সাইবার ট্রাইব্যুনালে শিশুর বিচার,অধিকতর তদন্তের নির্দেশ বিচারকের


ইত্তেহাদ অনলাইন ডেস্ক : ১৮ বছর পূর্ণ হতে তখনো বাকি ১০ দিন। অপরাধ সংঘটনের সময় বয়স যাচাই না করেই প্রাপ্ত বয়স্ক আসামিদের সঙ্গে অভিযুক্ত করে দেওয়া হয় চার্জশিট। ওই চার্জশিটের ভিত্তিতেই শুরু হয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচার। বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে শিশুর বয়স প্রমাণের সব নথি বিচারকের নজরে আনায় দেওয়া হয়েছে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ।ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এএম জুলফিকার হায়াত এ সংক্রান্ত আদেশে বলেছেন, এই আসামিসহ অপরাপর আসামিরা অপরাধ সংঘটনের জন্য ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ ফেসবুক আইডি খোলেন। সেই হিসাবে জন্মসনদ, এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট অনুযায়ী মামলা করার দিন থেকে আসামির বয়স আরও কম মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাই শিশু আইন অনুসারে এই আসামির বয়স ১৮ বছরের কম ছিল। এ কারণে তার বিচার শিশু আদালতে হওয়া বাঞ্ছনীয়।মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও ফেসবুকে বিক্রির অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন রাজধানীর ডেমরা থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইনের ৫৭ ও ৬৬ ধারায় মামলা করা হয়। এজাহারে ওই শিশুর বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। সেখানেও তার বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়।
এই চার্জশিটের ভিত্তিতে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে চলতি বছর মামলাটি পরিচালনার জন্য নতুন আইনজীবী নিয়োগ দেন ওই আসামি।
তার আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার আসামির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পান যে অপরাধ সংঘটনের সময় আসামি একজন শিশু ছিল। এরপরই ওই আসামির বিচার শিশু আদালতে করার আবেদন জানান।আবেদনে বলা হয়, জন্ম নিবন্ধন সনদ, এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অনুযায়ী ওই শিশুর জন্ম ১৯৯৭ সালের ২৬ জুলাই। সে অনুযায়ী গ্রেপ্তারের সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ১১ মাস ২০ দিন। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়ষ্ক আসামি হতে আরও কিছুিদন বাকি ছিল।গত ২৫ জানুয়ারি বয়স প্রমাণের সব কাগজপত্রসহ ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে আবেদনে বলা হয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইনের ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তির বয়স, জন্ম ও মৃত্যু বৃত্তান্ত প্রমাণের ক্ষেত্রে কোন অফিস বা আদালতে বা স্কুল-কলেজে বা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই আইনের অধীন প্রদত্ত জন্ম বা মৃত্যু সনদ সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।যেহেতু শিশু আইনের ২০ ধারানুযায়ী অপরাধ সংঘটনের সময় দরখাস্তকারী আসামি আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুর বয়স ১৭ বছর ১১ মাস ১৯ দিন, সেহেতু ওই আইনের ১৭ (১) ধারা অনুযায়ী শিশুর বিচার শিশু আদালতেই হতে হবে।সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ওই শিশুর সব কাগজপত্র ও আইনজীবীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে ওই আসামিকে ‘শিশু আসামি’ হিসেবে অভিযুক্ত করে দোষীপত্র এবং প্রাপ্ত বয়স্ক আসামিদের জন্য আলাদা চার্জশিট দাখিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার নথি চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠান।
এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন, শিশু আইনানুযায়ী শিশুর অপরাধের বিচার হবে শিশু আদালতে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি আমলে না নিয়ে শিশুকে প্রাপ্ত বয়স্ক আসামি দেখিয়ে চার্জশিট দেয়। এর ফলে তার বিচার চলছিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে। শিশু আইনানুযায়ী, এটা করার কোনো সুযোগ নাই। শিশু আইনেই বলে দেওয়া হয়েছে শিশুর যে কোনো অপরাধের বিচার হবে শিশু আইনে। প্রাপ্ত বয়স্ক আসামির সঙ্গে অভিযুক্ত করে একসঙ্গে শিশুর বিচার করা যাবে না। খবর ইত্তেফাক’’র।