪৯৮০ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। গত আগস্টে বেসরকারি চিনিকল মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু গত ২২ ফেব্রুয়ারি সরকারি চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণায় (যদিও পরে তা প্রত্যাহার করা হয়) অস্থির হয়ে উঠে চিনির বাজার। এর কয়েক দিন আগে সরকারের নামমাত্র শুল্ক কমানোর ঘোষণায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব না পড়লেও দাম বাড়ার কথা নয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও বর্তমানে চিনির দাম নিম্নমুখী বলে জানা গেছে। কিন্তু অজানা কারণে আমাদের দেশে উল্টো বেড়েই চলেছে চিনির দাম। খুচরা দোকানিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কষ্টিংসহ প্রতিকেজি চিনি গতকাল ১৩৯ টাকায় কিনতে হয়েছে। ফলে যাদের আগের কেনা রয়েছে তারা ১৩৮ টাকা করে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করলেও নতুন কেনা চিনি ১৪২-১৪৩ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। খাতুনগঞ্জে চিনি কিনতে আসা একাধিক বড় মুদি দোকানি এ প্রতিবেদককে বলেন, এক দিকে রেডি চিনিতে মণপ্রতি ১৭০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি বাজারে পর্যাপ্ত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এস আলম সুগার মিলের অগ্নিকাণ্ডকে ঘিরে এক ধরনের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন। যদিও গত ৪ মাসেই প্রায় ৯ লাখ টন চিনির আমদানির তথ্য মিলেছে।

আমদানি পর্যায়ে উচ্চ শুল্ক-কর : বাংলাদেশে মূলত অপরিশোধিত চিনি আমদানির পর প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা হয়। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয় ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টন। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বশেষ ৪ মাসে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানির তথ্য মিলেছে। ভোগ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় চিনি থেকে। তাই সরকারি রাজস্ব আহরণে যাতে বড় ধরনের প্রভাব না পড়ে সেজন্য শুল্ক কমানো হয়েছে নামমাত্র। বর্তমানে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে শুল্ক এক হাজার টাকা, যা আগে ছিল দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া টন প্রতি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৩০%, ভ্যাট ১৫% এবং অগ্রীম আয়কর (এআইটি)-২% প্রযোজ্য হয়। আর পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার টাকা, যা আগে ছিল তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি)-৩০%, ভ্যাট-১৫%, অগ্রীম আয়কর (এআইটি)-২% এবং অগ্রীম কর (এটি)-৫% প্রযোজ্য হয়। বর্তমানে প্রতি টন চিনি ৬০০-৬৪০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে বলেও সূত্র জানায়। এ দিকে খাতুনগঞ্জের এক বৃহৎ পাইকারি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, গত মাসে সরকারি চিনির দাম বাড়ানোর একটি ঘোষণায় (পরে তা প্রত্যাহার হলেও) মনস্তাত্বিক কারণেই বাজার অস্থির হয়ে উঠে। চিনির ডিও বেচাকেনায় ওই সময়ের পর নতুন করে তেমন একটা দাম বাড়েনি। তিনি বলেন, গতকাল প্রতি কেজি ১৩৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে পাইকারি চিনি বিক্রি হচ্ছে। রেডি চিনির ক্ষেত্রে কিছুটা দাম বেড়েছে বলেও ওই ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন। যদিও গত আগস্টে বেসরকারি চিনিকল মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোলা চিনি ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত হলে ১৩৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হওয়ার কথা।

প্রতিবেশীদেশসহ কয়েকটি দেশের চিনির বাজার : বিভিন্ন ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাষ্ট্রেও বাংলাদেশী টাকার অঙ্কে ১০২.৪৫ টাকা (১.২৫ সিঙ্গাপুরী ডলার) দরে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশী টাকার অঙ্কে ৫৩-৫৭ টাকায় (৪০-৪৩ রুপি) প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে। আর পাকিস্তানের সিন্দু প্রদেশে টাকার অঙ্কে ৫৭ টাকায় (১৪৫ পাকিস্তানি রুপি) এবং পাঞ্জাব প্রদেশে ৫৫ টাকায় (১৪০ পাকিস্তানি রুপি) প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি টাকার অঙ্কে ৮৭ টাকা (১০৫ নেপালিজ রুপি) দরে বিক্রি হচ্ছে। একেবারে ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কায়ও প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাংলাদেশী টাকার অঙ্কে ১২৫ টাকা (৩৫০ শ্রীলঙ্কান রুপি) দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *