বাংলাদেশ চট্টগ্রাম

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি : লিপস্টিক হাতে কাঁদছেন নানি

print news

কক্সবাজার প্রতিনিধি : ফাইরুজ কাশেম জামিলা, তিন বছর বয়সী ফুটফুটে শিশুটি গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি ভবনে লাগা আগুনে বাবা কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন ও মা মেহেরুন নেসা হেলালীর সঙ্গে দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ঘটনার পর কেটে গেছে আট দিন। তবে মেয়ে, তার জামাই ও একমাত্র নাতনির এমন অকালমৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারছেন না মেহেরুন নেসা হেলালীর মা জাহান আক্তার বুলবুল। নাতনি ফাইরুজকে উপহার দেওয়ার জন্য কেনা নেইল পলিশ ও লিপস্টিক হাতে নিয়ে এখনও কাঁদছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীকুল এলাকায় মেহেরুন নেসা হেলালীর বাসায় গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। বাসায় ঢুকেই শোনা যায় বৃদ্ধ জাহান আক্তার বুলবুল বিলাপ করেছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলেন, ‘আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ফাইরুজের সঙ্গে ফোনে অনেক কথা হয়েছে। ফাইরুজ বায়না ধরেছিল, এবার কক্সবাজার নানাবাড়িতে এলে তার জন্য নেইল পলিশ ও লিপস্টিক এনে রাখতে হবে। না হয় সে আমাদের সঙ্গে কথা বলবে না।জাহান আক্তার জানান, তাঁর এক ছেলে, তিন মেয়ের মধ্যে মেহেরুন নেসা ছিলেন দ্বিতীয়। একমাত্র ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভাইবোনদের অভিভাবক ছিলেন মেহেরুন। খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন তিনি। তাঁর ইচ্ছা ছিল ছোট বোন মুক্তারুন নিসাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাবেন। তার জন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিতে নিয়মিত গাইড করতেন। কিন্তু মুক্তারুন ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই মারা গেলেন মেহেরুন।এ সময় পাশে বসে মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল ছোট মেয়ে জান্নাতুন নেসা। সে রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জান্নাতুন নেসা বলে, ‘গত নভেম্বর মাসে আপু (মেহেরুন নেসা) স্বামী ও সন্তান নিয়ে বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন।ওই সময় আমাকে বলেছেন, ভালোভাবে পড়ালেখা করতে। কিন্তু তারা এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, ভাবতেও পারছি না।মেহেরুন নেসার বাবা মুক্তার আলম হেলালী বলেন, ‘ঘটনার আগের দিন আমি মেহেরুন নেসার বাসায় ছিলাম। ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালেই ঘুম থেকে উঠে মেয়ে আমাকে নাশতা দিয়ে জুতাগুলো মুছে দিতে দিতে বলল, আব্বু আমাকে ক্ষমা করে দিও। তখন আমি মুচকি হেসে বললাম, তুমি তো কোনো অপরাধ করোনি, কী ক্ষমা করব! এখন মনে হচ্ছে, মৃত্যুর বিষয়টি মেহেরুন বুঝতে পেরেছে।অন্যদিকে, উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সানসান নীরবতা। উঠানে একা বসে ছিলেন শাহ জালালের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল কাশেম। শাহ জালালের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আবুল কাশেম বলেন, পরিবার নিয়ে ছেলে যতবার বাড়িতে আসত, তখন অনেকটা উৎসব হয়ে যেত। নাতনি চকলেটের জন্য বায়না ধরত। গত মাসেও ছেলে পরিবার নিয়ে বাড়িতে এসেছে, কিন্তু তারা নিথর।স্থানীয় হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, বেইলি রোডের আগুন ট্র্যাজেডি দেশের মানুষকে শোকে স্তব্ধ করেছে। আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *