বাংলাদেশে ডেনমার্কের নারী আশা ওয়েলিস ছুটে বেড়াছেন বাবা-মায়ের খোঁজে


খুলনা প্রতিনিধি : মা-বাবার খোঁজে আবারো বাংলাদেশে এসেছেন ডেনমার্কের নারী আশা ওয়েলিস। গত তিন দিন ধরে বাবা-মায়ের খোঁজে ছুটে বেড়াছেন খুলনা মহানগরীর অলিগলি থেকে মন্দির-গীর্জা সবখানে। ছুটে গেছেন খুলনা পুরাতন রেল স্টেশনেও, যেখান থেকে ১৯৭৫ সালে ডলি মণ্ডল নামে এক নারী তাকে ঢাকায় নিয়ে ২৬ ইসলামপুর রোডের মিশনারিস অব চ্যারিটিতে দেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। সেখান থেকে ডেনমার্কের একটি পরিবার তাকে দত্তক নিয়ে দেশে চলে যান। ডেনমার্কে গিয়ে তার নাম হয় আশা ওয়েলিস।আগেও আশা ওয়েলিস বাংলাদেশে এসেছিলেন জন্মদাতা বাবা ও জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সে সময় তিনি তাদের দেখা পাননি। মা-বাবাকে না পেয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি আবার ফিরে গিয়েছিলেন ডেনমার্কে। কিন্তু মা-বাবার কথা তিনি কখনোই ভুলতে পারেননি। তাই আবারও তিনি নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশে এসেছেন মা-বাবার খোঁজে।১৯৭৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আশা। এরপর মাত্র দেড় বছর বয়সে দত্তক বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি দেন ডেনমার্কে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৫০ বছর। বর্তমানে ডেনমার্কেই স্বামী এবং দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশা ওয়েলিসের সুখের সংসার। তারপরও আশা জন্মভূমি ও তার ছেড়ে যাওয়া অজানা বাবা-মায়ের কথা ভুলতে পারেননি। তাদের সন্ধানে সম্প্রতি বাংলাদেশে আসেন তিনি।
বর্তমানে আশা তার ‘আসল’ মা-বাবার সন্ধানে খুলনার পথে পথে ঘুরছেন। গত ৩ দিনে খোঁজ নিয়েছেন কয়েকটি মন্দির, গির্জা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন স্থানে। তবু হারানো সেই মা-বাবার পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য পাননি।খুলনা নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাসুদ গোলদার বলেন, আশা ওয়ালেস ও তার স্বামী মগেনস ফল্ক আমার কাছে আশার মা-বাবাকে খুঁজে দেওয়ার জন্য সহযোগিতা চান। আমি গত কয়েকদিন ধরে তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার মা-বাবার খোঁজে গিয়েছি। কিন্তু এখনো তাদের খোঁজ পাইনি।দোভাষী মোস্তফা চৌধুরীর মাধ্যমে আশা ওয়েলিস বলেন, জানি না কে আমার মা-বাবা। কারা আমার আত্মীয়-স্বজন। গত ৯ মার্চ আমি আমার স্বামী মগেনস ফল্ককে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। প্রথমে ঢাকায় মিশনারিস অব চ্যারিটিতে গিয়েছি। সেখানে কর্মরতরা পুরানো কাগজপত্র দেখে জানান, ডলি মণ্ডল নামে এক নারী আমাকে খুলনা রেল স্টেশন বা আশপাশ এলাকা থেকে সোনাডাঙ্গা এলাকার নির্মল হৃদয় শিশু সদনে রেখে এসেছিল। সদন থেকে আমাকে পরে ঢাকার মিশনারিস অব চ্যারিটিতে পাঠানো হয়। আমি গত বৃহস্পতিবার খুলনায় নির্মল হৃদয় শিশু সদনে গিয়ে ডলি মণ্ডলের ব্যাপারে খোঁজ নেই। তারা সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে খোঁজার পরামর্শ দেয়। এরপর বাগমারা গোবিন্দ মন্দির ও শীতলাবাড়ি মন্দিরে গিয়ে খবর নিয়েছি। কেউ তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি। শনিবার আশা স্বামীকে নিয়ে ডলি মণ্ডলের খোঁজে গিয়েছিলেন খুলনা নগরীর গণনবাবু রোডের যোসেফপাড়ায়। সেখান থেকেও ডলি মন্ডলের ব্যাপারে কোনো তথ্য মেলেনি। এক নারী বাবু খান রোডে সেন্ট যোসেফস ক্যাথিড্রালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাদের। ক্যাথিড্রালে গেলে ফাদার ও সিস্টাররা তাদের খালিশপুর নেভি গেটে খ্রিস্টান কলোনিতে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে গিয়েও ডলি মণ্ডলের খোঁজ না পাওয়ায় তারা যান সিমেট্রি রোডের খ্রিস্টান কবরস্থানে। সেখানকার কেয়ারটেকার পিটার তাদের ডলি মণ্ডল নামে এক নারীর কবর দেখান। কিন্তু ডলি মণ্ডলের বিস্তারিত পরিচয়ও কেউ বলতে পারেনি।দোভাষী মোস্তফা চৌধুরী জানান, পিটার নথিপত্র দেখে এবং খোঁজখবর নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে ডলি মণ্ডলের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন। হয়তো এবার তার বা-মার খোঁজ মিলতেও পারে।
তিনি বলেন, আমরা যেসব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, সেখানকার লোকজনের কাছে মোবাইল নম্বর দিয়ে এসেছি। যদি তারা কোনো তথ্য পায় তাহলে আমাদেরকে জানাবে। শনিবার সকালে আশা ও তার স্বামীকে নিয়ে আমরা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ও দর্গায় গিয়েছিলাম। রবিবার আমরা মোংলা হয়ে সুন্দরবন যাচ্ছি। ওখান থেকে এসে আবারো আশা তার মা-বাবার সন্ধান নেবেন। মোস্তফা চৌধুরী বলেন, মা-বাবার সন্ধানে খুলনার মানুষের সহযোগিতাও কামনা করেন আশা। আশা ও তার স্বামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবেন।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়